থাই কৈ- চাষ ব্যবস্থাপনা।


প্রজনন ও চাষ  ভাল ব্যবস্থাপনা নিলে ছোট বড় সব ধরনের পুকুরে কৈ মাছের চাষ করা যায়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বর্গাকার পুকুরের চেয়ে আয়তাকার পুকুরে কৈ চাষের ফলন বেশি হয়। ২ ধাপে এই মাছের চাষ করা যায়।  একটি পুকুর ব্যবহার করে বা সরাসরি এবং দু'টি পুকুর ব্যবহার করে বা নার্সিং করে।  

একটি পুকুর ব্যবহার পদ্ধতি : একটি পুকুর ব্যবহার করে বা সরাসরি প্রায় এক ইঞ্চি সাইজের কৈ মাছের পোনা ছাড়লে ওই পুকুরের ২য় পদ্ধতির চেয়ে কমপক্ষে ১০ দিন আগে বাজারজাত করা যায়। এ ক্ষেত্রে পোনার মজুদ থেকে ২০% পোনা বাদ দিয়ে পোনা মজুদ ধরতে হবে। যেমন সরাসরি একটি পুকুরে ৫০ হাজার পোনা ছাড়ার পর ওই পুকুরের মজুদ ধরতে হবে ৪০ হাজার।  

২য় পুকুর ব্যবহার পদ্ধতি : ২য় পুকুর ব্যবহার করেও এই মাছের চাষ করা যায়। সে ক্ষেত্রে প্রথমে একটি ছোট পুকুরে প্রায় এক ইঞ্চি সাইজের কৈ মাছের পোনা ছেড়ে নার্সিং করতে হবে প্রায় ২০ দিন। এক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে প্রায় ২ হাজার পোনা মজুদ করা যাবে। প্রায় ২০ দিন নার্সিং করার পর ২য় পুকুরে স্থনানত্মর করতে হবে। কৈ মাছের পোনা স্থানানত্মর করার সময় কিছু বিশেষ দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন মেঘলা আকাশে কৈ মাছের পোনা স্থনানত্মর করা উচিৎ হবে না। রৌদ্রজ্জ্বল আকাশে বেলা ১১ টার দিকে কৈ মাছের পোনা স্থানানত্মর করতে হবে। আবার বেলা ১২ টার পর স্থনানত্মর করা ঠিক হবে না। ১১টার আগে পোনা স্থানানত্মর করলে কিছু বোঝার আগেই পোনা হঠাৎ করে মারা যেতে পারে। আবার বেলা ১২ টার পরে পোনা স্থানানত্মর করলে অতিরিক্ত রোদের তাপে কৈ মাছের পোনা সহজেই রোগে আক্রানত্ম হতে পারে।  

পুকুর নির্বাচন : সাধারণত দো-অাঁশ, এটেল দো-অাঁশ এমনকি বেলে দো-অাঁশ মাটির পুকুর এবং যে সমসত্ম পুকুরে বন্যার পানি ওঠে না, পানির ধারণ ক্ষমতা বেশি সেই সমসত্ম পুকুরে কৈ মাছ চাষের উপযোগী। আয়তাকার পুকুরের আয়তন ৬০ থেকে ৮০ শতাংশের হলে ভাল। পানি পরিবর্তনের সুবিধা থাকতে হবে। পুকুরের গভীরতা ৪ থেকে ৫ ফুট হলে ভাল। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে ৩ থেকে ৪ ফুট গভীরতার পুকুরেও এ মাছ চাষ করা যায়। সেক্ষেত্রে মাছের মজুদ ঘনত্ব একটু কম দিতে হবে।  পুকুর তৈরি : নতুন ও পুরাতন উভয় ধরনের পুকুরে কৈ মাছ চাষ করা যায়। নতুন পুকুরের তলায় শতাংশ প্রতি ১০ কেজি গোবর ছিটিয়ে তারপর হালকা চাষ দিতে হবে। তারপর অল্প একটু পানি দিয়ে ভাল করে মই দিতে হবে। পুরাতন পুকুর হলে প্রথমেই পুকুরের পানি সেচ দিয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে। তারপর সঁ্যাতসঁ্যাতে থাকা অবস্থায় শতাংশ প্রতি এক কেজি চুন পানির সাথে গুলে ছিটিয়ে দিয়ে ভাল করে মই দিতে হবে। এ সময় পুকুর শুকাতে দিতে হবে। পুকুরের তলার মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেলে পুকুর চাষ করার উপযোগী হয়ে উঠবে। এ ছাড়া সারাবছর পানি থাকে এমন পুকুরেও কৈ মাছের চাষ করা যাবে। এক্ষেত্রে পুকুরে বিষটোপ বা রটেনন পাউডার দিয়ে অবাঞ্চিত বা রাক্ষুসে মাছ নিধন করতে হবে। তারপর শতাংশপ্রতি ১কেজি চুন পানির সাথে মিশিয়ে সমসত্ম পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। সারাবছর অতিরিক্ত কাদা-পানি থাকে এমন পুকুরে কৈ মাছের চাষ না করাই ভাল। উলেস্নখিত পদ্ধতি অনুসরণ করে পুকুর তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। এরপর পুকুরের পাড়ের উপর দিয়ে জাল দিয়ে ঘের দিতে হবে যাতে পুকুরের ভেতর সাপ, ব্যাঙ ঢুকতে পারে না। এ ছাড়াও মার্চ এপ্রিলে কৈ মাছ মজুদ করলে পুকুর থেকে মাছ উঠে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। মে মাস বা তারপরে কৈ মাছ মজুদ করলে পরবতর্ী ফেব্রম্নয়ারি পর্যনত্ম পুকুর থেকে উঠে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে না। উলেস্নখিত পদ্ধতি অনুসরণের পর পুকুরে ২ ফুট পানি দিয়ে পোনা মজুদ করতে হবে।  মজুদ ঘনত্ব : প্রতি শতাংশে ৫০০ থেকে এক হাজারটি কৈ মাছ মজুদ করা যায়। যদিও কয়েক বছর আগে মজুদ ঘনত্ব শতাংশে ৩০০ দিয়ে শুরম্ন হয়েছিল। পানি পরিবর্তনের সুযোগের উপর মজুদ ঘনত্ব নির্ভরশীল। পানি পরিবর্তনের সুযোগ যত বেশি থাকবে কৈ মাছের মজুদ তত বেশি দেয়া যাবে। তবে মাছের মজুদ ঘনত্ব শতাংশে হাজারের বেশি দেয়া ঠিক নয়।


প্রজনন ও চাষ_  থাই কৈ এর ব্রম্নড ব্যবস্থাপনা : 
প্রথমে পুকুরের তলা ভাল করে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুরের তলা যদি শুকানো সম্ভব না হয় তাহলে জাল টেনে বা রটেনন প্রয়োগ করে সমসত্ম অবাঞ্ছিত মাছ মেরে এক সপ্তাহ পর প্রতি শতাংশে ১ কেজিহারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। তারপর পুকুর পাড়ের চারপাশ দিয়ে মাটির ১ ফুট গভীর দিয়ে পলিথিন জাতীয় (যা মাটির নীচেও নষ্ট হয় না) জাল দিয়ে ভালভাবে বেড়া দিতে হবে। তারপর পুকুরে পানি দিতে হবে। পুকুরের পানির গভীরতা ৩ থেকে ৪ ফুট এবং অপেক্ষাকৃত কম কাঁদাযুক্ত পুকুর হলে ভাল হয়। পুকুরের দ্রম্নত বর্ধনশীল সুস্থ ও সবল মাছ প্রজননের জন্য মজুদ করতে হবে। যতদূর সম্ভব বেশি সংখ্যক মাছ থেকে কম সংখ্যক ব্রম্নড নির্বাচন করাই উত্তম এবং নির্বাচিত মাছকে অবশ্যই ভালভাবে যত্ন করতে হবে। ব্রম্নড প্রতিপালনের সাধারণত ১৫ থেকে ২০ শতাংশের পুকুর হলে ভাল। প্রতি শতাংশে ১০০ থেকে ১৫০ টি ব্রম্নড মাছ মজুত করা ভাল। খাবার হিসাবে বাজারের কৈ মাছের যে কোন ব্রান্ডের গ্রোয়ার খাবার খাওয়ালেই চলবে। দেহের ওজনের ৩% খাবারই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি খাবার দিলে কৈ মাছের দেহে বেশি চর্বি হয়ে যেতে পারে। শীতকালে ব্রম্নড মাছের বিশেষ পরিচর্যা করতে হবে।  

প্রজনন : চাষাবাদের জন্য ফেব্রম্নয়ারির মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাস পর্যনত্ম কৈ মাছের প্রজননের জন্য উপযুক্ত সময়। এ ছাড়াও কৈ মাছ যে কেউ ইচ্ছা করলে প্রায় সারা বছরই প্রজনন করাতে পারে। সঠিক পরিচর্যা করলে প্রায় সারা বছরই পেটভর্তি ডিম থাকে যা দেখে স্ত্রী কৈ মাছ সনাক্ত করা যায়। এ ছাড়াও স্ত্রী কৈ মাছ পুরম্নষ কৈ মাছের তুলনায় অনেক বেশি বড় হয়ে থাকে। পুরম্নষ কৈ মাছকে সনাক্তের জন্য প্রজনন মৌসুমে পেটে হালকা চাপ দিলেই সাদা রঙের শুক্রাণু বের হয়ে আসে।  প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী ও পুরম্নষ মাছকে ১টি ইনঞ্জেকশন দিলেই চলে। ইনঞ্জেকশন দিতে হবে পি.জি. দিয়ে। স্ত্রী মাছের জন্য মাত্রা হবে ৬ থেকে ৮ মিঃ গ্রাঃ/কেজি, আর প্রতি কেজি পুরম্নষ মাছের জন্য পি.জি. দিতে হবে ২ থেকে ৩ মিঃ গ্রাঃ। ইনঞ্জেকশন দিতে হবে মুখের কাছে পাখনার নীচে ফুলার অংশে। পি. জি. দেয়ার পর স্ত্রী ও পুরম্নষ মাছকে সমান অনুপাতে অর্থাৎ ১ : ১ অনুপাতে প্রজনন ট্যাংকে রেখে তারপর পানির স্রোতসহ ঝর্ণার ব্যবস্থা করতে হবে। ইনঞ্জেকশন দেয়ার ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পর মাছ ডিম দিতে শুরম্ন করবে। ডিম ছাড়ার পর ডিমগুলোকে হ্যাচিং ট্যাংকে নিয়ে যেতে হবে। কৈ মাছের ডিমগুলো ভেসে থাকে। সে জন্য ডিমগুলোকে বিশেষ কায়দায় হ্যাচিং ট্যাংকে নিয়ে যেতে হবে। কৈ মাছের ডিম ভাসমান বিধায় আমি এক বিশেষ পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহের কথা উলেস্নখ করছি যা আমাদের দেশে প্রথম। ডিম সংগ্রহের সময় সর্তকতার অভাবে অনেক ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রজনন ট্যাংক থেকে হ্যাচিং ট্যাংক পর্যনত্ম ৩ থেকে ৪টি সিরিজ ট্যাংক পাশাপাশি রাখতে হবে। প্রজনন ট্যাংক থেকে প্রতিটি ট্যাংকের বর্হিগমন নালা ২ ইঞ্চি নীচু হতে হবে। তাতে ডিমগুলো আপনা আপনি প্রজনন ট্যাংক থেকে হ্যাচিং ট্যাংকে এসে জমা হবে। নিষিক্ত ডিম এরেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ ও পানি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। তাপমাত্রা ভেদে ১৮/২০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে। এরপর ২ থেকে ৩ দিন হ্যাচিং ট্যাংকে রাখার পর রেনু পোনাকে সিদ্ধ ডিমের কুসুম ভাল করে বেস্নন্ডার করে তারপর ছেঁকে খাবার হিসাবে দিতে হবে। এভাবে ক'দিন খাওয়ানোর পর নার্সারি পুকুরে স্থানানত্মর করতে হবে।


নার্সারি পুকুরের ব্যবস্থাপনা ২টি ধাপে করা যায়। প্রথমটি হল ১টি পুকুর ব্যবহার করে আর দ্বিতীয়টি হল ২টি পুকুর ব্যবহার করে। ১টি পুকুর ব্যবহার করে পোনা উৎপাদন করলে পোনা ছোট বড় হয়ে যায় এবং চাষের ক্ষেত্রে নানাবিধ অসুবিধা হয়। ২টি পুকুর ব্যবহার করলে পোনা তেমন ছোট বড় হয় না। সে জন্য ২টি পুকুর ব্যবহার করাই ভাল। নার্সারি পুকুর আয়তাকার হলে ভাল হয়। এক্ষেত্রে ২য় পদ্ধতির কথা উলেস্নখ থাকছে অর্থাৎ ২টি পুকুর ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। প্রথম পুকুরের আয়তন হবে ১০/১৫ শতাংশ এবং ২য় পুকুরের আয়তন হবে ৪০/৫০ শতাংশ। প্রথম পুকুরের পানি সেচ দিয়ে শুকিয়ে শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে সমসত্ম পুকুরে ছিটিয়ে দিয়ে শুকাতে হবে। পুকুরের তলা শুকানোর পর পুকুরের পাড়ের চারপাশে জাল দিয়ে ঘিরে শ্যাল মেশিন বা গভীর নলকূপের সাহায্যে ৩ ফুট পরিষ্কার পানি দিতে হবে। পানি দেয়ার পর পরই শতাংশ প্রতি ১০০ গ্রাম আটা পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এর ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাণী পস্ন্যাংটন জন্মাবে যা কৈ মাছে রেনুর জন্য অত্যনত্ম প্রয়োজনীয়। আটা দেয়ার ২ দিন পর পুকুরে সন্ধ্যায় ০.২ পি.পি.এম হারে সুমিথিয়ন পানির সাথে মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এর ২দিন পর রেনু মজুত করতে হবে। ১৫/২০ শতাংশের নার্সারি পুকুরের জন্য ১০০/১৫০ জোড়া কৈ মাছের ব্রম্নড থেকে উৎপাদিত রেনু পুকুরে ছাড়া উচিৎ। এ পুকুরে ৭/৮ দিন খাওয়ানোর পর রেনুগুলো ধানীপোনাতে রূপানত্মরিত হয়ে যাবে। তখন এই ধানীপোনাকে গস্নাস নাইলন কাপড়ের তৈরি হাপা দিয়ে কাটাই করে ২য় পুকুরে স্থানানত্মরিত করতে হবে। এভাবে আরো ১০ দিন খাওয়ানোর পর ধানীপোনাগুলো চারা পোনাতে পরিণত হবে যা পরবতর্ীতে চাষের পুকুরে ছাড়তে হবে। 

খাবার প্রয়োগ : রেনু ছাড়ার পর থেকেই পুকুরে সম্পূরক খাবার প্রয়োগ করতে হবে। খাবার হিসেবে ২০ শতাংশের একটি পুকুরে প্রতিবারে ১০টি হাঁসের ডিম সিদ্ধ করে ডিমের সাদা অংশসহ ভালভাবে বেস্নন্ডারে মিহি করে গস্নাস নাইলনের কাপড় দিয়ে ছেঁকে পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে সমসত্ম পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।  এভাবে দৈনিক ২/৩ বার খাবার প্রয়োগ করতে হবে। ২ দিন খাবার দেয়ার পর ৩য় দিন থেকে ওই পরিমাণ ডিমের সাথে আরো আধাকেজি আটা সিদ্ধ করে ওই ডিমের সাথে মিশিয়ে পুকুরে দিনে ২/৩ বার প্রয়োগ করতে হবে। আটা প্রয়োগে রেনুমাছ খাওয়ার পাশাপাশি অধিক পরিমাণে প্রাণী পস্ন্যাংকটনের জন্ম হবে যা রেনুপোনার জন্য খুবই দরকারী। এভাবে ৫/৬ দিন খাওয়ানোর পর রেনুপোনাগুলো ধানীপোনাতে পরিণত হবে যা পরবতর্ীতে কাটাই পুকুরে অর্থাৎ ২য় পুকুরে স্থানানত্মরিত করতে হবে। এই পুকুরে ধানীপোনার খাবার হিসাবে বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি নার্সারি খাবার খাওয়াতে হবে। খাবারে প্রয়োগ পদ্ধতিতে নার্সারি খাবারকে ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে তারপর পোনাকে খাওয়ানো উচিৎ। খাবারের পরিমাণ হবে প্রতি ৪ লক্ষ মাছের জন্য ১০ কেজি খাবার। এভাবে ৮/১০দিন খাওয়ানোর পর পোনাগুলো এক থেকে দেড় ইঞ্চি সাইজের হলে পরবতর্ীতে চাষের পুকুরে ছাড়তে হবে। (চলবে) _এ. কে. এম নূরম্নল হক  ব্রহ্মপুত্র ফিস সিড কমপেস্নক্স (হ্যাচারি)  গ্রাম-চরপুলিয়ামারী,শম্ভুগঞ্জ, ময়মনসিং

SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment