আমাদেরদেশে চাহিদার তুলনায় দুধের উৎপাদনকম। ডেইরিফার্ম প্রতিষ্ঠা করে আপনিও পারেনএ খাত থেকে আয়করতে। বিস্তারিতজানাচ্ছেন আমিনুল ই শান্ত
ডেইরি ফার্মের জন্যজমি নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ।জমির অবস্থানের তারতম্যের কারণে দুধের উৎপাদনযেমন বাড়তে পারে, তেমনিকমতেও পারে। সেজন্য ডেইরি ফার্মের জমিহওয়া চাই খোলামেলা এবংমূল রাস্তা থেকে একটুদূরে। তাইবলে যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হলে চলবেনা। দশটিগাভির একটি খামারের জন্যকমপক্ষে এক বিঘা জায়গাপ্রয়োজন হবে। জমিনির্বাচনের পর আসে ঘরতৈরির পালা। ঘরদুভাবে তৈরি করা যায়, এক সারি অথবা দুইসারি।
ঘরের আকার নির্ভর করেমূলত গাভির সংখ্যার ওপর। দশটিগাভির জন্য এক সারিবিশিষ্টঘরের আকার হবে ৫০ফুট বাই ২০ ফুট। দুইসারিবিশিষ্ট ঘর করলে আকারহবে ৩০ ফুট বাই৪০ ফুট। উভয়ক্ষেত্রে ভূমি থেকে ছাদেরউচ্চতা কমপক্ষে ১২ ফুট হতেহবে। ঘরেরমেঝে কোনোভাবেই মসৃণ করা যাবেনা। মসৃণমেঝেতে গাভির দাঁড়ানো কিংবাচলাচলে সমস্যা হয়।তাই মেঝে হতে হবেঅমসৃণ এবং সামান্য ঢালু। পয়োনিষ্কাশনেরপর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।ঘরের এক পাশে দুধদোয়ানোর জন্য আলাদা জায়গারাখতে পারলে ভালো।সব মিলিয়ে দশটি গাভিরজন্য ঘর তৈরি করতেদেড় থেকে তিন লাখটাকা খরচ হবে।
গাভি রাখার পদ্ধতি
এক সারিবিশিস্ট ঘরে গাভিগুলো একসারিতে দাঁড়াবে। তাদেরসামনে খাবার দেওয়ার জায়গাএবং খামারির হাঁটার পথ থাকবে। গাভিরপেছনে থাকবে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা।
দুই সারিবিশিষ্ট ঘরে গাভি দুভাবেরাখা যায়। 'ফেসটু ফেস' পদ্ধতিতে গাভিগুলোসামনাসামনি দাঁড়াবে। তাদেরসামনে থাকবে খাবার দেওয়ারব্যবস্থা। দুইসারির মাঝখানে খামারির চলার পথ থাকবে। দুইসারির গাভির পেছনেই পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা করতে হবে।
'টেল টু টেল' পদ্ধতিতেগাভিরা পরস্পরের বিপরীত দিকে ফিরেদাঁড়াবে। এক্ষেত্রে দুই সারি গাভিরমাঝখানে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকবে। খাবারদেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে উভয় সারিরগাভির সম্মুখভাগে।
মূলধন
উদ্যোক্তারসুষ্ঠু পরিকল্পনা তৈরি করার পরপ্রয়োজন মূলধনের। মূলধনমূলত নির্ভর করে পরিকল্পনারওপর। অর্থযদি ব্যক্তিগতভাবে জোগান দেওয়া সম্ভবহয়, তবে ভালো।তা না হলে বিভিন্নসরকারি যেমন_সোনালী, জনতা, কৃষি ইত্যাদি সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশিবেসরকারি ব্যাংকগুলো ডেইরি ফার্মের ওপরসহজ শর্তে ঋণ দিয়েথাকে।
গাভি নির্বাচন
ডেইরিফার্ম প্রতিষ্ঠার জন্য গাভির জাতনির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ।উন্নত জাতের গাভি দুধবেশি দেয় বলে খামারিলাভবান হন। আমাদেরদেশে ভালো জাতের গাভিরমধ্যে রয়েছে হলস্টিন, ফ্রিজিয়ান, রেড সিন্ধি, রেড চিটাগাং, পাবনাব্রিড, শাহিওয়াল প্রভৃতি। বাছুরবড় হয়ে গেলে বিভিন্নডেইরি ফার্ম তাদের বিক্রিকরে দেয়। আপনারফার্মের জন্য সেখান থেকেগাভি সংগ্রহ করতে পারবেন। জাতভেদেগাভির দাম ওঠানামা করে। বিদেশিউন্নত জাতের গাভি হলস্টিন, ফ্রিজিয়ান, রেড সিন্ধি প্রতিটিরদাম ৩০ থেকে ৬০হাজার টাকার মধ্যে।দেশি জাতের গাভি রেডচিটাগাং, পাবনা ব্রিড, শাহিওয়ালপ্রতিটির দাম ২৫ থেকে৫০ হাজার টাকা।
পরিচর্যা
ফার্মেরভেতর সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ গাভির স্বাস্থ্যেরজন্য ভালো নয়।এর ফলে গাভির খুরারোগ, পেটে সমস্যা থেকে শুরুকরে ওলানে প্রদাহ পর্যন্তহতে পারে। গাভিরখাবারের পাত্রে নিচের দিকেছিদ্র রাখতে হবে যেনসেখানে পানি পড়লে বেরিয়েযেতে পারে। গোবরও প্রস্রাব নিয়মিত পানি দিয়েপরিষ্কার করতে হবে।এ ছাড়া পশু চিকিৎসকেরসঙ্গে পরামর্শ করে যথাসময়ে টিকারব্যবস্থা করতে হবে।১৫ দিন থেকে একমাস অন্তর চিকিৎসককে দিয়েখামার পরিদর্শন করালে গাভির স্বাস্থ্যগতসমস্যার ব্যাপারে শঙ্কামুক্ত থাকা যায়।গাভির পরিচর্যা, দুধ দোয়ানো, দুধবাজারে নেওয়া ইত্যাদি কাজেরজন্য দুজন কর্মচারী রাখতেহবে। গাভিদেরনিরাপত্তার জন্য রাতে খামারেএকজন কর্মচারী থাকতে হবে।
পরিমিতও সুষম খাবার খাওয়ালেগাভির দুধের উৎপাদন বাড়ে। সেজন্য গাভির খাবারের দিকেবিশেষ নজর দিতে হবে। যেঋতুতে যে ধরনের ঘাসপাওয়া যায়, গাভিকে খাওয়াতেহবে। এঘাসগুলো স্থানীয় বাজারে পাওয়া যায়। সেখানথেকে কিনে খাওয়াতে পারেন। বাড়তিজায়গা থাকলে নিজেই উন্নতজাতের ঘাসের চাষ করেওগাভিকে খাওয়াতে পারেন। এধরনের ঘাসের মধ্যে আছেসুবাবুল, সিরিশ, বট, দূর্বা, শামুক, পেসপেলাম প্রভৃতি। এরপাশাপাশি ধান, ভুট্টা, বরবটি, মুগ, মসুর, শর্ষে, কলাইগাছও গাভিকে খাওয়াতে পারেন। এগাছগুলো শুকিয়েও গাভিকে খাওয়ানো যায়।
গাভিরজন্য দানাজাতীয় খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখাবারের মধ্যে আছে গম, চালের খুদ, খোল (শর্ষে, বাদাম, সয়াবিন, তিল ইত্যাদি থেকেতেল বের করার পরযে উচ্ছিষ্ট থাকে), ভূষি এবংবিভিন্ন প্রকার ডালের গুঁড়া। এসবখাবার স্থানীয় বাজারে পাওয়া যাবে। এসবখাবারের পাশাপাশি গাভিকে প্রতিদিন প্রচুরপরিমাণে পানি পান করাতেহবে।
বাজারজাতকরণ
ডেইরিফার্ম প্রতিষ্ঠা করার আগেই দুধবাজারজাতকরণের স্বচ্ছ পরিকল্পনা করতেহবে। আপনারখামারে দুধ উৎপাদনের পরিমাণযদি কম হয়, সেক্ষেত্রে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেপারেন। তবেদুধ উৎপাদনের পরিমাণ বেশি হলেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটায় সরবরাহ করতে পারেন। এছাড়া বেসরকারি দুগ্ধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানযেমন আড়ং, প্রাণ, আরডিইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতেপারেন।
আয়-রোজগার
ডেইরিফার্মের আয় মূলত উৎপাদিতদুধ ও বাছুর থেকেআসে। বয়স্কগাভি বিক্রি করেও আয়করা যায়। একটিগাভির দুধ দেওয়ার পরিমাণছয় মাস পর থেকেআস্তে আস্তে কমতে থাকেএবং আট মাস পর্যন্তদুধ দোহন সম্ভব হয়। ১০লিটার দুধ দিচ্ছে এমনএকটি গাভি থেকে প্রতিমাসে গড়ে ছয় থেকেনয় হাজার টাকা আয়করা যায়। টাঙ্গাইলেরসখীপুর উপজেলার খামারচালা এলাকায় সাত বছরধরে ডেইরি ফার্মের ব্যবসাকরছেন মুসা মিয়া।তিনি বলেন, 'আমি একটিগাভি নিয়ে ফার্মের উদ্যোগগ্রহণ করি। প্রথমদিকে নানা সমস্যা থাকলেওকয়েক বছরের মধ্যেই লাভবানহই। বর্তমানেআমার ১১টি গাভি আছে, যা থেকে প্রতি মাসেখরচ বাদে নূ্যনতম ৪০হাজার টাকা আয় থাকে।' টাঙ্গাইলেরসখীপুর উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মিজানুররহমান বলেন, 'আনুমানিক পাঁচটিগাভির একটি খামারে দুধও বাছুর থেকে বার্ষিকতিন থেকে পাঁচ লাখটাকা আয় হতে পারে।'
প্রশিক্ষণ
ডেইরিফার্ম প্রতিষ্ঠা করার আগে প্রশিক্ষণনিতে পারলে ভালো।দেশের প্রতিটি জেলায় বাংলাদেশ সরকারেরযুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। সেখানেগবাদিপশু পালনের ওপর আড়াইমাসের আবাসিক কোর্স চালুআছে। এখানেকোনো কোর্স ফি নেই। চাইলেআপনিও এ প্রশিক্ষণ নিতেপারেন। এজন্য আপনাকে উপজেলা প্রাণিসম্পদদপ্তরে কিংবা সরাসরি যুবপ্রশিক্ষণ একাডেমীতে যোগাযোগ করতে হবে
অনেক তথ্যমুলক পোষ্ট । এই পোষ্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । আরো তথ্যমুলক ও বিস্তারিত লিখলে কৃতজ্ঞ হব ।
ReplyDeleteআমার পেইজে আরো অনেক তথ্যমুলক পোস্ট আছে। এটা এখনও শেষ হয় নি। তাহলে আপনাকে লিংক দেওয়ার আশা রাখছি।
ReplyDeleteআপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনার পোস্টের জন্য। আমি আমার বাড়িতে একটি দুগ্ধ খামার দিয়েছি। তবে আমাদের এলাকায় উন্নত জাতের গাভী না পাওয়ায় দেশী জাতের গাভী দিয়ে শুরু করেছি। আমার বাড়ি হবিগঞ্জ জেলায়। আমাদের আশে-পাশে কোথা থেকে আমি উন্নত জাতের গাভী সংগ্রহ করতে পারব জনালে খুব ভাল হয়। এবং ঐ প্রজাতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিলে আমি উপকৃত হব।
ReplyDeleteবি: দ্র: যদি ব্রাহমি জাতের গরুর কোন তথ্য আপনার জানা থাকে তবে উল্লেখ করবেন। ধন্যবাদ
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা থেকে কিভাবে মিল্ক ভিটাকে দিধ সাপ্লাই করবো ??
ReplyDeleteআপনি মিল্কভিটার সাথে যোগাযোগ করুন। ফোন:
ReplyDelete8870444-45