টমেটো চাষ করার সময়

টমেটো এখন এক দামি সবজি। অসময়ে হলে তো কথাই নেই, শীতের চেয়ে অন্তত চার-পাঁচ গুণ দামে বিক্রি হবে। শীতেও চাষ করে ভালো লাভ করা যেতে পারে যদি আগাম চাষ করা যায়। সে জন্য যেসব জাত আগাম ভালো ফল দেয় সেসব জাত চাষ করতে হবে। অসময়ে বা গরমকালে ফল ধরে এমন জাতও আগাম লাগানো যেতে পারে। বর্তমানে অধিক ফলন দেয় ও আকর্ষণীয় রঙ হয় এমন অনেক হাইব্রিড জাতের বীজ এ দেশে পাওয়া যাচ্ছে। সেসব জাতের বীজ কিনে চাষ করতে এখনই লেগে পড়তে পারেন। এ সময়ে বোনা বীজ থেকে যেসব চারা হবে সেগুলো লাগালে ভর শীতে প্রচুর টমেটো ধরবে। আর এখনই চারা লাগাতে পারলে সেসব গাছে আগাম টমেটো ধরবে।
উল্লেখযোগ্য জাত : শীতের আগাম জনপ্রিয় জাতগুলো হলোÑ বারি টমেটো-৪ ও বারি টমেটো-৫ ইত্যাদি। মাঝ মওসুমি উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হলোÑ মানিক, রতন, বারি টমেটো-৩, বারি টমেটো-৬, বারি টমেটো-৭, বারি টমেটো-৯, বাহার, মহুয়া ইত্যাদি। নাবি মওসুমি জাতগুলো হলোÑ বাহার, রোমা ভিএফ, রাজা, সুরক্ষা ইত্যাদি ও গ্রীষ্মকালীন জাতগুলো হলোÑ বারি টমেটো-১৩ (শ্রাবণী), বারি হাইব্রিড টমেটো, বারি টমেটো-৪, বারি টমেটো-১০ ইত্যাদি। সারা বছর চাষের উপযোগী জাতগুলো হলোÑ বারি টমেটো-৬ (চৈতি) চাষ করা যায়। অন্যান্য জাত হলোÑ পাথরকুচি, মিন্টু সুপার, হীরা ১০১, পুষা রুবি, মারগ্লোব, রূপালী, হাইটম-২, বারি টমেটো-১, সাথী, সবল ইত্যাদি।
বীজ ও বীজতলার মাটি শোধন : টমেটো চাষে সফলতার জন্য বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ শোধন অনেকভাবে করা যায়। একটি গ্লাসে আধা গ্লাস ঠাণ্ডা পানিতে আধা গ্লাস সদ্য ফুটন্ত পানি মিশিয়ে নিলে সেই পানির তাপমাত্রা মোটামুটি ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হবে। সেই গরম পানিতে টমেটো বীজ ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে রোগজীবাণু মরে যায়। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেও বীজ শোধন করা যেতে পারে। মাটি শোধনের জন্য বীজতলার মাটি চাষ দিয়ে তাতে জৈবসার (মুরগির বিষ্ঠা) মিশিয়ে পলিথিন দিয়ে বায়ুরোধী করে ঢেকে দিতে হবে। এতে দুই সপ্তাহের মধ্যে সূর্যের তাপে মাটিতে থাকা রোগজীবাণু মরে মাটি শোধন হয়ে যাবে।
চারা তৈরি: রোদযুক্ত উঁচু জায়গা পরিষ্কার করে ভালোভাবে চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরি করে নিতে হবে। চাষের পর মাটি সমতল করে এক মিটার চওড়া ও তিন মিটার লম্বা করে বেড বানাতে হবে। এরূপ চারটি বীজতলার চারা দিয়ে এক হেক্টর জমিতে রোপণ করা যাবে। এই মাপের একটি বীজতলায় বোনার জন্য ৫০ গ্রাম বীজ লাগবে। অর্থাৎ প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য লাগবে ১২ গ্রাম বীজ। প্রতি শতক জমিতে চারা রোপণের জন্য মাত্র এক গ্রাম বীজ বুনতে হবে। টমেটোর জনপ্রিয় জাতগুলোর বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো আগাম জাতের ক্ষেত্রে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস, মাঝ মওসুমি জাতের ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস এবং নাবী মওসুমি জাতগুলোর জন্য উপযুক্ত সময় হলো জানুয়ারি মাস। বীজ বোনার পর তা গজাতে ৬ থেকে ৮ দিন সময় লাগে।
জমি তৈরি ও চারা রোপণ: টমেটোর ভালো ফলন অনেকটাই নির্ভর করে জমি তৈরির ওপর। তাই জমি চার থেকে পাঁচটি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডে ৬০ সেন্টিমিটার দূরে সারি করে প্রতি সারিতে ৪০ সেন্টিমিটার দূরত্বে ২৫ থেকে ৩০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। শীতকালীন টমেটোর জন্য নভেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারি (মধ্য কার্তিক থেকে মাঘের প্রথম সপ্তাহ) পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। তবে আগাম টমেটো চাষের জন্য ভাদ্র-আশ্বিন মাসে ও নাবি চাষের জন্য ফাল্গুন মাসে এবং গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য চৈত্র-বৈশাখ মাসে চারা রোপণ করতে হবে।
সার প্রয়োগ : শেষ চাষের সময় প্রতি শতক জমির জন্য ২০ কেজি গোবর, ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম এমওপি সার ও ৫০০ থেকে এক কেজি টিএসপি সার জমিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। পরে চারা লাগানোর গর্তে আবার শতকে ২০ কেজি গোবর প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া তিনটি সমান কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের ১০ দিন পরে প্রথম কিস্তিতে শতকে ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া দিতে হবে। চারা রোপণের ২৫ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে আরো ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং চারা রোপণের ৪০ দিন পর তৃতীয় কিস্তি হিসেবে আরো ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া রিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে চারা রোপণের ২৫ দিন পর প্রথম কিস্তি হিসেবে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম এমওপি এবং চারা রোপণের ৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম এমওপি সার জমিতে রিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে। ঘাটতি থাকলে জিপসাম, জিংক সালফেট, বোরিক অ্যাসিড পাউডার ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ব্যবহার করতে হবে।
সেচ দেয়া : শুষ্ক মওসুমে চাষ করলে পানি সেচ দেয়া প্রয়োজন। ফসল ও মাটির অবস্থা বিবেচনা করে তিনবার সেচ দেয়া যেতে পারে।
অন্যান্য পরিচর্যা : ভালো ফলন ও নিখুঁত ফল পেতে টমেটো গাছে ঠেকনা দেয় প্রয়োজন। পাশাপাশি দুইটি সারির মধ্যে ‘অ’ আকৃতির বাঁশের ফ্রেম তৈরি করে দিলে টমোটোর ফলন বৃদ্ধি পায়। গাছ যাতে অত্যধিক ঝোপালো না হয় সে জন্য প্রয়োজনে অতিরিক্ত ডালপালা ছাঁটাই করা উচিত। প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির সার প্রয়োগের আগে পার্শ্বকুশি ছাঁটাই করে দিতে হয়। এতে পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ কম হয় এবং ফলের আকার ও ওজন বৃদ্ধি পায়। নিড়ানি দিয়ে জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
বালাই ব্যবস্থাপনা : টমেটোর সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকাগুলো হলো টমেটোর ফল ছিদ্রকারী পোকা, এফিড বা জাবপোকা, জ্যাসিড বা শ্যামা পোকা, কাটুই পোকা, মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা, পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা, বিছা পোকা ও থ্রিপস পোকা। তা ছাড়া বিভিন্ন ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সাদা মাছি ও অন্যান্য পোকা টমেটোর ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে থাকে। বুশি স্ট্যান্ট, পাতা কোঁকড়ানো, মোজাইক ইত্যাদি অন্যতম ভাইরাস রোগ। ভাইরাস রোগ হলে বাহক পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও বেশি আক্রান্ত হলে গাছ তুলে ফেলতে হবে। এ ছাড়া ঢলে পড়া, আগাম ও নাবি ধসা, শিকড়ে গিঁট ইত্যাদি টমেটার অন্যতম প্রধান রোগ।
ফসল তোলা ও ফলন : জাতভেদে চারা লাগানোর ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে পাকা টমেটো সংগ্রহ আরম্ভ করা যায়। টমেটো পাকা ও কাঁচা উভয় অবস্থাতেই সংগ্রহ করা যায়। প্রতি গাছ থেকে সাত থেকে আটবার টমেটো সংগ্রহ করা যায়। ফলের নিচের দিকে একটু লালচে ভাব দেখা দিলে ফসল সংগ্রহের উপযোগী হয়। জাতভেদে টমেটোর ফলন শতাংশে ৮০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment