বসত-বাড়ির আঙ্গিনায় লেটুস চাষ


শাকসবজি রান্না করতে গিয়ে আমরা এর পুষ্টি উপাদান নষ্ট করে ফেলি। তবে কোনো কোনো শাকসবজি রয়েছে সেগুলো কাঁচা খাওয়া সম্ভব। লেটুস এমনি একটি শাক, যা সালাদ হিসেবে টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ এসবের সঙ্গে ব্যবহার হয়। ফলে এর পুষ্টি থাকে অটুট। লেটুস বেশ পুষ্টিকর। মুখে রুচিও বাড়ায়। এর প্রতি ১০০ গ্রাম পাতায় ৯৯০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান। এ ছাড়া ভিটামিন-বি ০.২২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ১০ মিলিগ্রাম, শর্করা ২.৫ গ্রাম, আমিষ-২.১ গ্রাম, চর্বি ০.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম এবং লৌহ আছে ২৪ মিলিগ্রাম। এ সত্ত্বেও এ দেশে এর আবাদ খুবই সীমিত। অথচ প্রতিটি বসতবাড়ির আঙ্গিনায় লেটুস চাষের রয়েছে যথেষ্ট সুযোগ। এতে পারিবারিক চাহিদা পূরণ হবে।
পাশাপাশি বিক্রি করে পাওয়া যাবে নগদ অর্থ।

চাষের সময়ঃ

শীতপ্রধান দেশে সারা বছর এর চাষ হলেও এ দেশে কেবল রবি মৌসুমে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় বীজ বোনা যেতে পারে।

জাতঃ

লেটুসের বিভিন্ন জাত রয়েছে। এসবের মধ্যে বিগ বোস্টন, হোয়াইট বোস্টন, প্যারিস হোয়াইট, গ্র্যান্ড ব্যাপিড, নিউইয়র্ক-৫১৫, ইম্পিরিয়াল-৫৪, সিম্পসন, কিং ক্রাউন, কুইন ক্রাউন, ডার্ক, গ্রিন, গ্রেটলেক উল্লেখযোগ্য।

চাষের নিয়মঃ

চাষের জন্য জমি ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। এসব জমিতে সরাসরি বীজ বোনা যায়। আবার বীজতলায় বপন করে উপযুক্ত বয়সের চারা (এক মাস বয়সের) মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। এ ড়্গেত্রে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব রাখতে হবে ৮ ইঞ্চি। এজন্য শতাংশপ্রতি বীজ দরকার ৪ গ্রাম করে। তবে বীজতলায় বীজ প্রয়োজন হয় ২০ গ্রাম। লেটুসের বীজ খুব ছোট। তাই বপনের সময় বীজের সঙ্গে মাটির কণা বা ছাই ব্যবহার করা উচিত।

সার প্রয়োগঃ

লেটুস চাষে শতাংশপ্রতি যে পরিমাণ সার প্রয়োজন তা হচ্ছে- গোবর ২০ কেজি খৈল ৮০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ ১০০ গ্রাম। এগুলোর মধ্যে গোবর চাষের প্রথম দিকে এবং শেষ চাষের সময় টিএসপি ও পটাশ সার মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হয়। তবে ইউরিয়াকে সমান দু’ভাবে ভাগ করে দু’কিস্তিতে (চারার বয়স ১০ দিন এবং বয়স ২০ দিন) উপরিপ্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।

পরিচর্যাঃ

আশানুরূপ ফলন পেতে জমিকে সর্বদাই আগাছামুক্ত রাখতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে সেচ দেয়া জরুরি। তদ্রূপ পানি জমে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে এর গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হয়। প্রয়োজনে চারা পাতলা করা বাঞ্ছনীয়। এতে একদিকে যেমন গাছ ঠিকভাবে বেড়ে উঠবে, পক্ষান্তরে উত্তোলিত সবজি ব্যবহার করা যাবে।

বালাই ব্যবস্থাপনাঃ

লেটুসের পাতায় কখনো কখনো ‘ছাতা’ রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে- গাছের পাতা নুইয়ে পড়া এবং পাতার অগ্রভাগ পুড়ে যাওয়া। এমন হলে আক্রান্ত গাছ অবশ্যই ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তবে বীজ ও মাটি শোধন করে এরোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। পোকার মধ্যে জাবপোকা ভয়ঙ্কর। এরা গাছের পাতার রস চুষে খেয়ে ফেলে। এ ছাড়া পোকার মলদ্বার থেকে এক ধরনের তরল পদার্থ বের হয়ে, যা পাতায় আটকে ‘সুটি মোল্ড’ নামে এক প্রকার কালো বর্ণের ছত্রাক জন্মায়। ফলে আক্রান্ত অংশের সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। তাই এদের দমন করতেই হবে। তবে পোকার সংখ্যা কম হলে হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলা উত্তম। আক্রমণ ভয়বহ হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওষুধ ছিটানোর ১৫ দিনের মধ্য সবজি খাওয়া উচিত নয়। এজন্য পারতপক্ষে কীটনাশক ব্যবহার না করাই উচিত।

ফসল সংগ্রহঃ

চারা লাগানোর এক মাস পর লেটুস পাতা খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ওই সময় সম্পূর্ণ গাছ তোলাই উত্তম, তবুও বসতবাড়ির এক একটি গাছ থেকে প্রয়োজনীয় পাতা সংগ্রহ করে ব্যবহার করা যেতে পারে। শতাংশপ্রতি এর গড় ফলন ৪০ কেজি।

***
তথ্যসূত্র: নাহিদ বিন রফিক, টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস, আঞ্চলিক অফিস, বরিশাল
Photo: তবাড়ির আঙ্গিনায় লেটুস চাষ   শাকসবজি রান্না করতে গিয়ে আমরা এর পুষ্টি উপাদান নষ্ট করে ফেলি। তবে কোনো কোনো শাকসবজি রয়েছে সেগুলো কাঁচা খাওয়া সম্ভব। লেটুস এমনি একটি শাক, যা সালাদ হিসেবে টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ এসবের সঙ্গে ব্যবহার হয়। ফলে এর পুষ্টি থাকে অটুট। লেটুস বেশ পুষ্টিকর। মুখে রুচিও বাড়ায়। এর প্রতি ১০০ গ্রাম পাতায় ৯৯০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান। এ ছাড়া ভিটামিন-বি ০.২২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ১০ মিলিগ্রাম, শর্করা ২.৫ গ্রাম, আমিষ-২.১ গ্রাম, চর্বি ০.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম এবং লৌহ আছে ২৪ মিলিগ্রাম। এ সত্ত্বেও এ দেশে এর আবাদ খুবই সীমিত। অথচ প্রতিটি বসতবাড়ির আঙ্গিনায় লেটুস চাষের রয়েছে যথেষ্ট সুযোগ। এতে পারিবারিক চাহিদা পূরণ হবে। পাশাপাশি বিক্রি করে পাওয়া যাবে নগদ অর্থ।  চাষের সময়ঃ   শীতপ্রধান দেশে সারা বছর এর চাষ হলেও এ দেশে কেবল রবি মৌসুমে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় বীজ বোনা যেতে পারে।  জাতঃ   লেটুসের বিভিন্ন জাত রয়েছে। এসবের মধ্যে বিগ বোস্টন, হোয়াইট বোস্টন, প্যারিস হোয়াইট, গ্র্যান্ড ব্যাপিড, নিউইয়র্ক-৫১৫, ইম্পিরিয়াল-৫৪, সিম্পসন, কিং ক্রাউন, কুইন ক্রাউন, ডার্ক, গ্রিন, গ্রেটলেক উল্লেখযোগ্য।  চাষের নিয়মঃ   চাষের জন্য জমি ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। এসব জমিতে সরাসরি বীজ বোনা যায়। আবার বীজতলায় বপন করে উপযুক্ত বয়সের চারা (এক মাস বয়সের) মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। এ ড়্গেত্রে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব রাখতে হবে ৮ ইঞ্চি। এজন্য শতাংশপ্রতি বীজ দরকার ৪ গ্রাম করে। তবে বীজতলায় বীজ প্রয়োজন হয় ২০ গ্রাম। লেটুসের বীজ খুব ছোট। তাই বপনের সময় বীজের সঙ্গে মাটির কণা বা ছাই ব্যবহার করা উচিত।  সার প্রয়োগঃ   লেটুস চাষে শতাংশপ্রতি যে পরিমাণ সার প্রয়োজন তা হচ্ছে- গোবর ২০ কেজি খৈল ৮০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ ১০০ গ্রাম। এগুলোর মধ্যে গোবর চাষের প্রথম দিকে এবং শেষ চাষের সময় টিএসপি ও পটাশ সার মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হয়। তবে ইউরিয়াকে সমান দু’ভাবে ভাগ করে দু’কিস্তিতে (চারার বয়স ১০ দিন এবং বয়স ২০ দিন) উপরিপ্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।  পরিচর্যাঃ   আশানুরূপ ফলন পেতে জমিকে সর্বদাই আগাছামুক্ত রাখতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে সেচ দেয়া জরুরি। তদ্রূপ পানি জমে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে এর গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হয়। প্রয়োজনে চারা পাতলা করা বাঞ্ছনীয়। এতে একদিকে যেমন গাছ ঠিকভাবে বেড়ে উঠবে, পক্ষান্তরে উত্তোলিত সবজি ব্যবহার করা যাবে।  বালাই ব্যবস্থাপনাঃ  লেটুসের পাতায় কখনো কখনো ‘ছাতা’ রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে- গাছের পাতা নুইয়ে পড়া এবং পাতার অগ্রভাগ পুড়ে যাওয়া। এমন হলে আক্রান্ত গাছ অবশ্যই ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তবে বীজ ও মাটি শোধন করে এরোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। পোকার মধ্যে জাবপোকা ভয়ঙ্কর। এরা গাছের পাতার রস চুষে খেয়ে ফেলে। এ ছাড়া পোকার মলদ্বার থেকে এক ধরনের তরল পদার্থ বের হয়ে, যা পাতায় আটকে ‘সুটি মোল্ড’ নামে এক প্রকার কালো বর্ণের ছত্রাক জন্মায়। ফলে আক্রান্ত অংশের সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। তাই এদের দমন করতেই হবে। তবে পোকার সংখ্যা কম হলে হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলা উত্তম। আক্রমণ ভয়বহ হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওষুধ ছিটানোর ১৫ দিনের মধ্য সবজি খাওয়া উচিত নয়। এজন্য পারতপক্ষে কীটনাশক ব্যবহার না করাই উচিত।  ফসল সংগ্রহঃ   চারা লাগানোর এক মাস পর লেটুস পাতা খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ওই সময় সম্পূর্ণ গাছ তোলাই উত্তম, তবুও বসতবাড়ির এক একটি গাছ থেকে প্রয়োজনীয় পাতা সংগ্রহ করে ব্যবহার করা যেতে পারে। শতাংশপ্রতি এর গড় ফলন ৪০ কেজি।  *** তথ্যসূত্র: নাহিদ বিন রফিক, টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস, আঞ্চলিক অফিস, বরিশাল
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

1 comments: