গ্যানোডার্মা মাশরুমের চাষ ব্যবস্থাপনা

গ্যানোডার্মা মাশরুম বিশ্বে অমরত্বের মাশরুম নামে পরিচিত। বিশেষ করে চীন, জাপান কোরিয়া ও মালয়েশিয়াতে হার্বাল মেডিসিন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। ক্যান্সার, এইডস, হূদরোগের মত বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের নিয়ন্ত্রণে গ্যানোডার্মা মাশরুমের কদর রয়েছে। জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ কেন্দ্র কর্তৃক উত্পাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হওয়ায় ৭টি আবাদযোগ্য জাত রয়েছে যা বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে। 
গ্যানোডার্মার বীজ উত্পাদন: মাশরুমের অঙ্গজ বীজ অর্থাত্ স্পন তৈরির জন্য প্রধান উপাদান হিসেবে কাঠের গুঁড়ো, আখের ছোবরা, ভুট্টার খড় ব্যবহার করা যায়, এর সাথে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গমের ভূষি, চালের কুঁড়া, ভুট্টার গুঁড়ো প্রভৃতি ব্যবহার করা যায়। 
জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ কেন্দ্র কাঠের গুঁড়ো, গমের ভূষি ও চালের কুঁড়া দিয়ে অত্যন্ত সহজে স্পন তৈরি করছে যাতে ভাল ফলন পাওয়া যায়। 
সাবস্ট্রেট ফরমুলেশন ও স্পন তৈরি: ফরমুলেশন-১: কাঠের গুঁড়ো- ৭০%, গমের ভূষি-২৫%, ধানের তুষ-০৫%, ক্যালসিয়াম কার্বনেট-০.২%, পানি- ৫০ থেকে ৬০%। 
ফরমুলেশন-২: কাঠের গুঁড়ো- ৭০%, চালের কুঁড়া ২২.৫%, ধানের তুষ-২.৫%, ক্যালসিয়াম কার্বনেট-০.২%, পানি- ৫০ থেকে ৬০%। 
উল্লেখিত উপাদানগুলো ভালভাবে মিশিয়ে পিপি ব্যাগে ১ কেজি অথবা আধা কেজি 
করে ভরে প্লাস্টিক নেক দিয়ে বেঁধে কাঠের কীলক দ্বারা প্যাকেটের মুখে গর্ত করে দিতে হবে। এরপর কটনপ্লাগ দিয়ে মুখ বন্ধ করে ব্রাউন পেপার এবং রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। এরপর অটোক্লেভ মেশিনে ১২০০ সে. তাপমাত্রায় ১.৫ কেজি/ঘন ইঞ্চি বাষ্প চাপে ২ ঘণ্টা রেখে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্যাকেট ঠাণ্ডা হলে ল্যাবরেটরিতে ক্লিনবেঞ্চে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় মাদার কালচার দিয়ে উক্ত প্যাকেটে ইনোকুলেশন করতে হবে। ইনোকুলেশনকৃত প্যাকেটগুলোকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অন্ধকার ঘরে ২৮ থেকে ৩৫০ সে. তাপমাত্রায় মাইসেলিয়াল কলোনাইজেশনের জন্য রেখে দিতে হবে। এভাবে ২০ 
থেকে ২৫ দিন রাখার পর মাইসেলিয়াম দ্বারা প্যাকেট পূর্ণ হবে যা পরবর্তীতে চাষ ঘরে ব্যবহূত হবে। 
প্যাকেট কাটা: গ্যানোডার্মা মাশরুমের স্পন প্যাকেট বিভিন্নভাবে কাটা যায়। চাষ ঘরে প্যাকেট বসানোর আগে মাইসেলিয়াম পূর্ণ স্পন প্যাকেট হতে নেক, তুলা, ব্রাউন পেপার ইত্যাদি খুলে প্যাকেটের মুখ রাবার ব্যান্ড দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। কোণাযুক্ত প্যাকেটের একপাশে মাঝ বরাবর এক বর্গ সে.মি. আকারে পিপি কেটে ব্লেড দিয়ে সাদা অংশ চেঁছে ফেলতে হবে। এরপর চাষ ঘরের তাকে সারি সারি করে বসিয়ে দিতে হবে। স্পন প্যাকেট হতে নেক, তুলা, ব্রাউন পেপার ইত্যাদি খুলে প্যাকেটের মুখ খোলা রেখে দিয়েও মাশরুম চাষ করা যায়। চাষ ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের কৌশল থাকলে স্পন প্যাকেটের উপরের পুরো মুখ খুলে দিয়ে ও মাশরুম চাষ করা যেতে পারে। 
পরিচর্যা: প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য দিনে ৩ থেকে ৪ বার মৃদু পানি সেপ্র করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোনো অবস্থায় আর্দ্রতার পরিমাণ কমে না যায়। এভাবে পরিচর্যা করলে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই সাদা শক্ত মাসরুমের কুড়ি , ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আঙুলেরমত লম্বা হয়ে লালচে বর্ণের এবং ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে অগ্রভাগ হাতের তালুরমত চ্যাপ্টাকৃতি ধারণ করবে। এই অবস্থায় চাষ ঘরের আলো ও বায়ু চলাচল বাড়িয়ে দিতে হবে। 
মাশরুম সংগ্রহ: ঘরে বসানোর দের মাসের মধ্যেই মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। পরিপক্ক ফ্রুটিং বডি সংগ্রহের উপযোগী লক্ষণ হল মাসরুমের কিনারার বৃদ্ধি থেমে গিয়ে চকচকে লাল বর্ণ ধারণ করে এবং অসংখ্য লালচে স্পোর নিচে পরতে দেখা যায়। পরিপক্ক ফ্রুটিং বডি তুলে নেওয়ার পরে প্যাকেটের কাটা স্থানে একটু চেঁছে দিলে খুব দ্রুত দ্বিতীয় বার ফলন পাওয়া যায়। এভাবে নিয়মিত পরিচর্যা করলে প্রতি প্যাকেট হতে ৩ থেকে ৪ বার ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতি কেজি স্পন থেকে ৭০ থেকে ৯০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়। 
সংরক্ষণ: গ্যানোডার্মা মাশরুম সংগ্রহ করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে রোদে শুকাতে হবে। এরপর পিপি ব্যাগে বা বোতলে ভরে বায়ুরোধী অবস্থায় ২ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়া স্লাইস বা পাউডার করেও অনেক দিন রাখা যায়। ৩.০-৩.৫ কেজি তাজা মাশরুম শুকালে ১ কেজি শুকনো ঋষি মাশরুম পাওয়া যায়। 
ব্যবহার: মাশরুম পাউডার করে বা স্লাাইস করে কেটে পানিতে মৃদু তাপে জ্বাল দিয়ে মাশরুমের নির্জাস বের করে লেবুর রসসহ গরম-গরম অথবা ঠাণ্ডা করে খাওয়া যায়
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

2 comments:

  1. ((( কাঠের কীলক দ্বারা প্যাকেটের মুখে গর্ত করে দিতে হবে। এরপর কটনপ্লাগ দিয়ে মুখ বন্ধ করে >>>ব্রাউন পেপার<<< এবং রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।)))
    What is brown paper, hope your kind reply. Thank you.

    ReplyDelete
    Replies
    1. barown paper হলো ক্ষয়েরী রঙয়ের একধরনের কাগজ। এইটা মাশরুম প্যাকেটের মুখে লাগাতে হয়।

      Delete