শীতকালীন লাউ চাষ

বাংলাদেশের শীতকালীন জলবায়ু লাউ চাষের সর্বোপযোগী। বছরের অন্য সময়েও চারা লাগিয়ে ফসল উৎপাদন করা যায়। লাউ প্রায় সব ধরনের মাটিতেই জন্মে; তবে প্রধানত দো-আঁশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য উত্তম।
জাত : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি লাউ-১ নামে উচ্চফলনশীল একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে লাউয়ের কোনো অনুমোদিত জাত নেই। এ জাতটি সারা বছরই চাষ করা যায়। বর্তমানে ইস্টওয়েস্ট সিড কোম্পানির হাইব্রিড লাউ মার্টিনা ও জুপিটার ব্যাপক আবাদ হচ্ছে।
বীজ বপন ও চারা উৎপাদন : লাউ চাষের জন্য দুইভাবে বীজ বপন করা যায়। সরাসরি ক্ষেতে তৈরী মাদায় বীজ বপন করে অথবা পলিথিনের ব্যাগে চারা তৈরি করে। ৫০ ভাগ পচা গোবর অথবা জৈবসার সমপরিমাণ বেলে মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে পলিথিন ব্যাগের জন্য মাটি তৈরি করে নিতে হবে। পলিথিন ব্যাগের ব্যাস ৭.৫ সেন্টিমিটার ও উচ্চতা ১২-১৫ সেন্টিমিটার হবে। পানি বের হওয়ার জন্য ব্যাগের তলায় দুই-তিনটি ছিদ্র করে দিতে হবে। অপর দিকে সরাসরি মাদায় বীজ বপন করতে হলে প্রথমে ৩০ী৩০ী৩০ সেন্টিমিটার পরিমাপের মাদা তৈরি করে সার প্রয়োগ করার পর প্রতি মাদায় চার-পাঁচটি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের ১০-১৫ দিন পর প্রতি মাদায় দু’টি করে সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।
বীজ বপনের সময় : শীতকালীন লাউ চাষের জন্য সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে বীজ বপন করতে হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য আগস্টের মাঝামাঝি সময়েও বীজ বপন করা যায়।
চারা রোপণ : লাউ চাষের জন্য ২ী২ মিটার দূরত্বে প্রতি মাদায় দু’টি সুস্থ ও সবল চারা রোপণ করতে হয়। মাদার ওপরে মাচা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। রবি মওসুমে লাউ মাচাবিহীন অবস্থায়ও চাষ করা যায়।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা : লাউগাছ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে। তাই নিয়মিত গাছের গোড়ায় সেচ দেয়া, মাটির চটা ভেঙে দেয়া, বাউনি দেয়া ও গাছের গোড়ার শাখাগুলোও ভেঙে দেয়া বাঞ্ছনীয়। বারি লাউ-১-এর জন্য মাচা দেয়া ভালো।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন : লাউয়ে সাধারণত জাবপোকা ও মাছিপোকার আক্রমণ হতে পারে। জাবপোকা গাছের কচি পাতা ও ডগার রস শুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এ পোকার আক্রমণ হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি অথবা রগর ১মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ¯েপ্র করতে হবে।
ফলের মাছিপোকা : পূর্ণবয়স্ক মাছিপোকা বাদামি বর্ণের গাঢ় হলুদ দাগযুক্ত হয়ে থাকে। স্ত্রী মাছি কচি ফলের গায়ে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে পোকার কিড়া আক্রান্ত ফলের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং লাউয়ের কচি অংশ খেয়ে নষ্ট করে। ফলে আক্রান্ত লাউ পচে যায় এবং অকালে ঝরে যায়। বিষটোপ তৈরি করে এর আক্রমণ রোধ করা যায়।
কীটনাশক ব্যবহার করে এ পোকা দমন করতে হলে গাছে কচি ফল দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ডিপটেরক্স-৮০ এসপি ১.০ গ্রাম অথবা ডিপটেরক্স-৫০ ইসি ১.৫ মিলিলিটার মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর গাছে ¯েপ্র করতে হবে।
লাউয়ের উল্লেখযোগ্য দু’টি রোগ হচ্ছে পাউডারি মিলডিউ ও ডাউনি মিলডিউ। পাউডারি মিলডিউ রোগের লক্ষণ হচ্ছে পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায় যা পাতা নষ্ট করে দেয়। এ রোগের প্রতিকারের জন্য ২ গ্রাম থিয়োভিট-৮০ ডব্লিউপি অথবা টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলি প্রতি এক লিটার পানিতে মিশিয়ে সাত দিন অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। ডাউনি মিলডিউ রোগ হলে গাছের পাতা ধূসর রঙ ধারণ করে, পাতায় সাদা সাদা পাউডার দেখা যায়। এ রোগ দমনের জন্য রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে দুই গ্রাম থিয়োভিট প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ¯েপ্র করা যেতে পারে। বারি লাউ-১ জাতটি প্রধানত পাউডারি মিলডিউ ও ডাউনি মিলডিউ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত।
ফসল সংগ্রহ : বীজ বোনার ৬০-৭০ দিনের মধ্যে বারি লাউ-১-এ ফল ধরে। খুব কচি অবস্থায় দুই-তিন দিন পরপর লাউ সংগ্রহ করা চলে।
ফলন : বারি লাউ-১ জাতটির প্রতি গাছে ১০-১২টি ফল হয়ে থাকে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন শীতকালে ৪২-৪৫ টন এবং গ্রীষ্মকালে ২০-২২ টন হয়
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment