পোল্ট্রিতে এন্টিবায়োটিকের বিকল্প কারো জিরা

গৃহপালিত পশুপাখিকে রোগমুক্ত রেখে কম সময়ে অধিক উত্পাদনে এন্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহার কয়েক যুগ ধরে পোল্ট্রি শিল্পে হয়ে আসছে। ক্ষতিকারক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগে সার্বিকভাবে জনস্বাস্থ্য আজ হুমকির সম্মুখীন। শুধু তাই নয়, এন্টিবায়োটিক প্রয়োগে রোগে আক্রান্ত পশুপাখির মৃতদেহ খেয়ে বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এর ক্ষতিকর প্রভাবে ইউরোপের চিংড়ি রফতানি বিলুপ্তির মুখোমুখি হয়েছিল। এছাড়া এন্টিবায়োটিক প্রয়োগে মুরগির ডিম, মাংস এবং গবাদিপশুর দুধ বা এন্টিবায়োটিক দ্বারা সংরক্ষিত খাদ্য খেয়ে মানবদেহে স্লোপয়জনিং হচ্ছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারানোসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যার কারণে আমাদের জনস্বাস্থ্য রয়েছে হুমকিতে। পোল্ট্রি শিল্পকে এন্টিবায়োটিকের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে এন্টিবায়োটিকের বদলে প্রাকৃতিক উপাদানের উপর নির্ভরশীল হওয়ার গবেষণা চলছে বিশ্বব্যাপী।

প্রাকৃতিক উদ্ভিদ উপাদানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কালোজিরা। বিশ্বব্যাপী কালোজিরা নিয়ে অসংখ্য গবেষণা হলেও বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পে এন্টিবায়োটিকের বদলে কালোজিরা প্রয়োগে সাফল্য প্রথম বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও তথ্য- প্রযুক্তি মণ্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১১ সালে এন্টিবায়োটিকের বদলে কালোজিরা প্রয়োগের ২টি গবেষণা ১টি লেয়ার মুরগি ও অন্যটি ব্রয়লার মুরগির উপর সম্পন্ন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম। গবেষণা সহকারী হিসেবে ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আফজাল হোসেন, বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের প্রভাষক মো. আবু সাঈদ এবং মাস্টার্স পর্বের ছাত্র মো. নূরে আলম সিদ্দিকী। প্রথম গবেষণার উপাত্ত থেকে দেখা যায়, এন্টিবায়োটিকের বদলে কালোজিরা প্রয়োগে মুরগির ডিমে প্রায় ৪৩ ভাগ কোলেস্টেরল কমিয়ে আনা সম্ভব। এই কম কোলেস্টেরল সম্পন্ন মুরগির ডিম হূদরোগে আক্রান্ত রোগী ও সুস্থ-সবল মানুষের জন্য নিরাপদ বলে দাবি করছেন গবেষকরা। এ ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটানো না গেলেও পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া সম্ভব হবে। উল্লেখ্য যে, মানবদেহ একদিনে প্রায় ২১৪ থেকে ২২০ মাইক্রো গ্রাম কোলেস্টেরল ধারণ করতে পারে। কিন্তু এন্টিবায়োটিক প্রয়োগকৃত ডিমে প্রায় ৩০০ মাইক্রো গ্রাম কোলেস্টেরল পাওয়া যায় যা হূদরোগের সত্যিই খুব খারাপ সংবাদ। একই সময়ে কালোজিরা মিশ্রিত খাবারে মুরগির বৃদ্ধির হার, ডিমের গুণগত মানও এন্টিবায়োটিক প্রয়োগকৃত খাবারের চেয়ে অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, উক্ত গবেষণায় দেখা যায়, কালোজিরা মিশ্রিত পোল্ট্রি খাবারে ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবিস্তার ঘটায় যা মুরগির পাকস্থলীর খাবার হজম হতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ই-কোলাই নামক এক ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যায়। ২০১১ সালে উক্ত গবেষণার একটি নাতিদীর্ঘ আন্তর্জাতিক মানের জার্নাল “জার্নাল আব এনিমেল এন্ড ফিড সায়েন্স” গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় গবেষণার উপাত্ত থেকে দেখা যায় যে, কালোজিরা মিশ্রিত পোল্ট্রি খাবারে ব্রয়লার মুরগির দেহেরে ওজন, বৃদ্ধির হার সবকিছুই ত্বরান্বিত হয় যা বাজারের মুরগির চেয়ে অনেক পরিমাণ বেশি। ব্রয়লার মুরগির ব্লাড সিরামের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড আকস্মিকভাবে হ্রাস পায় এবং এইচডিএল নামক এক ধরনের উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই কালোজিরা প্রয়োগ সম্পন্ন ব্রয়লার মুরগির মাংস অনেকটাই নিরাপদ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। একইভাবে পাশাপাশি ই-কোলাই নামক এক ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ দ্রুত কমে যায়। ড. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগিতে কালোজিরা এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে প্রয়োগে সফলতা পেয়েছি। পরবর্তীতে ডায়াবেটিকসহ অন্য মানবরোগেও এটির প্রয়োগে সফলতা আসতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment