এখন গ্রীষ্মকাল। এসময় আমাদের দেশের পুকুর, ডোবা, নদী-নালায় পানিপ্রায় শুকিয়ে যায়।মাছ চাষের ক্ষেত্রে এশুষ্ক মৌসুমে যা যাকরণীয় সে সম্পর্কে এখানেকিছুটা আলোকপাত করা হলো।
১. পুকুর প্রস্তুতি
পুকুরেসব ধরনের মাছ চাষেপুকুর প্রস্তুতির জন্য এ সময়ইউত্তম। পুকুরপ্রস্তুতির উদ্দেশ্য হলো চাষযোগ্য মাছেরজন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।
০ নতুন পুকুরে বৃষ্টিরপানিতে পাড় ভেঙে যাতেপুকুরের পানি ঘোলা নাহয় তার জন্য পাড়েঘাস লাগাতে হবে।
০ পুরনো পুকুরে প্রয়োজনেপাড় মেরামত করা উচিত। পাড়েরগাছ ছায়া দিলে ডালপালাকেটে দিতে হয়।
০ পুকুরের তলায় পচা কাদাথাকলে তা তুলে ফেলতেহবে।
০ পুকুরে জলজ আগাছাথাকলে শিকড়সহ উঠিয়ে ফেলতেহবে। আগাছাসমূহপুকুরের এক কোণে স্তুপাকারেরেখে কম্পোস্ট সার তৈরি করাযেতে পারে।
আগামীমৌসুমে মাছ চাষের জন্যএ মৌসুমেই পুকুর শুকিয়ে ফেলেবাজে ও রাক্ষুসে মাছঅপসারণ করতে হবে।পুকুরে পানি শুকানো সম্ভবনা হলে বার বারঘন ফাঁসের জাল টেনেঅচাষযোগ্য মাছ তুলে ফেলতেহবে-
০ পুকুর শুকানো সম্ভবহলে প্রতি শতাংশে ১কেজি চুন গুঁড়া করেতলা ও পাড়ে সমভাবেছিটিয়ে দিয়ে পুকুরের তলাচাষ দিয়ে চুন মাটিরসাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
০ পানিভর্তি পুকুরে প্রতি শতাংশে৬ ফুট পানির জন্য১ কেজি চুন পানিতেগুলিয়ে ঠাণ্ডা করে পুকুরেরপানিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
পুকুরেরপরিবেশকে উপযুক্ত রাখতে চুন প্রয়োগেরকোনো বিকল্প নেই।চুন মাটিতে বিদ্যমান পুষ্টিকরউপাদান মাটি হতে পানিতেমুক্ত করে প্রাকৃতিক খাবারতৈরিতে এবং মাছের রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করতেসাহায্য করে। চুনপ্রয়োগের ৫-৭ দিনপর মাছের প্রাকৃতিক খাবারউৎপাদনের জন্য পুকুরে সারপ্রয়োগ করতে হবে।
০ সম্পূর্ণ শুকানো পুকুরের তলায়শতাংশপ্রতি ১০ কেজি গোবরঅথবা কম্পোস্ট সার দেয়া যেতেপারে।
০ পানিভর্তি পুকুরে শতাংশপ্রতি ১০কেজি গোবর, ২০০ গ্রামইউরিয়া ও ১০০ গ্রামটিএসপি একসাথে মিশিয়ে প্রয়োগকরতে হবে।
২. নার্সারি পুকুর তৈরি
আগাম পোনা উৎপাদনে আগ্রহীচাষিরা পোনা উৎপাদনের জন্যনার্সারি পুকুর তৈরি করেরাখতে পারেন। এক্ষেত্রের মার্চ মাসে রেণুউৎপাদনকারী খামারিদের সাথে যোগাযোগ রাখতেহবে।
নার্সারিপুকুরের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য
০ নার্সারি পুকুর আয়তকার এবংছোট হতে হবে।
০ নার্সারি পুকুরের আয়তন ২৫-৩০শতাংশ হতে পারে।গভীরতা ১-১.৫মিটার এবং পুকুরের ঢাল১:৩ অনুপাতে হলেভালো হয়।
০ বড় পুকুর হলেনার্সারি ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হয়।
০ পুকুরের তলা সমান হতেহবে।
০ মাটির গঠন দো-আঁশ/বেলে দো-আঁশ।
০ তলায় কাদার পরিমাণ২.০০-২.৫সেমি.।
০ পুকুরে দৈনিক সূর্যালোক৬-৮ ঘণ্টা থাকতেহবে।
০ পাড়ে ছায়া সৃষ্টিকারীগাছ বা ঝোপ থাকবেনা।
০ পুকুর পাড়ে উঁচুও শক্ত বাঁধ দিতেহবে।
০ ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য পুকুরের অবস্থানবাড়ির কাছাকাছি হলে ভালো হয়।প্রস্তুতি
০ নার্সারি পুকুরের পানি শুকিয়ে নিয়েতলার অতিরিক্ত কাদা সরিয়ে ফেলুন। পুকুরেরতলা রোদে শুকিয়ে নিতেপারলে ভালো হয়।
০ শুকানো পুকুরের তলায়শতাংশপ্রতি ১ কেজি চুনপ্রয়োগ করে মাটি শোধনকরে নিতে হবে।
০ রেণু ছাড়ার কমপক্ষে১৫ দিন আগে নার্সারিপুকুরে ১-১.৫ফুট পানি ভরতে হবে, এতে পুকুরে রেণু পোনারজন্য খাবার তৈরি হবে।
০ নার্সারি পুকুরে রেণু ছাড়ারআগে ঘন মশারির কাপড়েরজাল টেনে ব্যাঙাচি, অন্যান্যমাছের পোনা ও পোকা-মাকড় সরিয়ে ফেলুন। পরিমাণমতোসার দিন।
০ কার্পজাতীয় মাছের ক্ষেত্রের পোনাউৎপাদন দুইভাবে করা যায়- সারও খাদ্য প্রয়োগের মাধ্যমে। জিওলমাছের ক্ষেত্রের খাদ্য প্রয়োগের মাধ্যমেপোনা উৎপাদনকরলে ভালো ফলাফল পাওয়াযাবে।
পুকুরপ্রস্তুতকালীন সার প্রয়োগ
রেণু পোনার প্রাকৃতিক খাবারহলো প্রধানত উদ্ভিদ পৱাঙ্কটন ওপ্রাণী পক্ষঙ্কটন। প্রাণীপৱাঙ্কটনের উৎপাদন নির্ভর করেউদ্ভিদ পৱাঙ্কটনের প্রাচুর্যতার ওপর। আরউদ্ভিদ পৱাঙ্কটন তাদের বাঁচার জন্যদ্রবীভূত পুষ্টির ওপর নির্ভরশীল।অর্থাৎ প্রাকৃতিক খাদ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যইপুকুরে সার প্রয়োগ করাহয়ে থাকে।
সার দুই প্রকার : (ক) জৈব সার, (২) অজৈবসার।
সার প্রয়োগের মাত্রা
০ রেণুর খোঁজ পেলেরেণু পোনা সংগ্রহের প্রস্তুতিনিন।
০ রেণু ছাড়ার তৃতীয়দিন হতে পুকুরে পরিপূরকখাবার দিন।
রেণু মজুদের ঘনত্ব নির্বাচন: নার্সারি ব্যবস্থাপনায় পুকুরে রেণু মজুদের২টি পদ্ধতি আছে-
এক ধাপ পদ্ধতি : ৮-১০ গ্রাম/শতাংশ।
দুই ধাপ পদ্ধতি : ৩০-৩৫ গ্রাম/শতাংশ।
ধানী মজুদের ঘনত্ব নির্বাচন: পুকুরে ধানী মজুদ দু’ভাবে করা যায়-
১. বেশি সময়ের জন্য(৫০-৬০ দিন) : ১শতাংশে মজুদ হার ১৬০০-২০০০টি ধানী মজুদকরলে র্র্৩র্ -র্৪র্ সাইজেরপোনা পাওয়া যেতে পারে।
২. কম সময়ের জন্য(২৫-৩০ দিন)ঃ১ শতাংশে মজুদ হার৫০০০-৬০০০টি ধানী মজুদকরলে ১.র্৫র্ -২.র্০র্ সাইজেরপোনা পাওয়া যেতে পারে।
নার্সারিপুকুরে রেণু/ধানীর খাদ্যব্যবস্থাপনানার্সারি পুকুরে খাদ্য প্রয়োগেরহার পানির ভৌত ওরাসায়নিক গুণাবলি ছাড়াও পুকুরের প্রাথমিকউৎপাদনশীলতা, চাষ ব্যবস্থাপনা, খাদ্যেরঅবস্থা ও পুষ্টিমানইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভরকরে। ছোটঅবস্থায় পোনার খাদ্য চাহিদাঅনেক বেশি। সেকারণে নার্সারি পুকুরে প্রথম দিকেবেশি মাত্রায় খাবার প্রয়োগ করতেহয়। তবেপোনা বড় হওয়ার সাথেসাথে খাদ্য প্রয়োগের হারকমে গেলেও খাদ্যের পরিমাণতুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়।আঁতুড় পুকুরে খাদ্যপ্রয়োগ হারলালন পুকুরে খাদ্য প্রয়োগহার : মজুদকৃত পোনার ওজনের ১০-৫%
খাদ্যপ্রয়োগ পদ্ধতি
রেণু/মজুদের প্রথম ৫দিন পর্যন্ত সরিষার খৈল গুলিয়েপ্রয়োগ করা ভালো।তারপর তার সাথে মিহিচালের কুঁড়া/ভুসির মিশ্রণদেয়া যায় (৫০:৫০)। অধিকউৎপাদনের জন্য এর সাথেআমিষসমৃদ্ধ খাদ্য (গবাদিপশুর রক্ত/ফিশমিল) দেয়া যেতে পারে। খাদ্যেআমিষের মান ২৫-৩০% হলে ভালো হয় এবংপ্রতিদিন পোনাকে ওজনের ৫-১০% খাদ্য দেয়াউচিত। রক্ত/ফিশমিল পাওয়া নাগেলে শুধু খৈল ওকুঁড়া (৫০:৫০) ব্যবহারকরা যেতে পারে।
৩. মাছ চাষ
যেসব এলাকায় শুকনা মৌসুমেপুকুর-জলাশয়ে ৩-৪ফুট পানি থাকে সেখানেচৈত্র-জ্যৈষ্ঠতে কই, শিং-মাগুর, পাঙ্গাস ও কার্পজাতীয় মাছচাষ করে ৩ মাসেরমধ্যে বাজারজাত করা যায়।
০ এসব জলাশয়ে কই, শিং-মাগুর, পাঙ্গাস ওকার্পজাতীয় মাছের চাপের পোনা/বিগত বছরের পোনাছাড়তে হবে।
০ প্রতি শতকে শিং-মাগুর ৩০০-৫০০টিএবং কই মাছের এককচাষে ৩০০-৫০০টি পোনামজুদ করা যেতে পারে।
০ পানির পরিবেশ ঠিকরাখার জন্য পাঙ্গাসের এককচাষ না করে ১০% কার্পজাতীয় মাছ মজুদ করাযেতে পারে।
০ প্রতি কেজিতে ১৮-২০টি হয় এরকম প্রতি শতকে ১৪০টিপাঙ্গাস পোনা ও ১০-১৪টি কার্পজাতীয় মাছেরপোনা ছাড়লে তা দ্রুতবড় হবে ও ১২০দিনে বাজারজাত করা যাবে।
০ তলদেশের মাটি দূষিত হওয়ারকারণে ১-২ বছরপর পর তলদেশের মাটিরএকটা স্তর উঠিয়ে সারহিসেবে ফসলের জমিতে ব্যবহারকরা যেতে পারে।
০ মাছের শরীরের ওজনের৬% থেকে ১০% হারেখাবার প্রয়োগ করতে হবে।
০ পাঙ্গাস ও কার্পজাতীয় মাছেরওজন ৫০০ গ্রামের ওপরহলে বাজারজাত করা যেতে পারে।
৪. প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ সংরক্ষণ
প্রাকৃতিকজলায়ে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসেমাছ ডিম ছাড়ে। প্রাকৃতিকজলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিরজন্য ডিমওয়ালা মাছকে ডিম ছাড়ারসুযোগ করে দিতে হবে
0 comments:
Post a Comment