পুকুরে শিং ও মাগুর মাছের চাষ প্রণালী



গভীরতা
মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য প−্যাঙ্কটনের উৎপাদন ও সলোকসংশে−ষণের জন্য সূর্যালোক অপরিহার্য। পুকুর বেশি গভীর হলে সূর্যালোক নির্দিষ্ট গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনা, এতে প্রাকৃতিক খাদ্যের পর্যাপ্ত উৎপাদন হয় না, ফলে মাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পুকুরের গভীরতা কম হলে পানি গরম হতে পারে এবং তলদেশে ক্ষতিকর উদ্ভিদ জন্মাতে পারে। পানির গভীরতা বেশি হলে পুকুরের তলদেশে তাপমাত্রা কম থাকে, অক্সিজেনের অভাব ঘটে এবং তলদেশে ক্ষতিকর গ্যাস সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় দূষণ এড়াতে তলদেশের মাছ ও অন্যান্য প্রাণী পানির উপরিভাগে চলে আসে।

স্বচ্ছতা ঘোলাত্ব

  • পুকুরে পানির গভীরতা কমপক্ষে ১.৫ মিটার থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
  • দুই মিটার গভীরতা মাছ চাষের জন্য উত্তম। পুকুরের পানি ঘোলা হলে কার্যকর সূর্যালোক পানির নির্দিষ্ট গভীরতা পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে না। ফলে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য অর্থাৎ উদ্ভিদ-প−্যাঙ্কটনের উৎপাদন কমে যায়। আবার পানির উপরের স্তরে অতিরিক্ত উদ্ভিদ-প−্যাঙ্কটন উৎপাদনের ফলেও পানির স্বচ্ছতা কমে যেতে পারে। এতে অক্সিজেনের অভাবে মাছের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। পানির স্বচ্ছতা ২৫ সেন্টিমিটার হলে পুকুরের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হয়। ঘোলা পানি মাছের খাদ্য চাহিদাকে প্রভাবিত করে। ঘোলা পানিতে দ্রবীভূত বিভিন্ন ধরনের কণা মাছের ফুলকায় আটকে থেকে ফুলকা বন্ধ করে দেয়। এতে মাছের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ফলে মাছের খাদ্য চাহিদা হ্রাস পায়।

  • প্রতি শতকে ১.০-১.৫ কেজি হারে জিপসাম প্রয়োগ করে পানির ঘোলাত্ব দূর করা যায়।
  • পুকুরের কোণায় খড়ের ছোট ছোট আটি রেখে দিলেও এক্ষেত্রে ভাল ফল পাওয়া য়ায়।

কৈ, শিং মাগুর মাছ চাষের সুবিধা

  • যে কোন ধরনের জলাশয়ে এমনকি চৌবাচ্চায় বা খাঁচাতেও এসব মাছের চাষ করা যায়।
  • বাংলাদেশের মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু এসব মাছ চাষের অত্যন্ত উপযোগী।
  • মৌসুমি পুকুর, বার্ষিক পুকুর, অগভীর জলাশয়েও এসব মাছ চাষ করা যায়।
  • স্বল্প গভীরতা সম্পন্ন পুকুরে অধিক ঘনত্বে সহজেই চাষ করা যায়।
  • বিরূপ পরিবেশের পানিতে এরা স্বচছন্ধে বসবাস করতে পারে। অক্সিজিনের অভাব, পানি দূষণ, পানি অত্যধিক গরম হলেও এরা বাঁচতে পারে।
  • কৈ মাছ একক চাষে এবং শিং ও মাগুর মিশ্রচাষে চাষ উপযোগী।
  • কৈ মাছ ৪ মাসে এবং শিং ও মাগুর মাছ ৭-৮ মাসে খাবার উপযোগী ও বাজারজাত করা যায়।
  • কৈ, শিং ও মাগুর মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
  • এসব মাছের চাহিদা ও বাজারমূল্য অনেক বেশি।

কৈ, শিং মাগুর চাষে স্থান নির্বাচন পুকুরের বৈশিষ্ট্য
এক সময় আমাদের দেশে পুকুর তৈরি করা হতো গৃহস্থলীর কাজে ব্যবহারের জন্য। কালের বিবর্তনে পরবর্তীতে এ পুকুরগুলিতে কার্পজাতীয় মাছের চাষাবাদ শুরু করা হয়। বর্তমানে মাছ চাষ সম্প্রসারণের সাথে সাথে দেশে আধুনিক বাণিজ্যিক মৎস্য খামার গড়ে উঠছে। এ সকল খামার সাধারণত অপেক্ষাকৃত নিচু জমিকে খামারের জন্য নির্বাচন করা হয়ে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে কৈ, শিং ও মাগুর চাষের জন্য খামারে নার্সারি পুকুর, লালন পুকুর ও মজুদ পুকুরের প্রয়োজন পড়ে।
কৈ, শিং ও মাগুর চাষে স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় ঃ

  • খামার পাকা রাস্তার কাছাকাছি হলে যাবতীয় কার্যাদি সম্পাদনের সুবিধা হয় এবং সেই সাথে মাছ ও অন্যান্য উৎপাদন সামগ্রী বাজারজাতকরণের সুবিধা হয় এবং বিক্রয়লদ্ধ মূল্য বেশী পাওয়া যায়।
  • বিদ্যুত বিহীন স্থানে খামার স্থাপন না করাই ভাল, কারণ কৈ, শিং ও মাগুর চাষে পানি পরিবর্তন অপরিহার্য বিষয়; বিশেষ করে শীতের সময় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে কৈ মাছ মারা যায়, এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য শীতের সময় প্রতিদিন মেশিন দ্ধারা পুকুরে পানি সরবরাহের সুযোগ রাখতে হবে।
  • যে সমস্ত এলাকায় গাড়ীযোগে মাছ ক্রয়ের পার্টি নাই বা খামারের নিজস্ব গাড়ী নাই (পাইকার নাই) সেখানে খামার স্থাপন করলে মাছ বিক্রয়ে অসুবিধা হবে। স্থানীয় বাজারে কৈ, শিং ও মাগুর মাছ বিক্রয় করে খামারটি লাভজনক পর্যায়ে না যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুত করা একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ অন্য দিকে তেমনি ব্যাপক। পুকুর/দিঘিতে পোনা মাছ মজুদ করার পূর্বে একজন মৎস্য চাষির নিকট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পুকুরটি মাছ চাষ উপযোগী করে প্রস্তুত করে নেয়া। পুকুর প্রস্তুত প্রণালী বহু ধাপ বিশিষ্ট কার্যক্রম। এর প্রতিটি ধাপই অতি দক্ষ এবং মনোযোগের সাথে সম্পাদন করা একজন মৎস্য চাষির জন্য একান্ত অপরিহার্য। অন্যদিকে একজন মাছ চাষির মাছ চাষের স্বার্থকতা প্রায় পুরাপুরিটাই নির্ভর করে পুকুরে পোনা মাছ ছাড়ার পূর্বে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পুকুর প্রস্তুত করার ওপর। কারণ পুকুর প্রস্তুতের উৎকর্ষতা এবং গুণগতমানের উপরই নির্ভর করবে অবমুক্ত পোনা মাছ কতভাগ শেষ অবধি বেঁচে থেকে খাবার যোগ্য বড় মাছে রূপান্তরিত হবে। অন্যদিকে নার্সারি পুকুরে অবমুক্ত রেণু পোনা এবং অবমুক্ত পোনা থেকে শেষ অবধি যথাক্রমে কতভাগ পোনা এবং চারা পোনা কিংবা নলা হবে তাও নির্ভর করে মূলতঃ পুকুরদিঘির প্রস্তুতে মৎস্যবিজ্ঞান সম্মত ব্যবস্থাপনা উৎকর্ষতার ওপর। সুতরাং যে কোন প্রকার মাছ চাষের বেলায় পুকুর ও স্থান নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কৈ, শিং মাগুর চাষের পুকুরের প্রকারভেদ বৈশিষ্ট্য
সহজ ভাষায় পুকুর বলতে এমন এক ধরনের জলাধারকে বুঝাবে যার ঃ

  • চারদিকে চারটি উঁচু পাড় আছে
  • আয়তন (০.১০-১.০) একর হবে
  • যার সাথে অন্য কোন প্রাকৃতিক পানির উৎস, যেমন নদী-নালা, খাল-বিল ইত্যাদির সংযোগ থাকবে না
  • গভীরতা ১.৫ থেকে ২.০ মিটার হবে
  • পুকুরের পাড়ের উপর নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকবে।

আদর্শ পুকুর আদর্শ পুকুরের এমন হবে যার

  • উপরে বর্ণিত পুকুরের গুণাবলী গুলো বিদ্যমান থাকবে
  • যাবতীয় আগাছা, অবাঞ্ছিত মাছ ইত্যাদি হতে মুক্ত হবে
  • পাড়ে এমন সব ধরনের বড় বড় গাছপালা থাকবে না যেগুলোতে সূর্যের আলো পুকুরের পানিতে প্রবেশে বাধাঁ দেবে এবং গাছের ঝরা পাতা পুকুরের পানিতে পচে দূষিত করবে
  • চুন, সার এবং প্রচুর সূর্যের আলোতে পানি ও মাটির উৎপাদিকা শক্তি বাড়িয়ে অধিক মাছ উৎপাদনে সক্ষম হবে

পুকুরের প্রকার

  • নার্সারি পুকুর / আঁতুড় পুকুর
  • লালন পুকুর /প্রতিপালন পুকুর/ চারা পুকুর
  • মজুদ পুকুর /বড় মাছের পুকুর।


নার্সারি পুকুরের বৈশিষ্ট্য
·         আকারে ছোট এবং অগভীর (আয়তন-১০ থেকে ৫০ শতক এবং ১.০ থেকে ১.৫ মি. গভীর)
·         যে কোন সময়ে পানি শুকানো এবং পানি পুনঃভরণযোগ্য
·         প্রকৃতিতে আয়তক্ষেত্র।
·         অল্প শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগে অধিক সংখ্যক পোনা সময়ে ধরার সুবিধা থাকতে হবে
·         এ ধরনের পুকুরে কেবল মাত্র রেণূ/ধানী পোনা উৎপাদন করা হয়। কারণ রেণু পোনার খাদ্যাবাস, বিচরণ, প্রকৃতি, খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া ইত্যাদি বড় মাছ থেকে আলাদা ধরণের। বয়স এবং দেহের গঠন অনুযায়ী এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। অধিক গভীর পানির নিচে থেকে খাদ্য সংগ্রহে অদক্ষ এবং অভ্যস্থ নয়।
·         এখানে কৈ, শিং ও মাগুর মাছের পোনাকে ২৫-৩০ দিন রাখা হয়।

লালন পুকুর (জবধৎরহম ঢ়ড়হফ) /প্রতিপালন পুকুর/চারা পুকুর
·         আকারে নার্সারি পুকুর থেকে বড় ( ১/২ থেকে ১.০ একর)
·         নার্সারি পুকুর থেকে গভীরতা বেশি (১.৫-২ মিটার)।
·         আয়তকার, সারা বছর কমপক্ষে ০.৭৫ মিটার পানি থাকে
·         যে কোন সময়ে পানি শুকানো এবং পানি ভরা যায় এমন
·         এখানে শিং ও মাগুর মাছের পোনাকে ৩০-৪০ দিন রাখা হয়। কৈ মাছের বেলায় লালন পুকুরের প্রয়োজন নাই।

পুকুরের আকৃতি ও প্রকৃতি ভিন্ন ধরনের হওয়ার কারণ ঃ
·         পোনামাছ দলবদ্ধ ভাবে চলা ফেরা করতে অভ্যস্ত
·         খাদ্য গ্রহণ অভ্যাস ভিন্নতর হয়
·         বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে রেণু/ধানী হতে বেশি হয়
·         দীর্ঘ দিন (৩-৪ মাস) প্রতিপালন করা

মজুদ পুকুর  / বড় মাছের পুকুরÑ মজুদ পুকুরের নিম্নরূপ বৈশিষ্ট্য হবে:
·         আকারে তুলনামূলকভাবে বড় (১.০০ একর থেকে বড় হবে, সাধারণত কৈ, শিং ও মাগুর মাছের জন্য খুব বড় পুকুর খামার মালিকগণ করে না)
·         আয়তকার, গভীরতা বেশি (১.৫-২ মিটার)
·         সারা বছর কমপক্ষে ১.০০ মিটার পানি থাকে
·         যে কোন সময়ে পানি শুকানো এবং পানি পুনঃভরা যায় এমন
·         পুকুরের মাটি এবং পানি তুলনামূলকভাবে অধিক উর্বর এবং উৎপাদিকা শক্তি বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয়
·         পুকুরের পাড় তুলনামূলকভাবে উঁচু এবং মজবুত হওয়া
·         মাছ মাছ পুরাপুরি স্তর বিন্যাস হয়ে চলাফেরা করার সুযোগ আছে
·         খাদ্যাভাস পুরাপুরি পৃথক হয়ে যাওয়ার ফলে প্রয়োজনীয় বিচরণ স্তর থাকা
·         বিচরণ এবং খাদ্য সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় অধিক জায়গার প্রাপ্যতা
·         দীর্ঘদিন ধরে প্রতিপালনের স্বাভাবিক পরিবেশ এবং সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান
·         কৈ, শিং ও মাগুর মাছকে ১২০-১৩০ দিন রেখে বিক্রয় উপযোগী করা হয়।
সাধারণতঃ যে সব কারণে মূলত নার্সারি এবং চারা পুকুরে রেণু/ধানী কিংবা পোনা মারা যায়
·         অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা এবং পরিচর্যা
·         পুকুরের মাটি ও পানির ভৌত (চযুংরপধষ), রাসায়নিক (ঈযবসরপধষ) ও জৈবিক (ইরড়ষড়মরপধষ) ফ্যাক্টর সমূহের পরস্পর অসামঞ্জস্যতা এবং সম্পর্কহীনতা
·         পর্যাপ্ত পরিমাণে যথোপযুক্ত উৎকৃষ্ট মানের খাদ্যের অভাব
·         প্রয়োজনে অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ
·         রাক্ষুসে এবং ক্ষতিকর মাছ, কীটপতঙ্গ ইত্যাদির উপস্থিতি
·         রেণু/ধানী/পোনা কম জায়গায় অধিক পোনা মজুদ
·         তাপমাত্রার উঠানামা
·         অতিরিক্ত জলজ আগাছার উপস্থিতি
·         বিশেষ করে রাতের বেলায়, মেঘাচ্ছন্ন দিনে (যদি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়) এবং অতিরিক্ত মূষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে দ্রুত পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাওয়া
·          যে কোন শেওলা জাতীয় তৃণের জন্মগত বিষাক্ততা রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু এবং পরজীবীর উপস্থিতি
·         দূষণের ফলে পানির স্বাভাবিক গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

কৈ, শিং মাগুর চাষের পুকুর ব্যবস্থাপনা
সাধারণত কৈ, শিং ও মাগুর চাষের ক্ষেত্রে নার্সারি পুকুর, লালন পুকুর ও মজুদ পুকুরে একটি নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত মাছ রাখা হয়। মাছ আহরণের পর পুকুরটির কিছু ট্রিটমেন্টের পর পুনরায় মাছ ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে পুকুর ব্যবস্থাপনার কাজকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি
১. দৈনন্দিন কাজ ঃ পুকুরের স্বাস্থ্যগত পরিবেশ বাজায় রাখা এবং পুকুরে প−্যাঙ্কটনের আধিক্য যাতে না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অতিরিক্ত খামার যেন না দেয়া হয় এবং জলজ আগাছা ও বন্য জলজপ্রাণীর উপদ্রব থেকে মাছকে রক্ষা
করতে হবে।
২. এর মধ্যে আবহাওয়া পরিবর্তন/ঋতু পরিবতনের সাথে পুকুর ব্যবস্থাপনার কিছু কাজ করতে হতে পারে;
যেমন- তলার জৈব পদার্থ পরিবর্তন. পুকুর মেরামতের কাজ ইত্যাদি হতে পারে। যে সব স্থানে ডিপ টিউবওয়েল নাই
সেখানে গ্রীষ্মকালে ১টি মাত্র ফসল করাই ভাল।

পিএইচ
মাটির পিএইচ  ৬.৫-৮.০ এর মধ্যে হলে তা মাছ চাষের জন্য উত্তম। অনুকূল পিএইচ মাত্রায় ফসফরাসের যোগান বৃদ্ধি পায়
এবং অ্যামোনিয়া ও নাইট্রোজেন ঘটিত অণুজীব অধিক কর্মক্ষম হয়। পি এইচ ৬.০-এর নিচে হলে মাটি অধিক অ¤−ীয় হয় এবং পানিতে ক্ষতিকর মৌলিক পদার্থের উপস্থিতি দেখা দেয়। আবার পিএইচ-এর মাত্রা ৯.০ এর বেশি হলে অণুজীবগোষ্ঠী নিস্ক্রিয় হয় ও ফসফরাসের সরবরাহ হ্রাস পায়। এতে উদ্ভিদ প−্যাংটনের উৎপাদন খুব কমে যায়।
পিএইচ ঋণাত্বক হাইড্রোজেন আয়ন ঘনত্বের পরিমাপকই পিএইচ। পিএইচ সংখ্যামান দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এ পরিমাপক ০ থেকে ১৪ পর্যন্ত বিস্তৃত। পিএইচ-এর মাধ্যমে পানির অ¤−ত্ব ও ক্ষারত্বের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ৭ নিরপেক্ষ মান, ৭ এর উপরে (৭-১৪) ক্ষারীয় মান এবং ৭ এর নিচে (৭-০) অ¤−ীয় মান নির্দেশ করে।
অপেক্ষাকৃত ক্ষারধর্মী পানি (পিএইচ ৭.৫-৮.৫) মাছ চাষের জন্য ভাল। পিএইচ মাত্রা ৯.৫ এর বেশি হলে পানিতে মুক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকতে পারে না। ফলে পানিতে উদ্ভিদ-প−্যাংটনের উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় মাছের উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হয়। পানির পিএইচ ১১.০ হলে বা ৪.০-এর নিচে নামলে মাছ মারা যেতে পারে। পিএইচ ৭.০-৭.৫ এর মধ্যে থাকলে ফসফরাস সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। অম্ল− পানিতে উদ্ভিদ-প−্যাংটনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। পানি অম্ল হলে পুকুরে চুন দিতে হয়।
পানির পিএইচ মাছের খাদ্য চাহিদার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। অম্ল পানি মাছ চাষের জন্য ভাল নয়। এ ধরনের পানিতে মাছের
ক্ষুধা হ্রাস পায় ও খাদ্য চাহিদা কমে যায়। ফলে মাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও উৎপাদন হ্রাস পায়। কোন জলাশয়ে পানির পিএইচ ৯.০- এর বেশি হলে এবং তা দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে মাছের খাদ্য চাহিদা কমে যায় ও বৃদ্ধি শুন্যের কোঠায় দাঁড়ায়। পিএইচ মাত্রা ৭.০ থেকে ৮-৫ এর মধ্যে থাকলে মাছের খাদ্য চাহিদা বেশি থাকে ও উৎপাদন বেশি হয়।
পানির পিএইচ মানের দ্রুত উঠানামা মাছ ও চিংড়ি চাষের জন্য ভাল নয়। পানির পিএইচ মান কমে গেলে মাছ ও চিংড়ির নিুবর্ণিত অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে। ক্সমাছ ও চিংড়ির দেহ থেকে সোডিয়াম ও ক্লোরাইড বেরিয়ে যায়, ফলে এরা দুর্বল হয়ে মারা যায়।
·         মাছ ও চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও খাবার রুচি কমে যায়।
·         পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন হ্রাস পায়।
·         মাছ ও চিংড়ির প্রজনন ক্ষমতা লোপ পায়।
অন্যদিকে পানির পিএইচ বেড়ে গেলে মাছ ও চিংড়ির নিুবর্ণিত অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
·         ফুলকা এবং চোখ নষ্ট হয়ে যায়
·         অসমোরেগুলেশন ক্ষমতা হ্রাস পায়
·         খাদ্য গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।
·         পানির পিএইচ অনুমান
·         পানি মুখে দিয়ে টক বা লবণাক্ত স্বাদ লাগলে বুঝা যাবে পিএইচ ৭.০-এর কম।
·         অম্ল পানিতে লিটমাস কাগজ ভিজালে লাল হবে।
·         পানির পিএইচ ৭.০-এর বেশি হলে পানি মুখে দিলে কষযুক্ত মনে হবে।
·         ক্ষারীয় পানিতে লিটমাস কাগজ ভিজালে লাল হবে
পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা
পুকুরে একটি হাপা টাঙ্গিয়ে তার মধ্যে অল্প সংখ্যক যে কোন মাছের পোণা ছেড়ে ১২ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি অধিকাংশ রেণু (৭০%) বেঁচে থাকে তাহলে পানিতে বিষাক্ততা নেই বুঝতে হবে।

চুন প্রয়োগ
চুন ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ অজৈব যৌগ বা এসিড মাধ্যমকে ক্ষারীয় বা নিরপেক্ষ করে।

চুন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা
·         মাটি ও পানির পিএইচ মাছ চাষের উপযোগী মাত্রায় রাখে।
·         পানিতে ক্ষারত্বের পরিমান ২০ মিলিগ্রাম/ লিঃ এর বেশি রাখতে সহায়তা করে।
·         সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
·         প্রস্তুতকালিন চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুর পরজীবী ও রোগ জীবাণু মুক্ত হয় ।
·         চুনের ক্যালসিয়াম নিজেই একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।
·         কাদায় আবদ্ধ ফসফরাস মুক্ত করে।
·         পানির ঘোলাত্ব দূর করে।
চুন প্রয়োগের মাত্রা ঃ প্রতি শতাংশে ১-২ কেজি।



পুকুর প্রস্তুতকালিন সার প্রয়োগ
পোনার প্রাকৃতিক খাবার হলো প্রধানতঃ উদ্ভিদ প−্যাঙ্কটন ও প্রাণী প−্যাঙ্কটন। পাণী প ্র −াঙ্কটন এর উৎপাদন নির্ভর করে উদ্ভিদ প−্যাঙ্কটনের
প্রাচুর্যতার উপর। আর উদ্ভিদ প−াঙ্কটন তাদের বাঁচার জন্য দ্রবীভূত পুষ্টির ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির উদ্দ্যেশেই
পুকুরে সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। সাধারণত শিং ও মাগুর চাষে পেনা ছাড়ার পূর্বে ১ বার সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
সার দুই প্রকার ঃ (ক) জৈব সার, (২) অজৈব সার।
 সার প্রয়োগের মাত্রা
ক্রমিক নং সারের নাম প্রয়োগমাত্রা/শতাংশ
গোবর অথবা ৫-৭ কেজি
হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা অথবা ৩-৫ কেজি
১।
কমপোষ্ট ৮-১০ কেজি
২। 
ইউরিয়া ১৫০-২০০ গ্রাম
৩। 
টিএসপি ৭৫-১০০ গ্রাম

উৎস থেকে পোনা সংগ্রহ, পরিবহন শোধন
কৈ, শিং ও মাগুর মাছের পোনা পরিবহন রুইজাতীয় পোনা পরিবহনের মত হলেও একটু ভিন্নতা রয়েছে। এসব মাছ কাটাযুক্ত হওয়ায় বড় আকারের পোনা অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। শিং ও মাগুরের ছোট পোনা অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহন করাই উত্তম।
কৈ মাছের পোনা নাসারি পুকুরে ২০/২১ দিন প্রতিপালনের পর যখন কৈ মাছের পোনাগুলো ২.৫-৩.০ সেমি. আকারের হয় তখন গড় ওজন বের করে পোনা মজুদ পুকুরে স্থানান্তর করতে হয়। উৎসস্থল থেকে মজুদ পুকুরের দুরত্ব যতকম হয় কৈ এর পোনা বিশেষ করে থাই কৈ মাছের পোনার মৃত্যু হার তত কম হবে। বেশি দুরত্বে পরিবহণের ক্ষেত্রে মৃত্যু হার বেশি হয়। পক্ষান্তরে শিং ও মাগুর মাছ তুলনামূলকভাবে প্রতিকূল পরিবেশে একটি বেশি সহিষ্ণু মাছ।
শিং মাছের পোনার বয়স নার্সারি পুকুরে ৩০-৪০ দিন হলে তা মজুদ পুকুরে স্থানান্তরের যোগ্য হয়। অন্যদিকে মাগুর মাছের পোনার বয়স ২৫-৩০ দিন হলে এদের মজুদ পুকুরে স্থানান্তর করতে হবে। যে কোন উৎস থেকে সংগ্রহ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। পদ্ধতিসমূহ নিম্নরূপ ঃ
১) সনাতন পদ্ধতি ঃ এ পদ্ধতিটি সনাতন হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পোনা পরিহণের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তবে রেণু (ঝঢ়ধহি) পরিবহণের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির ব্যবহার খুবই কম। এ পদ্ধতিতে এ্যালুমিনিয়ামের পাতিল বা ড্রামের মাধ্যমে পোনা পরিবহন করতে হয়। পোনা পরিবহণের পূর্বে অবশ্যই পোনা টেকসই করে নিতে হবে। টেকসই করণের পর পোনা পরিবহন উপযোগী হলে পরিমাণ মত নলকুপ/নদী/পুকুরের পরিস্কার ঠাণ্ডা পানি নিতে হবে। এ পদ্ধতিতে সাধারণতঃ ২০-৩০টি পোনা/লিটার ঘনত্বে পরিবহন করা যায়।
মাঠ পর্যায়ে এ পদ্ধতিতে পোনা পরিবহনের হার নিম্নরূপ (৬-৮ ঘন্টার ভ্রমণে) ঃ

পাতিলের মাধ্যমে
·         কৈ মাছ - ১,০০০-১,৫০০টি (৮-১২ লি. পানি)
·         শিং ও মাগুর - ,১০০০-২,০০০টি (৮-১২ লি. পানি)
ড্রামের মাধ্যমে
·         কৈ - গড় ওজন ০.২- ০.৩ গ্রাম হলে ৭-৮ হাজার প্রতি ড্রামে। - গড় ওজন ০.৪-০.৫ গ্রাম হলে ৫-৬ হাজার প্রতি ড্রামে।
·         শিং এবং মাগুর ৪,০০০- ৬,০০০টি প্রতি ড্রামে।
উলে−খযোগ্য যে শিং এবং মাগুর মাছের পোনা ড্রামে/পাতিলে পরিবহন না করাই ভাল। কারণ দুুটো মাছই তলদেশী। ফলে বুকে ঘসা লেগে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং পরে পোনা ইনফেকশন হওয়ার কারণে মারা যায়। এ পদ্ধতিতে পোনা পরিবহন কালে পাতিল/ ড্রামে মুখ ভেজা পাতলা কাপড় বা মশারীর জাল দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে পাতিল/ড্রামের পানিতে হাত দিয়ে বা ঝাকিয়ে বাতাসের অক্সিজেন মিশাতে হয় এবং ৪/৫ঘন্টা পর পর পানি বদলাতে হয়। পোনা পরিবহনকালে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ড্রাম/পাতিলের পানি অত্যাধিক গরম না হয়।

২) আধুনিক পদ্ধতি এ পদ্ধতিতে পলিথিন ব্যাগে পানি এবং অক্সিজেন সহ পোনাকে প্যাকেট করে পরিবহন করা হয়্ সাধারণতঃ বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে ৬৬ সেমি. ী ৪৬ সেমি. আকারের পলিথিন ব্যাগে পোনা পরিবহন করা হয়। প্রতিটি প্যাকেটে ২টি করে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করাই উত্তম। কোন কারণে যদি একটি ব্যাগ ছিদ্র হয়ে যায় তবে দ্বিতীয়টি পানি, অক্সিজেন ও পোনা রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
পোনা প্যাকিং করার সময় সমান আকারের দুটি পলিথিন ব্যাগ নিয়ে একটি অন্যটির ভিতর ঢুকিয়ে তার ১/৩ অংশ পানি দ্বারা ভর্তি করতে হবে এবং ব্যাগের উপরের অংশ এক হাত দিয়ে আটকিয়ে এবং অন্য হাত দিয়ে ব্যাগটিকে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে হবে কোন ছিদ্র পথে পানি বেরিয়ে যায় কিনা। ছিদ্রযুক্ত পলিথিন ব্যাগ পাওয়া গেলে তা পরিবর্তন করতে হবে।
ব্যাগের সাইজ ৬৬ সেমি. ী ৪৬ সেমি. আকারের হলে ২০/২১ দিনের কৈ-এর পোনা ২৫০ গ্রাম - ৩০০ গ্রাম এবং ৩০/৪০ দিনের শিং ও ২৫/৩০ দিনের মাগুর ৩০০-৪০০ গ্রাম (১৫/১৬ শত) পোনা ১৫-১৮ ঘণ্টার দুরত্বের রাস্তা পরিবহন করা যায়। কৈ, শিং ও মাগুর পোনা ৪-৬ ঘন্টার ভ্রমণে ১ কেজি- ১.৫ কেজি পর্যন্ত প্রতি ব্যাগে পরিবহন করা যায়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোনা পানিসহ পলিথিন ব্যাগে রেখে পলিথিনের বাকী অংশ অক্সিজেন দ্বারা পূর্ণ করে সুতলি/রাবার ব্যাণ্ড দিয়ে ভাল ভাবে বেঁধে নিতে হবে যাতে অক্সিজেন বেরিয়ে যেতে না পারে। পোনা পরিবহণের জন্য পানির তাপমাত্রা ২২-২৭০
 সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখা উচিত। পানির তাপমাত্রা বেশি হলে অক্সিজেন ধারণক্ষমতা কমে যায়।

পরিবহনকালে পলিথিন ব্যাগ যাতে ছিদ্র হতে না পারে সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। সম্ভব হলে পলিথিন ব্যাগ বস্তায় ভরে
পরিবহন করতে হবে।

৩) অন্যান্য পদ্ধতি উপরোক্ত পদ্ধতি ছাড়াও নিচে লিখিত পদ্ধতিতে পোনা পরিবহন করা যায়।
১. ইনসুলেটেড ট্যাংকে এরেটরের সাহায্যে অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে পোনা পরিবহন করা যায়।
২. ক্যানভাস ট্যাংকের মাধ্যমে পিক-আপ বা অন্য কোন গাড়ী ব্যবহার করে এরেটর সেট করে পোনা পরিবহন করা যায়।
৩. আজকাল ভ্যান গাড়ীতে মোটা পলিথিন কাগজ নিয়ে ক্যানভাস ট্যাংক তৈরি করেও পোনা পরিবহন করতে দেখা যায়।

পোনা পরিবহণে সতর্কতা
১. একটি পাতিলে বা ড্রামে/ট্যাংকে/ব্যাগে একই আকারের পোনা পরিবহন করা উচিত।
২. পোনা পরিবহন করার আগে পোনাকে পেট খালি করে কণ্ডিশনিং করে নিতে হবে।
৩. দুর্বল পোনা পরিবহন করা যাবে না।
৪. পরিবহনকালে সরাসরি নলকুপের পানি ব্যাগে/পাতিলে/ড্রামে/ট্যাংকে দেয়া উচিত নয়। এতে পোনা মারা যেতে পারে।
৫. প্রয়োজন হলে একই তাপমাত্রার ভাল পানি দিয়ে ব্যাগের বা পরিবহন পাত্রের পানি বদলানো যেতে পারে।
৬. শিং ও মাগুর মাছের পোনা ড্রাম/পাতিলে পরিবহনকালে পেটের দিক থেকে ঘষা খেয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। তাই এগুলোকে
ব্যাগে পরিবহন করাই ভাল। ব্যাগে পরিবহন করে পোনাকে অবশ্যই শোধন করে পুকুরে ছাড়তে হবে এবং কম পরিমাণ
পোনা এক সাথে পরিবহন করতে হবে।
৭. লোহার/পে−নসিটের ড্রামের পরিবর্তে প−াষ্টিক ড্রামে পোনা পরিবহন করাই ভাল। তাতে ক্ষতি কম হয়।

পোনা শোধন প্রতিষেধক চিকিৎসা
পোনা পরিবহন করে খামারে নেওয়ার পর পুকুরে ছাড়ার পূর্বে পোনা শোধন করে নিতে হবে এবং এতে পোনা সুস্থ থাকবে এবং রোগ বালাই এর সম্ভাবনা কমে যাবে। পোনা নিম্নরূপেভাবে শোধন করা যাবে ঃ
১. একটি বালতিতে ১০লিটার পানি নিয়ে এর মধ্যে ২০০ গ্রাম খাবার লবণ অথবা ১ চা চামচ ডাক্তারি পটাশ (কগহড়৪)
মিশাতে হবে।
২. অতঃপর বালতির উপর একটি ঘন জাল রেখে তার মধ্যে প্রতিবার ২০০-৩০০টি পোনা ছাড়তে হবে।
৩. তারপর জাল ধরে পোনাগুলোকে বালতির পানিতে ৩০ সেকেণ্ড গোসল করাতে হবে।
৪. এভাবে একবার তৈরি করা লবণ/পটাশের পানিতে ৫-৭ বার শোধন করা যাবে।
ডাক্তারি পটাশ বা লবণ পানি দিয়ে পোনা শোধন ছাড়াও এটিন্টবায়েটিক দিয়ে পোনাকে পুকুরে ছাড়ার সাথে সাথেই রোগমুক্ত বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, যেমন-
১. পুকুরে পোনা ছাড়ার পর ঙীুংধুঃরহ, খবহড়পরফব ইত্যাদি গ্রাম পজেটিভ, গ্রাম নেগেটিভ ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস, ফ্যাংগাস, এ্যালজি ও প্রোটাজোয়াজনিত মারাতœক ক্ষতিকর রোগজীবাণুগুলোকে প্রতিরোধ ও নির্মূল করার জন্য ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া য়ায়। এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে পারে এমন ঔষধ পাওয়া যায়।
খবহড়পরফব লোরী/নাসারিাইড
(তরল)
৫০০ মিলি/ ১০০ শতাংশ (যখন পানির গভীরতা ২-৩ ফুট)
১০০০ সিসি /১০০ শতাংশ (যখন পানির গভীরতা ৫-৬ ফুট)
ঙীুংবহঃরহ ২০%
(পাউডার)
প্রতি ১০০ কেজি খাবারে ১০ দিন পর্যন্ত খাওয়াতে হবে।
জবহধসুপরহ
(পাউডার)
১ চা চামচ পাউডার প্রতি১০ কেজি খাবারে মিশিয়ে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।

পোনা মজুদকালীন করণীয়
মজুদকালীন সময়ে পোনার মৃত্যুহার কমানোর জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারেঃ
১. পরিবহনজনিত কারণে পোনার শরীরে ক্ষত হতে পারে সে জন্য পোনা ছাড়ার পূর্বে ১ পিপিএম হারে পটাশিয়াম
পারমেঙ্গানেট অথবা খাবার লবণ পানিতে গোসল করিয়ে পোনা ছাড়তে হবে।
২. যদি সম্ভব হয় পোনা ছাড়ার সময় থেকে ১০-১২ ঘন্টা পুকুরে হালকা পানির প্রবাহ রাখতে হবে।


পোনা ছাড়ার সময়
ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় দিনের যে কোন সময়ে পোনা ছাড়া যেতে পারে। তবে সকাল অথবা বিকালে পোনা ছাড়া উত্তম। দুপুরের রোদে, ভ্যাপসা আবহাওয়ায়, অবিরাম বৃষ্টির সময়ে পুকুরে পোনা না ছাড়াই উত্তম। পুকুরে পোনা মজুদের পর ১-২ দিন পুকুরে পোনার মৃত্যু হার পর্যবেক্ষণ করা দরকার। পোনা মৃত্যু হার বেশি হলে সম পরিমাণ পোনা ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ করার পদ্ধতি
নিম্নরূপ উপায়ে পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে ঃ
·         সমস্ত পুকুরে সমান ভাবে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা
·         নির্ধারিত স্থানে প্রয়োগ করা
·         খাদ্যদানীতে প্রয়োগ করা। খাদ্যদানীর সংখ্যা পুকুরে মজুদকৃত মাছের সংখ্যা ও আকারের ওপর ভিত্তি করে ঠিক করতে হবে।
·         খাবার একটি ছিদ্র যুক্ত ব্যাগে ভরে পানিতে ঝুলিয়ে দেয়া।
পুকুরে খাদ্য প্রয়োগের সময় নিচে উলে−খিত বিষয়াবলী অনুসরণ করা প্রয়োজন
·         খাদ্য প্রয়োগের জন্য সুবিধামত যে কোন একটি বা দুটির মিশ্র পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। কারণ বিদ্যমান সব পদ্ধতির কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।
·         খাদ্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে পরিমিত পরিমাণ প্রয়োগ করতে হবে
·         পানি অতিরিক্ত সবুজ বা দূষিত হয়ে পড়লে বা বৃষ্টি হলে খাদ্য প্রয়োগ কমাতে হবে
·         মাছ যে কোন কারণে পিড়ন (ঝঃৎবংং) অবস্থার সৃষ্টি হলে খাদ্য প্রয়োগ কমিয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে বন্ধ করে দিতে হবে। অন্যথায় খাদ্য অপচয় হয়ে পরিবেশ বিনষ্ট করবে।

শিং মাগুর মাছের পোনা মজুদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা
পোনার প্রাপ্যতা
শিং মাছ
এ মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন কৌশল বেশ কয়েক বছর আগেই উদ্ভাবিত হলেও কয়েক বছর আগেও শিং মাছের চাষ তেমন একটা প্রচলন হয়নি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে ময়মনসিংহ এবং কুমিল−াতে হ্যাচারিসমূহে প্রচুর শিং মাছ এর পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে, ফলে পোনার প্রাচুর্যতা বাড়ার সাথে সাথে এ মাছের চাষেরও ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। পাংগাস মাছের সাথে সাথি ফসল হিসেবে শিং মাছের চাষসহ একক ভাবে শিং মাছ চাষের প্রসারও ঘটেছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে এ মাছের চাহিদা বেশি থাকায় এ মাছের চাষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে শিং মাছের পোনা উৎপাদন কৌশল সহজতর হয়ে আসাতে প্রয়োজনমত পোনা সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।

মাগুর মাছ
এ মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন কৌশল বেশ কয়েক বছর আগেই উদ্ভাবিত হলেও মাগুর মাছের একক চাষের তেমন একটা প্রচলন হয়নি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে ময়মনসিংহ এবং কুমিল−াতে হ্যাচারিসমূহে স্বল্প পরিসরে এ মাছের পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। শিং মাছের মত এমাছ চাষের প্রসার ঘটে নাই। বর্তমানে পাংগাস মাছের সাথে সাথি ফসল হিসেবেই চাষ হচ্ছে। ভবিষ্যতে পোনা উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ হলে চাষের সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে কারণ এ মাছের বাজার চাহিদা ব্যাপক।

পোনা সংগ্রহ পরিবহন
মাছ চাষে উত্তম ফলাফল নির্ভর করে ভাল মানের বীজের ওপর। কৌলিতাত্বিক ভাবে বিশুদ্ধ পোনা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য পরিচিত বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য পোনা উৎপাদনকারীর নিকট হতে পোনা সংগ্রহ করাই উত্তম। পুকুর প্রস্তুতের সময় হতেই পোনার জন্য যোগাযোগ শুরু করতে হবে। ভাল মানের শিং মাছের পোনার জন্য পুকুর প্রস্তুতের সময় থেকেই হ্যাচারির সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পোনার জন্য অগ্রীম বুকিং প্রদান করতে হবে। অনেক সময় হ্যাচারিসমূহ বুকিং পাওয়ার পর পোনা উৎপাদন করে থাকে। নির্ধারিত দিনে উপযুক্ত পাত্রে পোনা পরিবহন করে পুকুরে মজুতের ব্যবস্থা করতে হবে। অধিকাংশ হ্যাচারি শিং-মাগুর উভয় প্রজাতির মাছের ৭-৮ দিন বয়েসের পোনা বিক্রয় করে থাকেন কিন্তু এ বয়সের পোনা উৎপাদন পুকুরে মজুদ করা উপযুক্ত নয় সে জন্য মজুদ পুকুরের জন্য উপযুক্ত আকারের পোনা প্রাপ্তির জন্য নার্সারিতে পোনা পালনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

উৎপাদন পুকুরে পোনা মজুদ
নার্সারি পুকুরে পোনার আকার ৫-৭ সেমি. হলে পোনা মজুদ পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পোনা ছাড়ার ঘনত্ব সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করবে খামারীর মাছ চাষের অভিজ্ঞতা, আর্থিক সচ্ছলতা, মাছ চাষের আগ্রহ, পুকুরের মাটি ও পানির গুণাগুণ এবং চাষের পদ্ধতির ওপর। মজুদ পুকুর প্রস্তুতের ৪-৫ দিন পর পোনা মজুদ করতে হবে। বাণিজ্যিক ভাবে শিং মাছের একক চাষের জন্য শতকে ৪০০-৫০০ টি পোনা ছাড়া যেতে পারে। কৈ বা পাংগাস মাছের সাথে সাথি ফসল হিসেবেও শিং ও মাগুর মাছ চাষ করা বেশ লাভজনক। এক্ষেত্রে শতকে ৩০-৫০টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে। এ জাতীয় মাছ চাষের ক্ষেত্রে  পুকুরের প−াংকটনের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য শতকে ১-২ টি সিলভার বা কাতলের পোনা মজুদ করা যেতে পারে।

খাদ্য ব্যবস্থাপনা :
মাছের অধিক উৎপাদন পাবার জন্য ভাল পোনার পাশাপাশি ভালমানের খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানও জরুরী। মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় খাদ্যে নির্দিষ্ট মাত্রায় সব পুষ্টি উপাদান থাকা প্রয়োজন। মাছ তার দৈহিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্যে পুকুরে প্রাপ্ত খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। বাণ্যিজিকভাবে লাভজনক উপায়ে মাছ চাষ করতে গেলে মাছের মজুদ ঘনত্ব বাড়াতে হবে। শিং ও মাগুর মাছের এরূপ চাষের ক্ষেত্রে কেবল মাত্র প্রাকৃতিক খাদ্যের ওপর নির্ভর করে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব নয়। নিবিড় মাছ চাষে সম্পূরক খাদ্যের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সুষম দানাদার খাদ্য প্রয়োগ আবশ্যক। এতে মোট উৎপাদন অনেকাংশে তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়।
পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ মাত্রা মাছের খাদ্য গ্রহণ মাত্রানির্ভর করে পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলীর অনুকুল অবস্থার ওপর। তাপমাত্রা বাড়লে মাছের বিপাকীয় কার্যক্রমের হার বেড়ে যায়। ফলে খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। একইভাবে পানির তাপমাত্রা কমে গেলে খাদ্য চাহিদাও কমে যায়। পানির তাপমাত্রা ১০ক্র সে. এর বেশি হলে খাদ্য গ্রহণ মাত্রা দি^গুণ হয়ে যায়, একই ভাবে তাপমাত্রা ১০ক্র সে. কমে গেলে মাছের খাদ্য গ্রহণ হার অর্ধেকে নেমে য়ায়। পনির পিএইচ ৭-৮.৫০ ও পানিতে দ্রবিভূত অক্সিজেনের মাত্রা বাড়লে মাছের খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বিপরীতভাবে পিএইচ ও অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাবার কারণে খাদ্য গ্রহণ কমে যায়। এ ছাড়াও মাছ ছোট অবস্থায় তুলনামূলক বেশি খাবার গ্রহণ করে থাকে।

 শিং মাগুর মাছের দৈহিক ওজনের সাথে খাদ্য প্রয়োগের মাত্রার সম্পর্ক
গড় ওজন (গ্রাম) দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ (%)
১-৩ ১৫-২০
৪-১০ ১২-১৫
১১-৫০ ৮-১০
৫১-১০০ ৫-৭
>১০১ ৩-৫
৪.৬. সম্পূরক খাদ্য তৈরি
সম্পূরক খাবার দুইভাবে প্রস্তুত করা যেতে পারে।
ক) বাণিজ্যিক সম্পূরক খাদ্য ঃ বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোগে মাছের খাবার বাণিজ্যিক ভাবে প্রস্তুত করার জন্য বহু খাদ্য মিল স্থাপিত হয়েছে। এসকল কারখানায় মাছের বয়সের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মানের খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছে। মাছ চাষিগণ তার চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য বাজার থেকে সংগ্রহ করে সহজেই পুকুরে প্রয়োগ করতে পারেন।
খ) খামারে প্রস্তুতকৃত সম্পূরক খাদ্য ঃ খামারে আমরা দুভাবে খাদ্য প্রস্তুত করতে পারি। বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপকরণ প্রয়োজন মাফিক একত্রে ভালভাবে মিশিয়ে চাষি নিজ হাতেই খাদ্য প্রস্তুত করে পুকুরে প্রয়োগ করতে পারেন অথবা খাদ্য প্রস্তুতকারী মেশিন এর সাহায্যে বিভিন্ন উপকরণ পরিমাণমত মিশিয়ে চাহিদা অণুযায়ী দানাদার সম্পূরক খাদ্য প্রস্তুত করতে পারেন। খাদ্যে উপকরণসমূহ বাজার থেকে কিনে নিজস্ব পিলেট মেশিন দ্বারা খাদ্য তৈরি করা সবচেয়ে নিরাপদ। এ ক্ষেত্রে শিং ও মাগুর মাছের জন্য নিুহারে খাদ্যের বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে স্বল্প মূল্যে কিন্তু ভাল মানের খাদ্য প্রস্তুত করা যেতে পারে।
ক্র. নং উপকরণের বিবরণ শতকরা হার ক্র. নং উপকরণের বিবরণ শতকরা হার
১ ফিশমিল ২০ ৫ গমের ভুসি ১২
২ সোয়বিন চূর্ণ ৮ ৬ চিটাগুড়/রাব ৫
৩ অটোকুড়া ৩০ ৭ সরিষার খৈল ২০
৪ ভুট্টাচূর্ণ ৫ ৮ ভিটামিন প্রিমিক্স ১ গ্রাম/কেজি

সরিষার খৈল খাদ্য প্রস্তুতের ২৪ ঘন্টা পূর্বেই পরিমাণমত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে অত:পর অন্য সব উপকরণের সাথে
ভালভাবে মিশিয়ে খাদ্য প্রস্তুতের সময় পানি এমনভাবে মিশাতে হবে যেন খাবার অনেকটা শুকনা খাবারের মত হয়।

নমুনায়ন সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ
নমুনাকরণের মাধ্যমে পুকুরের মোট মাছের জীবভর (ইরড়সধংং) হিসাব করে খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি ঝাঁকি জাল ব্যবহার করা যেতে পারে এবং মজুদ ঘনত্বের ৫-১০% মাছের নমুনা সংগ্রহ করা উত্তম। ধৃত মাছের গড় ওজন বের করে এবং মাছের বাঁচার হার ৯০% ধরে মোট জীবভর নির্ণয় করতে হবে। শিং ও মাগুর মাছ চাষের ক্ষেত্রে দৈনিক প্রয়োজনীয় খাবার সমান তিনভাগে করে সকাল, দুপুর ও বিকালে প্রয়োগ করতে হবে। মাছের আকার ৩০ গ্রাম হলে মোট খাদ্যকে দুই ভাগ করে সকাল ও বিকালে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর মাছের নমুনায়ন করে মাছের জীবভর পরিমাপ করে খাদ্য সমন্বয় করতে হবে।

শিং মাগুর মাছ চাষের পুকুরের পানির ব্যবস্থাপনা, রোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
শিং ও মাগুর মাছ চাষের পুকুরের পানি ব্যবস্থাপনা
শিং ও মাগুর মাছ চাষের ক্ষেত্রে প্রতিদিন নিয়মিত হারে আমিষ সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োগ করায় মাছের মলমুত্র এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট পানিতে পঁচে পানির নাইট্রোজেন ঘটিত জৈব পদার্থের উপস্থিতি বেড়ে যায় ফলে মাছ নানা প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে এবং মাছের মৃত্যুর কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। অনেক সময় অসচতনতাবশত পঁচে যাওয়া খাদ্য উপকরণ মাছের পুকুরে দেয়া হয়। অধিক পঁচে যাওয়া এসব জৈব দ্রব্য পুকুরে দেয়া সমীচীন নয়। কারণ এতে পুকুরের পানির পরিবেশ নষ্ট করে অক্সিজেন ঘাটতিসহ মাছে উকুনের বংশ বিস্তার ঘটায় এবং এদের আক্রমনে মাছের জীবন যাত্রা ব্যাহত হয়। এছাড়াও পুকুরে জৈব উপাদানের বৃদ্ধির কারণে প−্যাাঙ্কটনিক ব−ুম ঘটতে পারে এবং এক পর্যায়ে প−্যাঙ্কটনের যথাযথ পরিবেশ বিঘিœত হয় এবং প−াংকটনের অপমৃত্যু ঘটায়, ফলশ্র“তিতে পুকুরের পানির সার্বিক পরিবেশের মারাত্বক বিপর্যয় ঘটে এবং মাছের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়ায়। এরুপ পরিবেশে প্রথমে মাছের খাদ্য গ্রহণ হার কমে যায়, মাছের বৃদ্ধি থেমে যায় এবং এক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে মাছ মারা যায়। এরূপ পরিবেশ যাহাতে না হয় সেজন্যে পানির রং এর অবস্থা অনুযায়ী মাঝে মধ্যে পানি দেয়া যেতে পারে, অথবা পুকুর থেকে কিছু পানি বের করে দিয়ে পুনরায় পানি সংযোগ করা যেতে পারে। শিং ও মাগুর মাছের চাষ নিরাপদ রাখার জন্য সময়ে সময়ে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। পুকুরের পানির পরিবেশ ভাল রাখার জন্য বর্তমানে বাজারে নানা ধরনের জিওলাইট ও অণুজীব নাশক পাওয়া যায়, যাহা প্রয়োগে সুফল পাওয়া যাচ্ছে।

শিং মাগুর মাছ চাষে অন্যান্য ঝুঁকি
শিং ও মাগুর মাছ চাষে ঋতুভিত্তিক কিছু ঝুঁকি থাকে। তাই সঠিক ব্যবস্থাপনা না নিলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি অনেক সময় সমস্ত চাষ ব্যবস্থা হুমকির সম্মূখে পড়তে পারে।
ক) বর্ষাকালীন ঝুঁকি ঃ বর্ষাকালীন অতিবৃষ্টি বা বন্যায় সমস্ত মাছ ভেসে যেতে পারে। হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে পরিপক্ব শিং ও মাগুর পুকুরের পাড় বেয়ে অন্যত্র চলে যেতে পারে। এ কারণে পুকুরের পাড়ের চারিদিকে বাঁশের বানা বা বেড়া অথবা প−াস্টিক নেটের সাহায্যে ১.৫ ফুট উচু করে বেষ্টনি দেয়া যেতে পারে।
খ) শুষ্ক মৌসুমের ঝুঁকি ঃ শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে পানির গভীরতা কমে যেতে পারে। এতে পানির তাপমাত্রা বেড়ে পানিতে দ্রবিভুত অক্সিজেন স্বল্পতার সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য পানি সেচের মাধ্যমে পুকুরের পনির গভীরতা বাড়াতে হবে।
গ) শীতকালীন ঝুঁকি ঃ শীতে (১৫০ সে. তাপের নিচে) শিং ও মাগুর মাছ চাষে রোগের প্রাদূর্ভাব বেশি হয় সে জন্য শীতের ২-৩ মাস শিং ও মাগুর মাছ চাষ না করাই ভাল। তবে এ সময়ে মাছ বা পোনা সংরক্ষণের জন্য প্রতি দিন ভোরে ডিপটিউব-ওয়েল এর পানি দিয়ে পানির তাপমাত্রা বাড়িয়ে রাখা যায়।
ঘ) ক্ষতিকর গ্যাস ঃ খাদ্যের অবশিষ্টাংশ এবং মাছের মলমূত্রের কারণে পুকুরের তলদেশে ক্ষতিকর গ্যাস জমে বুদবুদের সৃষ্টি করতে পারে এবং পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। পুকুরের তলদেশে জমে থাকা ক্ষতিকর গ্যাস অপসারণের জন্য ২-৩ দিন পর পর দুপুরের সময় পানিতে নেমে তলদেশ আলোড়িত করার ব্যবস্থা করতে হবে। কাজটি হরÍা টেনেও করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। জিওলাইট প্রয়োগেও ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
ঙ) মাছের স্বাভাবিক রং না আসা ঃ অধিক ঘনত্বে শিং ও মাগুর মাছ চাষ করলে মাছের গায়ের স্বাভাবিক রং আসে না। এতে ভোক্তার কাছে মাছের গ্রহণ যোগ্যতা কমে যায়, ফলে বাজার দর কম পাওয়া যায়। এ সমস্যা দুর করার জন্য মাছ বাজারজাত করার কমপক্ষে ১৫ দিন পূর্বে পুকুরের ১/৪ অংশে কচুরী পানা অথবা টোপা পানা দেয়া যেতে পারে। তবে বাজারজাত করার পর কচুরী পানা অপসারণ করে ফেলে দিতে হবে।
চ) মাছ চুরি ঃ এটা একটি সাধারণ সমস্যা বা সামাজিক ঝুঁকি। পুকুরের মাছ বড় হলে এ ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই বড় মাছগুলো আহরণ করলে চুির হওয়ার সম্বাবনা কমে যায়। এ ছাড়াও মাছ চাষিকে সমাজের অন্যদের সাথে উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলতে হবে। উৎপাদিত মাছ থেকে কিছু মাছ পুকুরের পার্শ্বে বসবাসকারীদের মাঝে সৌজন্যমূলুক বিতরণ করতে হবে।

শিং মাগুর মাছের রোগ প্রতিকার-
সাধারণতঃ শিং ও মাগুর মাছ চাষের পুকুরে তেমন কোন রোগব্যাধি হয় না। তবে শীতে এবং পানির পরিবেশ দূষণে গায়ে সাদা দাগ বা ক্ষত রোগ দেখা দিয়ে থাকে। প্রথমেই পুকুরের পানির পরিবেশ উন্নয়নের জন্য শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন দিতে হবে অথবা ৫০০-৭৫০ গ্রাম হারে জিওলাইট প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং পুকুরের পানি আংশিক পরিবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। চাষিকে মনে রাখতে হবে যে মাছের রোগের চিকিৎসা করার চেয়ে মাছে যাহাতে রোগ না হয সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই উত্তম।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment