আরিফুল ইসলাম মোরগ-মুরগির ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ হল সালমোনেলোসিস। এ রোগে একদিকে যেমন মোরগ-মুরগির মৃত্যুর হার বেশি অপরদিকে মুরগির ডিম ও মাংস উত্পাদন ব্যাপকভাবে হরাস পায়। ফলে খামারিরা মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সালমোনেলা গোত্রভূক্ত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বাংলাদেশে মূলত মুরগির হোয়াইট ব্যাসিলারি ডাইরিয়া বা পুলুরাম রোগ, ফাউল টাইফয়েড নামক রোগ হয়ে থাকে। এ রোগে মাংস ও ডিম উত্পাদনকারী খামার এবং প্রজনন খামার সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। সালমোনেসিস। রোগটি নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বাউ-প্যাথ এস-এন্টিজেন কিট আবিষ্কার করেন। অধ্যাপক এমদাদুল বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে সালমোনেসিস রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিড এগ্লোটিনেশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ টেস্টে অনেক সময় ভুল ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া এ পরীক্ষাটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। বহুবিধ অসুবিধা দূর করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ অতি সহজে স্বল্প খরচে এবং নির্ভুলভাবে রোগ শনাক্তকরণের জন্য বাউ-প্যাথ এস এন্টিজেন কিট উদ্ভাবন করছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে সালমোনেলোসিস রোগটি নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কিটগুলো আমদানিনির্ভর এবং ব্যয়বহুল। এই কিটগুলোর ব্যবহার কালে গাঢ় নীল রঙের দ্রবণের মধ্যে অস্পষ্ট নীল দানা সৃষ্টি হয় বলে রোগ শনাক্তকরণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। অথচ উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করলে স্লাইডে গোলাপি রঙের দ্রবণের মধ্যে সুস্পষ্ট লালদানা সৃষ্টি হয় যা সহজেই খালি চোখে দেখা যায়। এতে রোগ শনাক্তকরণে কোনো রকম জটিলতার সৃষ্টি হয় না। তদুপরি বাজারে প্রচলিত অনুরূপ কিটগুলোর তুলনায় অনেক সস্তা এবং দেশে এ কিট ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব। বাউ-প্যাথ এস এন্টিজেন কিট এর সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রণালী স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত ব্যকটেরিয়া হতে প্রস্তুতকৃত এন্টিজেনটির রঙ গোলাপী, যা ৪ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা প্রয়োজন হয়। পরীক্ষাটি সম্পন্নের জন্য অতিরিক্ত হিসেবে গ্লাস স্লাইড, ড্রপার, সন্দেহযুক্ত মুরগির রক্তরস প্রয়োজন হয়। স্লাইডের উপর বিশ মাইক্রোলিটার এন্টিজেন (বাউ-প্যাথ এস এন্টিজেন কিট) এবং সমপরিমাণ রক্তরস মেশানোর ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে খালি চোখে সুস্পষ্ট দানার উপস্থিতি দেখে রোগটি উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। উল্লেখ্য, রক্তরস ও এন্টিজেন মেশানোর এক মিনিটের অধিকাল অপেক্ষা করলে ভুল ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেবল মাত্র এক মিনিটের মধ্যে সৃষ্ট দানা রোগটির উপস্থিতি নিশ্চিত করে। এন্টিজেন প্রস্তুতির পাশাপাশি এই এগ্লুটেশন টেস্টের মাধ্যমে সহজে ইলাইসা ট্রিটার ও নির্ণয় করা যায়। কিছু রক্তরসের জানা ইলাইসা টিটার থেকে এগ্লুটিশন টিটার, যা প্রতিষেধক দেয়া খামারের মুরগির রক্তরসের এন্টিবডির মাত্রা নির্ণয়ে সাহায্য করে এবং যা দ্বারা খামারের প্রতিষেধকের কার্যকারিতা সহজে নিরূপণ করা যায়।
- Blogger Comment
- Facebook Comment
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
0 comments:
Post a Comment