কৈ, শিং ও মাগুরমাছের পোনা পরিবহন রুইজাতীয়পোনা পরিবহনের মত হলেও একটুভিন্নতা রয়েছে। তারাকাটাযুক্ত হওয়ায় বড় আকারের পোনাঅক্সিজেন ব্যাগে পরিবহণের ক্ষেত্রেবিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।শিং ও মাগুরের ছোটপোনা অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহন করাইউত্তম।
কৈ মাছের পোনা নাসারিপুকুরে ২০/২১ দিনপ্রতিপালনের পর যখন কৈমাছের পোনাগুলো ২.৫-৩.০ সেমি. আকারেরহয় তখন গড় ওজনকরে পোনা মজুদ পুকুরেস্থানান্তর করতে হয়।উৎস্যস্থল থেকে মজুদ পুকুরেরদুরত্ব যতকম হয় কৈএর পোনা বিশেষ করেথাই কৈ মাছের পোনারমৃত্যু হার তত কমহবে। বেশিদূরত্বে পরিবহণের ক্ষেত্রে মৃত্যু হার বেশিহয়। পক্ষান্তরেশিং ও মাগুর মাছতুলনামূলকভাবে প্রতিকূল পরিবেশে একটি বেশি সহিষ্ণুমাছ।
শিং মাছের পোনার বয়সনার্সারি পুকুরে ৩০-৪০দিন হলে তা মজুদপুকুরে স্থানান্তরের যোগ্য হয়।অন্যদিকে মাগুর মাছের পোনারবয়স ২৫-৩০ দিনহলে এদের মজুদ পুকুরেস্থানান্তর করতে হবে।যে কোন উৎস থেকেসংগ্রহ ও পরিবহনের ক্ষেত্রেবিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করাযায়। পদ্ধতিসমূহনিম্নরূপঃ
সনাতন পদ্ধতিঃ
এ পদ্ধতিটি সনাতন হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পোনা পরিহণের ক্ষেত্রেএই পদ্ধতি অনুসরণ করাহয়। তবেরেণু (Spawn) পরিবহণের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির ব্যবহারখুবই কম। এপদ্ধতিতে এ্যালুমিনিয়ামের পাতিল বা ড্রামেরমাধ্যমে পোনা পরিবহন করতেহয়। পোনাপরিবহণের পূর্বে অবশ্যই পোনাটেকসই করে নিতে হবে। টেকসইকরণের পর পোনা পরিবহনউপযোগি হলে পরিমাণ মতনলকুপ/নদী/পুকুরের পরিস্কারঠান্ডা পানি নিতে হবে। এপদ্ধতিতে সাধারণতঃ ২০-৩০টি পোনা/লিটার ঘনত্বে পরিবহনকরা যায়। মাঠপর্যায়ে এ পদ্ধতিতে পোনাপরিবহনের হার নিম্নরূপ (৬-৮ ঘন্টার ভ্রমণে)ঃ
পাতিলের মাধ্যমে
কৈ মাছ - ১০০০-১৫০০টি(৮-১২ লি. পানি)
শিং ও মাগুর - ১০০০-২০০০টি (৮-১২ লি. পানি)
ড্রামের মাধ্যমে
কৈ - গড় ওজন ০.২- ০.৩গ্রাম হলে ৭-৮হাজার প্রতি ড্রামে
গড় ওজন ০.৪-০.৫ গ্রামহলে ৫-৬ হাজারপ্রতি ড্রামে;
শিং এবং মাগুর - ৪০০০- ৬০০০টি প্রতি ড্রামে।
উল্লেখযোগ্যযে শিং এবং মাগুরমাছের পোনা ড্রামে/পাতিলেপরিবহন না করাই ভাল। কারণদু‘টো মাছই তলদেশী। ফলেবুকে ঘসা লেগে ক্ষতসৃষ্টি হয় এবং পরেপোনা ইনফেকশন হওয়ার কারণে মারাযায়। এপদ্ধতিতে পোনা পরিবহন কালেপাতিল/ ড্রামে মুখ ভেজাপাতলা কাপড় বা মশারীরজাল দিয়ে ঢেকে রাখতেহয়। এক্ষেত্রেপাতিল/ড্রামের পানিতে হাত দিয়েবা ঝাকিয়ে বাতাসের অক্সিজেন মিশাতে হয় এবং৪/৫ঘন্টা পর পরপানি বদলাতেহয়। পোনাপরিবহনকালে লক্ষ্য রাখতে হবেযেন ড্রাম/পাতিলের পানিঅত্যাধিক গরম না হয়।
আধুনিক পদ্ধতিঃ
এ পদ্ধতিতে পলিথিন ব্যাগে পানিএবং অক্সিজেনসহ পোনাকে প্যাকেট করেপরিবহন করা হয় সাধারণতঃবর্তমানে মাঠ পর্যায়ে ৬৬সেমি. x ৪৬ সেমি. আকারেরপলিথিন ব্যাগে পোনা পরিবহনকরা হয়। প্রতিটিপ্যাকেটে ২টি করে পলিথিনব্যাগ ব্যবহার করাই উত্তম।কোন কারণে যদি একটিব্যাগ ছিদ্র হয়ে যায়তবে দ্বিতীয়টি পানি, অক্সিজেন ওপোনা রক্ষা করতে সাহায্যকরবে।
পোনা প্যাকিং করার সময় সমানআকারের দুটি পলিথিন ব্যাগনিয়ে একটি অন্যটির ভিতরঢুকিয়ে তার ১/৩অংশ পানি দ্বারা ভর্তিকরতে হবে এবং ব্যাগেরউপরের অংশ এক হাতদিয়ে আটকিয়ে এবং অন্য হাতদিয়ে ব্যাগটিকে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে হবে কোনছিদ্র পথে পানি বেরিয়েযায় কিনা। ছিদ্রযুক্তুপলিথিন ব্যাগ পাওয়া গেলেতা পরিবর্তন করতে হবে।
ব্যাগেরসাইজ ৬৬ সেমি. x ৪৬সেমি. আকারের হলে ২০/২১ দিনের কৈ-এর পোনা ২৫০গ্রাম - ৩০০ গ্রাম এবং৩০/৪০ দিনের শিংও ২৫/৩০ দিনেরমাগুর ৩০০-৪০০ গ্রাম(১৫/১৬ শত) পোনা১৫-১৮ ঘন্টার দূরত্বেররাস্তা পরিবহন করা যায়।
কৈ, শিং ও মাগুরপোনা ৪-৬ ঘন্টারভ্রমনে ১ কেজি- ১.৫ কেজি পর্যন্তপ্রতি ব্যাগে পরিবহন করাযায়। প্রয়োজনীয়পোনা পানিসহ পলিথিন ব্যাগেরেখে পলিথিনের বাকী অংশ অক্সিজেনদ্বারা পূর্ণ করে সুতলি/রাবার ব্যান্ড দিয়েভাল ভাবে বেঁধে নিতেহবে যাতে অক্সিজেন বেরিয়েযেতে না পারে।পোনা পরিবহণের জন্য পানির তাপমাত্রা২২-২৭ডি. সেলসিয়াস এরমধ্যে রাখা উচিত।পানির তাপমাত্রা বেশি হলে অক্সিজেনধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
পরিবহনকালেপলিথিন ব্যাগ যাতে ছিদ্রহতে না পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতেহবে। সম্ভবহলে পলিথিন ব্যাগ বস্তায়ভরে পরিবহন করতে হবে।
অন্যান্য পদ্ধতিঃ
উপরোক্তপদ্ধতি ছাড়াও নিচে লিখিতপদ্ধতিতে পোনা পরিবহন করাযায়।
ইনসুলেটেডট্যাংকে এরেটরের সাহায্যে অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে পোনা পরিবহন করাযায়; ক্যানভাস ট্যাংকের মাধ্যমে পিক-আপ বাঅন্য কোন গাড়ী ব্যবহারকরে এরেটর সেট করেপোনা পরিবহন করা যায়; আজকাল ভ্যান গাড়ীতে মোটাপলিথিন কাগজ নিয়ে ক্যানভাসট্যাংক তৈরি করেও পোনাপরিবহন করতে দেখা যায়।
পোনা পরিবহণে সতর্কতা
একটি পাতিলে বা ড্রামে/ট্যাংকে/ব্যাগে একই আকারেরপোনা পরিবহন করা উচিত; পোনা পরিবহন করার আগেপোনাকে পেট খালি করেকন্ডিশনিং করে নিতে হবে; দূর্বল পোনা পরিবহন করাযাবে না; পরিবহনকালে সরাসরিনলকুপের পানি ব্যাগে/পাতিলে/ড্রামে/ট্যাংকে দেয়াউচিত নয়। এতেপোনা মারা যেতে পারে; প্রয়োজন হলে একই তাপমাত্রারভাল পানি দিয়ে ব্যাগেরবা পরিবহন পাত্রের পানিবদলানো যেতে পারে; শিংও মাগুর মাছের পোনাড্রাম/পাতিলে পরিবহনকালে পেটেরদিক থেকে ঘষা খেয়েক্ষত সৃষ্টি হয়।তাই এগুলোকে ব্যাগে পরিবহন করাইভাল। ব্যাগেপরিবহন করে পোনাকে অবশ্যইশোধন করে পুকুরে ছাড়তেহবে এবং কম পরিমাণপোনা এক সাথে পরিবহনকরতে হবে; লোহার/প্লেনসিটেরড্রামের পরিবর্তে প্লাষ্টিক ড্রামে পোনা পরিবহনকরাই ভাল। তাতেক্ষতি কম হয়।
পোনা শোধন:
প্রতিষেধকও চিকিৎসা পোনা পরিবহন করেখামারে নেওয়ার পর পুকুরে ছাড়ারপূর্বে পোনা শোধন করেনিতে হবে এবং এতেপোনা সুস্থ থাকবে এবংরোগ বালাই এর সম্ভাবনাকমে যাবে। পোনানিম্নরূপেভাবে শোধন করা যাবে:
একটি বালতিতে ১০লিটার পানি নিয়ে এরমধ্যে ২০০ গ্রাম খাবারলবণ অথবা ১ চাচামচ ডাক্তারি পটাশ (KMno4) মিশাতে হবে; অতঃপরবালতির উপর একটি ঘনজাল রেখে তার মধ্যেপ্রতিবার ২০০-৩০০টি পোনাছাড়তে হবে; তারপর জালধরে পোনাগুলোকে বালতির পানিতে ৩০সেকেন্ড গোসল করাতে হবে; এভাবে একবার তৈরি করালবণ/পটাশের পানিতে ৫-৭ বার শোধনকরা যাবে।
ডাক্তারিপটাশ বা লবণ পানিদিয়ে পোনা শোধন ছাড়াওএটিন্টবায়েটিক দিয়ে পোনাকে পুকুরেছাড়ার সাথে সাথেই রোগমুক্তবা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাগ্রহণ করা যায়, যেমন-
পুকুরেপোনা ছাড়ার পর Oxysaytin, Lenocide ইত্যাদি গ্রামপজেটিভ, গ্রাম নেগেটিভ ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস, ফ্যাংগাস, এ্যালজি ও প্রোটজোয়াজণিত মারাত্নকক্ষতিকর রোগজীবাণুগুলোকে প্রতিরোধ ও নির্মূল করারজন্য ব্যবহার করলে ভাল ফলপাওয়া য়ায়। এছাড়াওবাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতেপারে এমন ঔষধ পাওয়াযায়।
Lenocide লোরী/নাসারিাইড (তরল)
৫০০ মিলি/ ১০০ শতাংশ(যখন পানিরগভীরতা ২-৩ ফুট) ১০০০ সিসি /১০০ শতাংশ(যখন পানির গভীরতা ৫-৬ ফুট)
Oxysentin 20% (পাউডার)
প্রতি১০০ কেজি খাবারে ১০দিন পর্যন্ত খাওয়াতে হবে।
Renamycin (পাউডার)
১ চা চামচ পাউডারপ্রতি১০ কেজি খাবারে মিশিয়ে৫-৭ দিন খাওয়াতেহবে
0 comments:
Post a Comment