হাইড্রোপনিকপদ্ধতিতে চাষাবাদ পদ্ধতি ও স্থাপনানির্মাণ কৌশলঃ
হাইড্রোপনিক(Hydroponic) একটি অত্যাধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। অতিলাভজনক ফসলের ক্ষেত্রে এইহাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে পানিতেগাছের প্রয়োজনীয় খাবার (Nutrient) সরবরাহ করে ফসলউৎপাদন করা হয়।জনবহুল দেশে যেখানে স্বাভাবিকচাষের জমি কম কিংবানাই সেখানে ঘরের ছাদেবা আঙ্গিনায়, পলি টানেল, নেটহাউজে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি ও ফলউৎপাদন সম্ভব। উন্নতবিশ্বে যেমন ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, তাইওয়ান, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া ইত্যাদি দেশসমূহে বাণিজ্যিকভাবে Hydroponic culture এর মাধ্যমে সবজি ও ফলউৎপাদন করা হচ্ছে।এ পদ্ধতিতে সারা বছরই সবজিও ফল উৎপাদন করাসম্ভব এবং উৎপাদিত সবজিও ফল এ কোনকীটনাশক ব্যবহার করা হয় নাবিধায় বিধায় এ সবজিও ফল নিরাপদ এবংঅধিক বাজারমূল্য পাওয়া যায়।বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্তিটিউট Hydroponic পদ্ধতিতে মাটিবিহীন বড় ষ্টীলের বাপ্লাস্টিকের ট্রেতে পানির মধ্যেগাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদানসমূহ সরবরাহ করে সাফল্যজনকভাবেকাপ্সিকাম, লেটুস, টমেটো, শসা, ক্ষীরা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, এবং strawberry উৎপাদন করা সম্ভবহয়েছে।
সাধারনত২ উপায়ে হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতেচাষাবাদ করা যায়।
২। সঞ্চালনবিহীনপদ্ধতি
সঞ্চালন পদ্ধতিঃ
এ পদ্ধতিতে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যউপাদানসমূহ যথাযথ মাত্রায় মিশ্রিতকরে একটি ট্যাংকিতেনেয়া হয়এবং পাম্পের পাইপ এর মাধ্যমেট্রেতে পুষ্টি দ্রবণ (Nutrient Solution) সঞ্চালন করেফসল উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিনঅন্ততঃপক্ষে ৭ থেকে ৮ঘণ্টা পাম্পের সাহায্যে এই সঞ্চালন প্রক্রিয়াচালু রাখা দরকার।এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে প্রথম বছর ট্রে, পাম্প এবং পাইপের আনুসাঙ্গিকখরচ একটু বেশী হলেওপরবর্তী বছর থেকে শুধুমাত্ররাসায়নিক খাদ্য উপাদানের খরচপ্রয়োজন। ফলে২য় বছর থেকে খরচঅনেকাংশে কমে যাবে।
সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিতে একটি ট্রেতে গাছেরপ্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহ পরিমিতমাত্রায় সরবরাহ করে সরাসরিফসল চাষ করা হয়। এইপদ্ধতিতে খাদ্য উপাদান সরবরাহেরজন্য কোন পাম্প বাপানি সঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না।এক্ষেত্রে খাদ্য উপাদান মিশ্রিতদ্রবণ ও তার উপরঅবস্থিত কর্কশীটের উপরে মাঝে ২-৩ ইঞ্চি পরিমানজায়গা ফাকা রাখতে হবে, এবং কর্কশীটের উপরে ৪-৫টি ছোট ছোট ছিদ্ররাখতে হবে যাতে সহজেইবাতাস চলাচল করতে পারেএবং গাছ তার প্রয়োজনীয়অক্সিজেন কর্কশীটের ফাঁকা জায়গা থেকেসংগ্রহ করতে পারে।ফসলের প্রকারভেদে সাধারণতঃ ২-৩ বারএই খাদ্য উপাদান ট্রেতেযোগ করতে হয়।আমাদের দেশে সহজেই সাধারনমানুষ এই পদ্ধতি অনুসরণকরে প্লাস্টিক বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল, ইত্যাদি ব্যবহারকরে বাড়ির ছাদ, বারান্দা, এবং খোলা জায়গায় সঞ্চালনবিহীনপদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করতেপারে। এতেখরচ অনেক কম হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিরসুবিধাঃ
- এ পদ্ধতিতে আবাদিজমির প্রয়োজন হয় না।
- পদ্ধতিটি মাটিবিহীন চাষ পদ্ধতি হওয়ায়মাটিবাহিত রোগ ও কৃমিজনিতরোগ হয় না।
- কিটপতঙ্গের আক্রমন কম হওয়ারকারণে এই পদ্ধতিতে কীটনাশকমুক্তসবজি উৎপাদন করা যায়।
- এই পদ্ধতিতে ছোটএবং বড় পরিসরে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিচ্ছন্নভাবে ফসলউৎপাদন করা যায়।
- এটি হোম-ফারমিংএর জন্য একটি আদর্শপ্রযুক্তি বিধায় অধিক লাভজনক, অর্থকরী ও মানসম্পন্ন ফসলউৎপাদন করা সম্ভব।
যে সকল ফসল এপদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায় সেগুলোহলঃ
ক্রমিক নং | ফসলের ধরণ | ফসলের নাম |
১ | পাতা জাতীয় সবজি | লেটুস, গিমা কলমি, বিলাতি ধনিয়া, বাঁধাকপি |
২ | ফল জাতীয় সবজি | টমেটো, বেগুন, কাপ্সিকাম, ফুলকপি, শসা, মেলন, স্কোয়াস |
৩ | ফল | Strawberry |
৪ | ফুল | এন্থরিয়াম, গাঁদা, গোলাপ, অর্কিড, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা |
সঞ্চালন পদ্ধতি(Circulating System):
এই পদ্ধতিতে গ্যালভানাইজিং লোহার তৈরির ট্রেকে একটি stand এর উপর স্থাপনকরা হয়, এবং ট্রেকে প্লাস্টিক পাইপের সাহায্যে একটিtank এর সাথে যুক্ত করাহয়, এই tank থেকে পাম্পের সাহায্যেরাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত জলীয়খাদ্য দ্রবণ ট্রে তেসঞ্চালন করা হয়।
গ্যালভানাইজিংলোহার ট্রের উপর কর্কসীটের মাঝে গাছের প্রয়োজনীয়দূরত্ব অনুসারে যেমন – লেটুস ২০×২০ সেঃমিঃ টমেটো৫০×৪০ সেঃমিঃ এবংstrawberry ৩০×৩০ সেঃমিঃ দূরত্বেগর্ত করতে হয়।উপযুক্ত বয়সের চারা স্পঞ্জসহঐ গর্তে স্থাপন করতেহয়। চারারোপণের পর ট্যাঙ্ক থেকেট্রের মধ্যে জলীয় দ্রবণপাম্পের সাহায্যে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ঘণ্টা সঞ্চলিন করতে হয়।এর মাধ্যমে গাছের অক্সিজেন সরবরাহবৃদ্ধি করা হয়।ট্রেতে কমপক্ষে ৬-৮ সেঃমিঃপানি সবসময় রাখতে হবে। সাধারণতঃপ্রতি ১২-১৫ দিনঅন্তর জলীয় দ্রবণ ট্রেতেযোগ করতে হয়।এই পদ্ধতিতে সঞ্জি উৎপাদনেPH এবংEC মাত্রা ফসলের চাহিদার মধ্যেরাখতে হয়। সাধারনভাবেহাইড্রোপনিকসপদ্ধতিতে উৎপাদনের জন্য PH ৫.৮ – ৬.৫ এর মধ্যেরাখতে হয়। যদিPH এর মাত্রা ৭.০এর উপরে হয় তবেআয়রন, ম্যাংগানিজ, মলিবডেনামসহ অন্যান্য মাইক্রো নিউট্রিইয়েন্ট অভাব পরিলক্ষিত হয়।এক্ষেত্রে Hydrocloric Acid (HCL), অথবা ফসফরিক এসিড বাHNO3 দিয়ে PH কে কাঙ্খিত মাত্রায়রাখতে হবে।আবারPHযদি ৫.৮ এরনিচে নেমে যায় তবেNaOH অথবা KOH দিয়ে PH নিয়ন্ত্রন করতে হবে।EC এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারিযে জলীয় দ্রবনে খাদ্যউপাদানের উপস্থিতির সাধারন মাত্রা EC ১.৫ – ২.৫ds/m এর মধ্যে রাখতে হবে।EC এরমাত্রা যদি ২.৫ds/m এর উপরে চলে যায়সে ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি যোগ করতেহবে। EC যদি১.৫ ds/m এর নিচেচলে যায় তবে Nutrient solution দ্রবণ যোগকরে EC এর মাত্রা ১.৫ এর উপররাখতে হবে। প্রতিদিনসকাল ও বিকালে PH ওEC মিটারের সাহায্যে পরীক্ষা করে PH এবং EC সমন্বয়(Adjust ) করতে হবে।
সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিতে ট্রে, প্লাস্টিকের বালতি, ব্যবহার না করা বোতলইত্যাদি ব্যবহার করে সবজি, ফল, ফুল উৎপাদন করা যেতেপারে। ভালভাবে পরিষ্কার করা বালতি, বোতল, কিংবা ট্রেতে উৎপাদিত চারাএকই পদ্ধতিতে রোপণ করতে হবে। চারারোপণের পূর্বে বোতল জলীয়দ্রবণ দ্বারা এমনভাবে পূর্ণকরতে হবে যাতে কর্কসীটও জলীয় দ্রবনের মাঝে৫-৮ সেঃমিঃ জায়গাফাঁকা থাকে। তবেবালতি বা বোতলে চারালাগালে সে ক্ষেত্রে বায়ুচলাচলের জন্য অতিরিক্ত ৩-৪ টি গর্তরাখা দরকার। এইপদ্ধতিতে কোন মোটর, পাম্প, বা পাইপ লাগে না। ফলেসহজেই আগ্রহীরা বাড়ির আশেপাশের খোলাস্থানে যেমনঃ বারান্দা, বাড়িরছাদ ইত্যাদি স্থানে এ পদ্ধতিব্যবহার করা যেতে পারে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিরব্যবস্থাপনাঃ
হাইড্রোপনিকপদ্ধতির সাফল্য নির্ভর করেএর উপযুক্ত এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনারউপর। সাফল্যজনকভাবেহাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনেরজন্য নিম্নেরবিষয়গুলির উপর বিশেষভাবে নিজররাখতে হবে। বিষয়গুলিহলঃ
- PH এবং EC এর মাত্রাঃসাধারণত PH এর মাত্রা ৫.৮-৬.৫এবং EC এর মাত্রা ১.৫-২.৫ds/m এর মধ্যে রাখতে হবে। উল্লেখিতমাত্রার বাইরে চলে গেলেগাছের শিকড় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থহবে। মনেরাখতে হবে, আকস্মিকভাবে জলীয়খাদ্য দ্রবনের PH এবং EC পরিবর্তন করাযাবে না।
- গাছের খাদ্য উপাদানেরপ্রয়োজনীয়তা, স্বল্পতা, কিংবা আধিক্য গাছেরস্বাস্থ্য ও পাতার রঙদেখে বুঝা যায়।খাদ্য উপাদানের লক্ষনদেখে বুঝা এবং প্রয়োজনঅনুসারে তা যোগ করেঅভাব দূর করতে হবে।এজন্য প্রতিটি উপাদানের অভাব জনিত লক্ষনসম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতেহবে।
- দ্রবনের আদর্শ তাপমাত্রা রক্ষণাবেক্ষণকরতে হবে।সাধারণতদ্রবনের তাপমাত্রা ২৫-৩০০ C এরমধ্যে হওয়া দরকার।যদি দ্রবনের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তবেশ্বসনের হার বেড়ে যায়ফলে অক্সিজেন এর চাহিদাও দারুনভাবেবাড়ে। ফলেদ্রবণের অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। সাধারণতদুপুরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় কাজেইএ সময় তাপমাত্রা কমানোরপ্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
- জলীয়খাদ্য দ্রবণে অতিরিক্ত অক্সিজেনসরবরাহের ব্যবস্থা করতে হয়।কারণ অক্সিজেন এর অভাবে গাছেরশিকড় নষ্ট হয়ে যায়ফলে ফলন মারাত্মকভাবে কমেযায়।
- চাষের স্থানে পর্যাপ্তআলোর সুব্যবস্থা করতে হবে এবংরোগমুক্ত চারা ব্যবহার করতেহবে। কোনরোগাক্রান্ত গাছ দেখা গেলেসাথে সাথে তা তুলেফেলতে হবে।
- চাষকৃত ফসলে বিভিন্নপোকা-মাকড় আক্রমন দেখাদিতে পারে। এদেরমধ্যে এফিড, লিফ মাইনার, থ্রিপস এবং মাকড় অন্যতম। প্রতিদিনেরতদারকির মাধ্যমে এদের দমনের ব্যবস্থানিতে হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিরসীমাবদ্ধতাঃ
- দ্রবণ প্রস্তুতি, দ্রবণেরঅম্লত্ত ও ক্ষারত্ব Electric Conductivity (EC), বিভিন্ন খাদ্যোপাদানের অভাবজনিত লক্ষণসমূহ সনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহনের জন্য দক্ষতা ওঅভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
- এ পদ্ধতির চাষেকখনও নেটহাউজ বা গ্লাসহাউজের প্রয়োজনহয় বিধায় প্রাথমিক খরচকিছুটা বেশী হয়। এমনকিনেটহাউজ বা গ্লাসহাউজের ভিতরেরতাপমাত্রা বেশী হওয়ার কারণেফলন কমে যেতে পারে।
- সব ধরণের ফসলএ পদ্ধতিতে চাষ করা যায়না এবং এ পদ্ধতিরচাষে কারিগরি জ্ঞান, দক্ষতা, ওঅভিজ্ঞতা বিশেষ প্রয়োজন।
স্থাপনা নির্মাণকৌশলঃ
হাইড্রোপনিকপদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনেরস্থাপনা একটিগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেথাকে। সাধারণতস্থাপনার মধ্যে গ্রীন হাউজ, প্লাস্টিক হাইজ, ফিনাইল হাউজএই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়।গ্রীন হাউজের মাধ্যমে আমরাসারা বছর যে কোনসময় উৎপাদনের করতে পারি।গ্রীন হাউজ ছাড়া আমরাপ্লাস্টিক হাউজ অথবা ভিনাইলহাউজের চাষাবাদ করতে পারি।স্বল্প পরিসরে আমরা বাসারছাদে, বারান্দায়, অথবা অন্যান্য খোলাজায়গায় এই পদ্ধতিতে চাষাবাদকরা যায়। তবেগ্রীন হাউজ, গ্লাস হাউজেখরচ তুলনামূলক বেশী। তবেউৎপাদিত ফসলের গুণগতমান মাঠফসলের তুলনায় অনেক ভালো।
হাইড্রোপনিকপদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের জন্যষ্টীলের ট্রে, প্লাস্টিকের বালতি, প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি ব্যবহারকরা যায়। তবেকোন পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হবেতার উপর নির্ভর করেস্থাপনা তৈরি করতে হয়। সঞ্চালনও সঞ্চালনবিহীন উভয় পদ্ধতিতে ষ্টীলেরট্রে ব্যবহার করা যায়।ষ্টীলের ট্রে ব্যবহারের পূর্বেট্রে এর মাঝে সাদারঙ দিয়ে প্রলেপ দিলেভালো হয়। ফলেরাসায়নিক দ্রবণ সরাসরি ধাতবপদার্থের কাছে আনতে পারেনা। কোনঅবস্থাতেই মরিচা পড়া ষ্টীলেরট্রে ব্যবহার করা যাবে না।
একটি কাঠের অথবা লোহারবেঞ্চের উপর ট্রে স্থাপনকরা যায়। অনেকসময় কাঠের বেঞ্চের উপরতাক করে ২-৩টি ট্রে বসানো যেতেপারে। এক্ষেত্রেসর্বনিম্নে তাকের গাছের আকারছোট হবে অর্থাৎ যে সমস্ত গাছযেমনstrawberry, লেটুস, ক্যাপ্সিকাম ইত্যাদিগাছ নিচে ও মাঝেরতাকে এবং উপরের তাকেশসা, টমেটো ইত্যাদি গাছলাগানো যেতে পারে।এক্ষেত্রেvertical চাষাবাদের জন্য অল্প জায়গায়অধিক ফসল পাওয়া যাবে। সাধারনতNon-circulating এবং circulating পদ্ধতিতে এই ভাবে ট্রেস্থাপন করে ফসল ফলানোসম্ভব।
ষ্টীলেরট্রে সাধারনত ১৮-২৪ গেজিগ্যালভানাইজিং সীট দ্বারা ষ্টীলেরত্রে তৈরি করতে হয়। ট্রেসাধারনত দৈর্ঘ্য ৩ মিঃ ওপ্রস্থ ৯০ সেমিঃ হতেহবে। সঞ্চালনপদ্ধতির জন্য কোন প্রকারপাত ট্রের মাঝে ব্যবহারকরতে হয় না।কিন্তু সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতির জন্য ট্রের উপরথেকে ৫ সেমিঃ বাদরেখে লোহার পাতি স্থাপনকরতে হয়। এইপাতের উপর কর্কসীট থাকবেএবং জলীয় দ্রবণ এইদণ্ডের উপর স্থাপিত কর্কসীটের৫ সেমিঃ নিচে থাকবে। ট্রেকে একটি লোহার অথবাকাঠের ফ্রেমের উপর বসাতে হবে।
সঞ্চালন পদ্ধতিতেঃ
এই পদ্ধতিতে ট্রে টিকে প্লাস্টিক/GT পাইপের মাধ্যমে একটি ট্যাঙ্ক এরসাথে যুক্ত করতে হয়। ট্যাঙ্কথেকে পাম্পের মাধ্যমে খাদ্য উপাদান সমেতদ্রবণ দিনে অন্ততপক্ষে ৮ঘণ্টা ট্রে তে সঞ্চালনকরতে হয়।
সঞ্ছালনবিহীন পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিতে ফসল ফলানোর জন্যকোন বৈদ্যুতিক পাম্প বা পানিরট্যাঙ্ক প্রয়োজন পড়ে না।
প্লাস্টিকের বালতি/প্লাস্টিকেরবোতল
সাধারনত১০ লিটার সাইজের প্লাস্টিকেরবালতি এই পদ্ধতিতে ব্যবহারকরা হয়। তবেবড় আকারের বালতিতে একাধিকচারা রোপণ করা যেতেপারে। অনেকসময় ৫ লি/২লি এর ব্যবহার করাতেলের অথবা পানির বোতলএ কাজে ব্যবহার করাযেতে পারে। প্লাস্টিকেরবোতলের ক্ষেত্রে বোতলের উপরের দিকেবায়ু চলাচলের সুবিধার জন্য ৪-৫টি ছোট ছোট গর্তকরে দিতে হবে।বোতলটিকে খবরের কাগজ দিয়েমুড়ে দিতে হবে।তা না হলে শিকড়েরবৃদ্ধি ব্যহত হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতেচারাউৎপাদনকলাকৌশলঃ
ভালো বীজ ও সাস্থ্যবান চারাহাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনের জন্যখুবই গুরুত্বপূর্ণ। এপদ্ধতিতে উদ্যানতাত্তিক ফসল উৎপাদনের জন্যচারা হাইড্রোপনিক মিডিয়াতে উৎপাদন করতে হবে, মাটিতে নয়। এক্ষেত্রেমূল বিষয়গুলো হল, মানসম্মত বীজও জীবাণুমুক্ত উৎপাদন মিডিয়া ব্যবহারযাতে বীজ ও মাটিবাহিতবিভিন্ন রোগ – বালাই থেকেফসলকেরক্ষা করা যায়, সঠিকমাত্রায় পানি, তাপমাত্রা, ওআলো সরবরাহ করা।হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের জন্যপ্রধানত স্পঞ্জ ব্যবহারকরা হয়ে থাকে।পরবর্তীতে চারা গজানোর ৫-৭ দিন পরতা স্পঞ্জ এ প্রতিস্থাপনকরতে হবে।
বীজ অঙ্কুরোদগম ওচারাউৎপাদনঃ
যে সকল সবজির বীজঅতি ছোট যেমন লেটুস, ফুলকপি, ইত্যাদি গুলোকে স্পঞ্জে বপনেরপূর্বে অঙ্কুরোদগমের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলোর১ টি অনুসরণ করাহয়ঃ
১) পেট্রিডিসে রেটিং পেপার দিয়েতাতে বীজ ভিজিয়ে রাখা।
২) ছোট ট্রেতে বালিনিয়ে তাতে বীজ বসানেরপর ভিজিয়ে দেয়া।
৩) নারিকেলের ছোবরা ভালোমত গুঁড়াও পরিষ্কার করার পর তাছোট ট্রেতে নিয়ে তাতেবীজ বসানোর পর ভিজিয়েদেয়া।
অঙ্কুরোদগমেরজন্য সেগুলোকে এমন জায়গায় রাখতেহবে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পায়।মাঝে মাঝে প্রয়োজনীয় পানিদিতে হবে। বীজবপনের পূর্বে ১০% ক্যালসিয়ামঅথবা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দিয়ে বীজ শোধনকরে নিতে হবে।প্রথমত বড় স্পঞ্জকে ৩০সে.মি × ৩০ সে.মি সাইজে কেটেনিতে হয়। এইস্পঞ্জকে ২.৫ সে.মি দৈর্ঘ্য এবং২.৫ সে.মিপ্রস্থ বর্গাকারে, ডট ডট করেকেটে নিতে হয় এবংএর মাঝে ১ সে.মি করে কেটেপ্রতিটি বর্গাকারে স্পঞ্জ এর মধ্যে১ টি করে বীজবপন অথবা চারা রোপণকরতে হয়। বীজবপনের পর স্পঞ্জকে নিজআকারের চাইতে বড় ১টি ট্রেতে রাখতে হবে। এইট্রের মধ্যে ৫-৮সে.মি পানি রাখতেহবে যাতে স্পঞ্জ টিপানিতে সহজে ভাসতে পারে। চারাগজানোর ২-৩ দিনপর প্রাথমিক অবস্থায় ৫-১০ মি.লি খাদ্যপাদানে সম্বলিতদ্রবন ১ বার এবংচারা গজানোর ১০-১২দিন পর থেকে চারারোপণের পূর্ব পর্যন্ত প্রতিদিন১০-১২ মি.লিদ্রবন যোগ করতে হয়। নির্দিষ্টবয়সের চারা ফোমের ব্লকসহআলাদা করে কেটে মুলট্রেতে স্থানান্তর করতে হবে।
রাসায়নিক দ্রবেরপরিমাণওতৈরিরপদ্ধতিঃ
জলীয় খাদ্য দ্রবন তৈরিতেপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রবের পরিমাণ ওপ্রস্তুত প্রণালী পদ্ধতি নিচে বর্ণনাকরা হলঃ
সারণী১। পানিতেপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য সমূহের পরিমাণ(প্রতি ১০০ লিটার পানিরজন্য)
ক্রমিক নং | রাসায়নিক উপাদান | পরিমান |
১ | পটাশিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেট (KH2PO4) | ২৭.০ |
২ | পটাশিয়াম নাইট্রেট (KNO3) | ৫৮.০ |
৩ | ক্যালসিয়াম নাইট্রেট Ca(NO3)2.4H2O | ১০০.০ |
৪ | ম্যাগনেসিয়াম সালফেট (MgSO4.7H2O) | ৫১.০ |
৫ | ইডিটিএ আয়রন (EDTA Iron) | ৮.০ |
৬ | ম্যাঙ্গানিজ সালফেট (MnSO4.4H2O) | ০.৬১ |
৭ | বরিক এসিড (H3BO3) | ০.১৮ |
৮ | কপার সালফেট (CuSO4.5H2O) | ০.০৪ |
৯ | অ্যামোনিয়াম মলিবটেড (NH4)6MO7O24.4H2O | ০.০৩৮ |
১০ | জিঙ্ক সালফেট (ZnSO4.7H2O) | ০.০৪৪ |
মিশ্রণ প্রক্রিয়া
জলীয় খাদ্য দ্রবণ তৈরিরসময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনকরতে হবে। প্রথমেStock Solution তৈরি করতে হবে।এই Stock তৈরি করার সময়ক্যালসিয়াম নাইট্রেট এবং EDTA Iron কে পরিমাপ করে১ লিটার পানিতে দ্রবীভূতকরে দ্রবণকে StockSolution “A” নামে নামকরন করতেহবে। অবশিষ্টরাসায়নিক দ্রব্য গুলোকে পরিমাপমত এক সাথে ১লিটার পানিতে দ্রবীভূত করে StockSolution “B” নামে নামকরণকরতে হবে। ১০০লিটার জলীয় দ্রবণ তৈরিরক্ষেত্রে প্রথমে ১০০ লিটারপানি ট্যাঙ্কে নিতে হবে।তারপর StockSolution “A” থেকে ১ লিটারদ্রবণ ট্যাংক এর পানিতেঢালতে হবে, এবং একটিঅধাতব দণ্ডের সাহায্যে নাড়াচাড়া করে ভালো ভাবেমিশাতে হবে। এরপরStockSolution “B” থেকে পূর্বের মত ১ লিটারট্যাঙ্কে নিতে হবে এবংপূর্বের ন্যায় অধাতব দণ্ডেরসাহায্যে পানিতেStockSolution গুলো সমানভাবে মিশাতেহবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতেবিভিন্নফসলেরচারাবয়সওPH মানঃ
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন ফসলের চারা রোপণের বয়স ও PH মাত্রা বিভিন্ন হয়ে থাকে।নিচের সারণী ২ তে তা উল্লেখ করা হলঃফসলের নাম | উপযুক্ত চারার বয়স | PH মান |
টমেটো | ৩-৪ সপ্তাহ (২-৩ পাতা অবস্থায়) | ৫.৫-৬.৫ |
লেটুঁস | ২-৩ সপ্তাহ | ৬.০-৬.৫ |
ক্যাপ্সিকাম/মরিচ | ৪-৫ সপ্তাহ | ৬.০-৬.৫ |
Strawberry | ২-৩ সপ্তাহ (স্টোলন কাটিং) | ৫.৫-৬.৫ |
শসা/খিরা | ২-৩ সপ্তাহ | ৫.৮-৬.০ |
বাধা কপি/ফুলকপি | ৪-৫ সপ্তাহ | ৬.৫-৭.৫ |
যদিPH মাত্রা কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে বেশী হয়তবে হাইড্রোক্লোরিক এসিড বা নাইট্রিকএসিড যোগ করে PH কমাতেহবে।আবারযদি দ্রবনের PH মাত্রাকমে যায় তবে সোডিয়ামহাইড্রোক্সাইড বা পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইডযোগ করতে হবে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্ট এর যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মশালা হতে প্রাপ্ত
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসল চাষ করার জন্য কোথাও কি ট্রেনিং এর ব্যবস্থা আছে?
ReplyDeleteহাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসল চাষ করার জন্য কোথায় কি ট্রেনিং এর ব্যবস্থা আছে ?
ReplyDelete