নতুন প্রযুক্তিতে বোরো ধান চাষে ৫০-৬০ শতাংশ সেচ সাশ্রয়

বিকাশ কীর্ত্তনিয়া, বাকৃবি
আউশ, আমন ও বোরো—সব মৌসুমের ধান চাষেই সেচ অপরিহার্য। তবে আউশ ও আমন মৌসুমে কমবেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় এসব মৌসুমে বোরো মৌসুম থেকে অপেক্ষাকৃত কম সেচের দরকার হয়। বোরো মৌসুমে একেবারেই কোনো বৃষ্টিপাত হয় না বলে এ মৌসুমে ধানক্ষেতে সেচের চাহিদা বেশি থাকে। তবে এই সেচই এখন ধানচাষের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান সমস্যা। ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং পানির অন্যান্য উেসর অভাব দিন দিন বাড়ায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে সেচকাজে ব্যবহার করা ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ও নিয়মিত বিদ্যুতের লোডশেডিং উদ্ভূত সেচ সমস্যার সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে এ সমস্যা সমাধানে আশার বাণী শুনিয়েছেন বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী এবং কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। ড. মশিউর রহমান এবং তার পিএইচডি ছাত্র মো. মেহেদী মাসুদ এক গবেষণায় প্রমাণ করেন, কম সেচ দিয়েও বোরো মৌসুমে ধানের উচ্চ ফলন পাওয়া যায়। এতে ৫০-৬০ শতাংশ সেচ সাশ্রয় হয় এবং হেক্টরপ্রতি ৭ হাজার টাকা উত্পাদন খরচ কম হয়।
ড. মশিউর রহমান বলেন, বোরো ধান মোট ধান উত্পাদনের ৬০ ভাগ জোগান দেয়। তাছাড়া এদেশে জলাবায়ুগত কারণে অন্য মৌসুম অপেক্ষা বোরো মৌসুমে ধানের বেশি ফলন হওয়ায় কৃষকরা বোরো ধান চাষে বেশি আগ্রহী। তাই বোরো চাষে কম সেচের প্রযুক্তি নিয়ে আমার এই গবেষণা। বোরো ধান চাষ অব্যাহত রাখতে হলে অবশ্যই সেচসাশ্রয়ী বোরো চাষের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ম্যাজিক পাইপ ব্যবহারের মাধ্যমে এডব্লিউডি পদ্ধতিতে বোরো চাষের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে মাত্র ২০-৩০ ভাগ সেচের পানি সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে। অধুনা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত শুকনো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষের নতুন প্রযুক্তিতে বোরো ধানের ফলনও বেশি হয়, একইসাথে ৫০-৬০ ভাগ সেচ সাশ্রয় হয়।
শুকনো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে ড. মশিউর বলেন, নতুন উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে আমন ধান কাটার পরে জোঁ অবস্থায় চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করতে হয়, কাদা তৈরি করার দরকার হয় না। এরপর শুকনো জমিতেই ২৫ সেমি থেকে ১৫ সেমি দূরত্বে ৪-৫ সেমি গভীরতায় প্রতি গর্তে ৫-৬টি বীজ বপন করতে হয়। বপনের আগে বীজকে ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর ৩০ ঘণ্টা জাগ দিয়ে মুখফাটা অবস্থা তৈরি করতে হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে যতটুকু সার প্রয়োগ করতে হয়, এ পদ্ধতিতে ততটুকু সারই যথেষ্ট। গোবর সার, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিংক সার প্রচলিত নিয়মের মতোই জমি তৈরির সময় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। ইউরিয়া সার চার কিস্তিতে, যথা—বপনের ২০, ৪০, ৬০ ও ৮০ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়। আগাছা এ পদ্ধতির প্রধান সমস্যা, তবে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সহজেই আগাছা দমন করা যায়। বপনের ৩ দিনের মধ্যে বিভিন্ন আগাছানাশক, যেমন—পেন্ডিমিথালিন, প্রিটিলাক্লোর অথবা পাইরাজোসালফিউরান ইথাইল ইত্যাদি প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যায়। পরে ১ বা ২ বার নিড়ানি দেয়ার দরকার হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে জমিভেদে ১৮-৪০টি সেচ লাগে, কিন্তু নতুন এ পদ্ধতিতে মাত্র ৬-১২টি সেচ প্রয়োজন হয়। তবে থোড় আসার সময় ৮-১০ দিন জমিতে ২-৪ সেমি পানি আটকে রাখতে হয়।
ড. মশিউর বলেন, আমাদের দেশের কৃষকদের যদি উদ্ভাবিত এই নতুন প্রযুক্তিতে বোরো মৌসুমের ধান চাষে উত্সাহিত ও অভ্যস্ত করা সম্ভব হয়, তাহলে একদিকে কৃষকের যেমন আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে, তেমনি দেশের বোরো ধানের উত্পাদন তথা ধানের মোট উত্পাদনও বাড়বে। তাছাড়া এতে আমাদের দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলেও আশা করা যায়।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment