গোবর থেকে সিএনজি



খোকনের বিস্ময়কর বায়োগ্যাস  শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট : গবাদি পশুর গোবর ও মূত্র প্রক্রিয়াজাত করে এতদিন শুধু বায়োগ্যাসই উৎপাদিত হতো। এখন উৎপাদিত হচ্ছে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি)।  আর এটা হয়েছে সিলেট শহরতলির বালুচরে। এ কাজটি করছেন খোকন দাস নামের এক যুবক। স্থানীয় টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মছবি্বরের মালিকানাধীন একটি বায়োগ্যাস প্লান্টকে তিনি সিএনজি পাম্পে পরিণত করেছেন। খোকন দাসের এই বিরল উদ্ভাবনের কথা লোকমুখে প্রচার হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন দেখতে আসছেন প্লান্টটি। অনেকে নিজেদের এলাকায় বায়োগ্যাস থেকে সিএনজি প্লান্ট করতে খোকন দাসের প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সহযোগিতা চাচ্ছেন। সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এ প্রযুক্তির প্রসার ঘটানো সম্ভব হলে দেশের সিএনজি গ্যাসের চাহিদা অনেকটা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন খোকন দাস।  বর্তমানে বালুচরের যে প্লান্টে তিনি কাজ করছেন ওই প্লান্টের মালিক আবদুল মছবি্বরের খামারে ১৩২টি গরু রয়েছে। ওই গরু থেকে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ২৬০০ কেজি গোবর ও মূত্র পাওয়া যায়। এই গোবর ও মূত্র দিয়ে তিনি প্রথমে বায়োগ্যাস উৎপন্ন করে কমপ্রেসারের মাধ্যমে বড় ট্যাংকের মধ্যে রিজার্ভ করেন। পরবর্তীতে রিজার্ভ ট্যাংক হতে কয়েক রকমের ফিল্টার ও কমপ্রেসারের মাধ্যমে কার্বন ডাই-অঙ্াইড অপসারণ করে বায়োগ্যাসকে সিএনজিতে রূপান্তর করেন। খোকন দাস জানান, খামারের পাওয়া ওই গোবর ও মূত্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৩৬ কিউবেক মিটার সিএনজি উৎপাদিত হয়। এ গ্যাস দিয়ে আট ঘণ্টা প্লান্ট চালু রেখে প্রায় ৭০টি সিএনজি অটোরিকশায় গ্যাস সরবরাহ করা যায়। আরও এক হাজার কেজি গোবরের ব্যবস্থা করা গেলে প্লান্টটি ১২ ঘণ্টা চালু রাখার পাশাপাশি ৫০০ কিউবেক মিটার সিএনজি উৎপাদন সম্ভব হতো। সিএনজি প্লান্টের মালিক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মছবি্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, প্লান্টের প্রযুক্তিগত কিছু কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শেষ করে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হবে। এ ব্যাপারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু ইউসূফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বায়োগ্যাসের মধ্যে ৪০ ভাগ কার্বন ডাই-অঙ্াইড ও ৬০ ভাগ মিথেন থাকে। মিথেনই হচ্ছে সিএনজির মূল উপাদান। হাই কমপ্রেসারের মাধ্যমে বায়োগ্যাস থেকে কার্বন ডাই-অঙ্াইড অপসারণ করা গেলে সিএনজি উৎপাদন সম্ভব। তিনি আরও বলেন, বায়োগ্যাস থেকে সিএনজি উৎপাদন করা হলে ভূগর্ভস্থ গ্যাসের উপর চাপ কমবে। সম্ভাবনাময় এই খাতের বিকাশে সবার আগে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।  উদ্ভাবনের গোড়ার কথা : খোকন দাসের জন্ম চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার পদুয়া গ্রামে। জীবিকার তাগিদে ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম ছেড়ে বান্দরবন চলে যান। সেখানে এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে নিজের তৈরি ডায়াবেটিস রোগের আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রি করতেন। ওষুধ বিক্রির টাকা দিয়ে দুইবন্ধু মিলে সেখানে প্রথমে একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেন। তাদের প্লান্টের বিদ্যুতে আলোকিত হয় বান্দরবান সদর উপজেলার সোয়ালগ বাজার। হঠাৎ একদিন খোকনের মাথায় বায়োগ্যাসের বদলে সিএনজি উৎপাদনের চিন্তা আসে। যেই ভাবা সেই কাজ। শুরু করেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সাহস করে একদিন বায়োগ্যাস থেকে উৎপাদিত সিএনজি একটি অটোরিকশায় ভরাণ। ওই গ্যাস নিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে কিছু সমস্যা হয়। পরে ফিল্টারের পরিমাণ বাড়িয়ে বায়োগ্যাসকে আরও পরিশোধন করে গাড়ির জ্বালানির উপযোগী করে তোলেন। ২০১০ সালের শুরুতে বান্দরবানে তার প্লান্ট থেকে বাণিজ্যিকভাবে সিএনজি বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু কাঁচামাল সংকটসহ নানা জটিলতায় পড়ে এক সময় খোকন দাসকে বন্ধ করে দিতে হয় ওই প্লান্ট। মাস চারেক আগে সিলেটের বালুচরের আবদুল মছবি্বর তার বায়োগ্যাস প্লান্টকে সিএনজিতে রূপান্তরের জন্য বান্দরবান থেকে নিয়ে আসেন খোকন দাসকে। তারপর থেকেই নতুন অধ্যায়ের শুরু।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment