পুকুরে হাঁস ও মাছের সমন্বিত চাষ

দেশে জলাশয়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছে বলে মাছ চাষ ও হাঁস পালন ব্যাহত হচ্ছে। অথচ একই জলাশয়ে একসাথে হাঁস ও মাছ উত্পাদন করে লাভবান হওয়া যায়। এতে মাছের খাবার ও সারের খরচ লাগে না। হাঁসের বিষ্ঠা, পরিত্যক্ত বর্জ্য ও উচ্ছিষ্ট খাদ্য মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহূত হয়। অপরদিকে হাঁস পুকুরের শামুক, ঝিনুক, জলজ কীটপতঙ্গ, কুচিপানা খেয়ে খাবার চাহিদা মেটায় এবং পুকুরের পরিবেশ ভাল রাখে। হাঁস পুকুরের তলার মাটি নাড়াচাড়া করে মাটির সারবস্তু পানিতে মিশিয়ে দেয়। এতে বিষাক্ত গ্যাস বের হয়ে যায়। পুকুর, হাওর, বাঁওড় বা বদ্ধ জলাশয়ের ওপর ঘর তৈরি করা যায়, হাঁসের জন্য আলাদা জায়গা লাগে না। হাঁস মাছের ক্ষতিকর উদ্ভিদ ও প্রাণী ধ্বংস করে। সর্বোপরি মাছ ও হাঁস উত্পাদনের খরচ কম হয়। হাঁসের ডিম সংগ্রহ করতে সুবিধা হয়। হাঁস পানি নাড়াচাড়া করে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায়। হাঁস পুকুরের পানিতে জন্মানো ক্ষতিকর উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।


পুকুর তৈরি: পুকুর থেকে ক্ষতিকর মাছ, প্রাণী ও উদ্ভিদ পরিস্কার করতে হবে। প্রতি শতকে এককেজি হারে চুন প্রয়োগ করে পুকুরে পানি সরবরাহ করতে হবে। চুন দেয়ার সাতদিন পর মাছের প্রাকৃতিক খাবার পরীক্ষা করে পুকুরে মাছ ছাড়তে হবে। সার দেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ হাঁসের বিষ্ঠা সারের কাজ করবে।


পোনা মজুদ: প্রতি শতকে কাতলা ৫টি, সিলভারকার্প ৯টি, রুই ৮টি, মৃগেল ২টি, সরপুঁটি ৮টি, কমনকার্প ৩টি ও মিররকার্প ৪টি ছাড়তে হবে। ১০ থেকে ১২ মাস পর মাছ বিক্রির উপযোগী হবে।


হাঁসের ঘর: হাঁসের ঘর পুকুরের উপর তো অবশ্যই রাখতে হবে, বরং দুইটি ভাসমান ড্রমের উপর ঘরটি স্থাপন করলে আরও ভাল হবে। এতে হাঁসের মল দিন রাত পুকুরে পড়বে যা মাছের খাবার হবে। ঘরটি সারা পুকুরের যে কোন জায়গায় ভেসে থাকতে পারবে। পাড় থেকে বেঁধে রাখা দড়ি দিয়ে ঘরটি কাছে বা দূরে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি হাঁসের জন্য ঘরে ২ বর্গফুট জায়গা দিতে হবে। ঘরের দরজা এত বড় হতে হবে যাতে হাঁস মাথা উঁচু রেখে ঘরে ঢুঁকতে পারে। ঘরের দেয়ালে বা ছাদে কোন ফাঁক থাকবে না যা দিয়ে আলো ঢুঁকতে পারে। নিচের মেঝে বাঁশের চটা পাশাপাশি আঁটকে তৈরি করতে হবে যাতে এর সামান্য ফাঁক দিয়ে তরল মল পানিতে পড়তে পারে। মেঝেতে ৬ ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে দিতে হবে যাতে হাঁস রাতে ডিম পাড়তে পারে। সন্ধ্যার পর ঘরের দরজা ভালভাবে আটঁকে ঘর পুকুরের মাঝে ঠেলে দিতে হবে যাতে শৃগাল বা অন্যান্য প্রাণী এসে হাঁস ধরে না খেতে পারে। অথবা খুটি দিয়ে পুকুরের পাড় এবং পানিতে হাঁসের ঘর তৈরি করতে হবে। ঘর থেকে পুকুরে নামার সিঁড়ি করে দিতে হবে। 


হাঁসের জাত ও সংখ্যা: ইন্ডিয়ান রানার বছরে ২০০-২৫০টি, জিনডিং ও খাকি ক্যাম্বেল ২৩০-২৫০টি ডিম দেয়। এ জাতগুলো পালন উপযোগী। এ হাঁসগুলো পাঁচমাস বয়স থেকে দুই বছর পর্যন্ত ডিম দেয়। পুকুরে প্রতি শতাংশে দু'টি করে হাঁস পালন করা যায়। প্রতি পুকুরে দুই থেকে তিনটি পুরুষ হাঁস রাখতে হবে। ৪০-৫০ শতাংশের জন্য মোট ১০০টি হাঁস পালন করা যায়।


হাঁসের খাবার: খাদ্যে আমিষের পরিমাণ ডিম দেওয়া হাঁসের ক্ষেত্রে ১৭-১৮ শতাংশ ও বাচ্চা হাঁসের ক্ষেত্রে ২১ শতাংশ রাখা উচিত। হাঁসের সুষম খাবার বাচ্চা ও পরিণত বয়সের জন্য যথাক্রমে আধাভাঙা গম ৪৫%-৪৬%, চালের কুঁড়া ২৭% -৩০%, তিলের খৈল ১৪%-১২%, মাছের গুঁড়ো ১২%-১০%, ঝিনুক চূর্ণ ১.৫%-২.৫%, লবণ উভয়ের জন্য ৫% এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ ১.৫ গ্রাম/কেজি ও ২ গ্রাম/কেজি। এ ছাড়াও হাঁস প্রাকৃতিক খাবার যেমন- পুকুরের আগাছা, খুদেপানা, কুটিপানা, পোকামাকড়, কচিঘাস, পাতা, ঝিনুক, শামুক ইত্যাদি খেয়ে প্রায় অর্ধেক চাহিদা মেটায়। হাঁসের খাবার ও পানি আলাদা পাত্রে দিতে হবে। সাধারণত এক দুই মাস বয়স পর্যন্ত হাঁসকে দিনে চার-পাঁচবার আট সপ্তাহ বয়স থেকে দুই তিন বার এবং বাড়ন্ত হাঁসকে দু্ইবার খাওয়াতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক একটি হাঁসকে প্রতিদিন ১১০ গ্রাম খাবার দিতে হবে। সকাল ৯টার দিকে হাঁসকে প্রথমবার খাওয়াতে হবে। এরপর পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে। সূর্যাস্তের আগে আবার খাওয়াইয়ে ঘরে তুলতে হবে। রাতের জন্য পানি ও খাবার দিয়ে রাখতে হবে যাতে হাঁস ইচ্ছামত খেতে পারে।

হাঁসের বাচ্চা প্রাপ্তির স্থান: নারায়ণগঞ্জ, দৌলতপুর (খুলনা), রংপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, দিনাজপুর, পাবনা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, রাঙ্গামাটি, কুষ্টিয়া, কিশোরগঞ্জ।

হাঁসের রোগ প্রতিরোধ: হাঁসের রোগবালাই কম হয়। ডাকপ্লেগ হলে বাঁচানো যায় না। এ জন্য রোগ প্রতিরোধ করাই ভাল। হাঁসের ঘর, খাবার পাত্র ও পানিপাত্র পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। রোগাক্রান্ত হাঁস দল থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে এবং মারা গেলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

3 comments:

  1. তেলাপিয়া ও হাসের মিশ্র চাষে হাস তেলাপিয়ার কোন ক্ষতি করে না।

    ReplyDelete
  2. ১০ শতক জায়গায় ৩০ টি হাস ও উপরে মুরগীর খামার এবং সাথে মাছের মিশ্র চাষে কোন সমস্যা হবে কি?

    ReplyDelete
  3. হাসের খামারে তেলাপিয়া মাছ চাষ করা যাবোকিনা

    ReplyDelete