কৃষি ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি - বাকৃবি জিয়া সার-বীজ ছিটানো যন্ত্র

সিরাজুস সালেকিন কৃষিক্ষেত্রে সার ও বীজ ছিটানোর প্রক্রিয়াটি এখনো বাংলাদেশে পুরোপুরি প্রাচীন পদ্ধতিতে হাতে ছিটানো হচ্ছে। এ কাজটির যান্ত্রিক রূপ অতীতে না হলেও বর্তমানে এর প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে। হাতে ছিটানো বীজ বা সার কোনো অবস্থাতেই সমভাবে জমিতে দেয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া এ কাজটি মোটামুটি ভালোভাবে করতে অভিজ্ঞ ব্যক্তির প্রয়োজন হয়। অভিজ্ঞ কৃষক কর্তৃক বীজ ছিটানো হলেও পুরোপুরি সমভাবে জমিতে প্রয়োগ সম্ভব হয় না বিধায় বীজের যেমন অপচয় হয়, তেমনি কোথাও ঘন কোথাও পাতলাভাবে গাছ জন্মায়। অনুরূপভাবে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, কোনো গাছের গোড়ায় বেশি ও কোনো গাছের গোড়ায় সামান্য সার পড়েছে। ফলে সারের অপচয় ছাড়া একই জমিতে উৎপাদনশীলতার তারতম্য দেখা দেয়। হাতে ছিটানোর পদ্ধতিতে একরপ্রতি সার বা বীজ ছিটানোর সময় লাগে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি এবং কষ্টকরও বটে। এই সমস্যা সমাধানকল্পে ওই প্রক্রিয়াটির দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রফেসর ড. এ টি এম জিয়াউদ্দিন কর্তৃক উদ্ভাবিত 'বাকৃবিজিয়া সার-বীজ ছিটানোর যন্ত্রটির' ব্যবহার ২০০০ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। যন্ত্রটির মোট ওজন প্রায় ছয় কেজি এবং এটি লোহার পাতের তৈরি একটি ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। যন্ত্রটিতে একটি বিটার আছে, যা হাতল দ্বারা চেইন ও স্প্রকেটের সাহায্যে ঘোরানো হয়ে থাকে। একটি সার-বীজের ধারক এবং একটি প্লাস্টিকের প্লাটফর্ম নিয়ে যন্ত্রটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের ওয়ার্কশপে। যন্ত্রটির ওপর একটি সার বা বীজ রাখার ধারক আছে, সেখান থেকে একটি মিটারিং ইউনিটের ভেতর দিয়ে পরিমাণমতো সার বা বীজ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বলে আনুভূমিকভাবে স্থাপিত একটি গোলাকার প্লাস্টিক প্লাটফর্মের ওপর পড়ে। সার বা বীজ ওই প্লাটফর্মের ওপর পড়া মাত্রই একটি ঘূর্ণায়মান লোহার দ-ের আঘাতে তা অত্যন্ত সমভাবে প্রায় ৬ মিটার চওড়া হয়ে জমিতে পড়ে। চালক যন্ত্রটিতে স্থাপিত একটি হাতল ঘুরিয়ে (হেঁটে চলার সময়) চেইন ও স্প্রকেট পদ্ধতিতে ঘূর্ণায়মান দ-টিতে শক্তি সঞ্চারিত করে থাকে। যন্ত্রটি একজন কৃষক পিঠে বহন করে জমিতে প্রয়োজনমতো সার বা বীজ প্রয়োগ করতে পারে অতি দক্ষতার সঙ্গে এবং অত্যন্ত সমভাবে। এ যন্ত্রের সাহায্যে অনেক ধরনের বীজ যেমন_ গম, ধান, ডালবীজ, সরিষা, কলাই, ভুট্টা ইত্যাদি অল্প সময়ে বপন করা যায়। তাছাড়া সার যেমন_ ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি ইত্যাদি জমিতে পরিমাণমতো ছিটানোর জন্য যন্ত্রটি অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। হাতে সার বা বীজ ছিটানোর সমতা যেখানে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ, সেখানে মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষায় প্রমাণিত যে, যন্ত্রটি স্বাভাবিক ঘূর্ণনে (রোটরের ৭০০ আরপিএম) মিহি ইউরিয়া, টিএসপি, গম, ধান, মসুর ডাল ও কলাই যথাক্রমে ৯৭.২১ ও ৯৬.২৫ শতাংশ সমতায় ছিটাতে পারে। ফলে যন্ত্রটি কৃষিক্ষেত্রে খুবই সন্তোষজনকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। এ যন্ত্রের সাহায্যে সার বা বীজ (যেমন ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি/গম, ধান, মসুর ডাল, সরিষা, কলাই, ভুট্টা) ইত্যাদি সুষমভাবে ছিটানো যায়। যন্ত্রটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রায় ২.০ হেক্টর জমিতে সার বা বীজ ছিটাতে পারে (হাতে ছিটাতে হার ঘণ্টায় মাত্র ০.৩০ হেক্টর)। 
ছিটানোর সুষমতা সার বা বীজের আকারভেদে ৮৮ থেকে ৯৮ শতাংশ। যন্ত্রটিতে একটি সূক্ষ্ম পরিমাপক থাকায় এটি পরিমাণমতো সার বা বীজ সহজে ছিটাতে পারে। যন্ত্রটি তৈরি বাবদ মোট খরচ খুবই কম। সার ও বীজ ছিটাতে সময় কম লাগে এবং অপচয় রোধ হয় বিধায় সার্বিকভাবে বপন খরচ খুবই কম। যন্ত্রটি চালাতে কোনো তেল বা বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই এবং হাতে রাসায়নিক সার স্পর্শ করার প্রয়োজন নেই। ফলে কৃষকের শরীর বা পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। যন্ত্রটি থানা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে উৎপাদন বা বাণিজ্যিক ব্যবহার সম্ভব বিধায় স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। মাঠ পর্যায়ে যন্ত্রটি নিখুঁত এবং টেকসই বলে প্রমাণিত হয়েছে। সার-বীজ ছিটানো যন্ত্র ব্যবহারের সময় যন্ত্রের মিটারিং ইউনিটের কাঁটাটি শূন্য অবস্থানে স্থাপন করতে হবে, যাতে সার বা বীজ ধারকের তলাটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকে এবং ধারকটিতে পরিমাণমতো সার বা বীজ ভরে নিতে হবে। এরপর মেশিনটি কাঁধে নিয়ে বেল্ট দুটিকে বুকের ওপর আড়াআড়িভাবে বেঁধে নিতে হবে। মিটারিং ইউনিটের কাঁটাটি উপযুক্ত স্থানে স্থাপন করতে হবে। জমির একপাশ দিয়ে স্বভাবিক গতিতে হেঁটে (ঘণ্টায় ৪ কিমি) চলার সঙ্গে সঙ্গে হাতলটি স্বাভাবিকভাবে ঘোরাতে হবে এবং ছিটানোর কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। প্রয়োজন শেষে যন্ত্রটি পরিষ্কার করে এর ঘূর্ণায়মান অংশগুলোতে তেল বা মবিল দিয়ে শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে। জমিতে সার বা বীজ ছিটানো ছাড়াও মাছ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সার বা পিলেট পুকুরে ছিটানোর কাজও এ যন্ত্রের দ্বারা করা যেতে পারে। যন্ত্রটির মূল্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। যন্ত্রটি দেশের প্রায় সব অঞ্চলে পাওয়া যায়। যন্ত্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ের অফিস অথবা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগে যোগাযোগ করা যেতে পারে
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment