কৈ মাছ চাষে পানি ব্যবস্থাপনা, রোগ ও ঝুঁকি

পুকুরে পানির ব্যবস্থাপনা

কৈ মাছ চাষের ক্ষেত্রে প্রতিদিন নিয়মিত হারে আমিষ সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োগ করায় মাছের মলমুত্র এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট পানিতে পঁচে পানির নাইট্রোজেন ঘটিত জৈব পদার্থের উপস্থিতি বেড়ে যায় ফলে মাছ নানা প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। মাছের মৃত্যুর কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। অনেক সময় অসচেতনতাবশত পঁচে যাওয়া খাদ্য উপকরণ মাছের পুকুরে দেয়া হয়। অধিক পঁচে যাওয়া এসব জৈব দ্রব্য পুকুরে দেয়া সমীচীন নয়। কারণ এতে পুকুরের পানির পরিবেশ নষ্ট করে, অক্সিজেন ঘাটতিসহ মাছে উকুনের বংশবিস্তার ঘটায় এবং এদের আক্রমণে মাছের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। এছাড়াও পুকুরে জৈব উপাদানের বৃদ্ধির কারণে প্ল্যাংঙ্কটনিক ব্লুম ঘটতে পারে এবং এক পর্যায়ে প্ল্যাংঙ্কটনের যথাযথ পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এবং প্ল্যাংঙ্কটনের অপমৃত্যু ঘটায়, ফলশ্রুতিতে পুকুরের পানির সার্বিক পরিবেশের মারাত্বক বিপর্যয় ঘটে এবং মাছের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরূপ পরিবেশে প্রথমে মাছের খাদ্য গ্রহণ হার কমে যায়, মাছের বৃদ্ধি থেমে যায় এবং এক পর্যায়ে বিপুল হারে মাছ মারা যায়। এরূপ পরিবেশ যাতে না হয় সেজন্যে পানির রং এর অবস্থা অনুযায়ী মাঝে মধ্যে পানি দেয়া যেতে পারে, অথবা পুকুর থেকে কিছু পানি বের করে দিয়ে পুনরায় পানি সংযোগ করা যেতে পারে। কৈ মাছের চাষ নিরাপদ রাখার জন্য সময়ে সময়ে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। পুকুরের পানির পরিবেশ ভাল রাখার জন্য বর্তমানে বাজারে নানা ধরনের জিওলাইট ও অণুজীব নাশক পাওয়া যায়, যা প্রয়োগে সুফল পাওয়া যাচ্ছে।

কৈ মাছ চাষে অন্যান্য ঝুঁকি

কৈ মাছ চাষে ঋতুভিত্তিক কিছু ঝুঁকি থাকে। তাই সঠিক ব্যবস্থাপনা না নিলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি অনেক সময় সমস্ত চাষ ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখে পড়তে পারে। 
ক) বর্ষাকালীন ঝুঁকিঃ বর্ষাকালীন অতিবৃষ্টি বা বন্যায় সমস্ত মাছ ভেসে যেতে পারে। হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে পরিপক্ব কৈ মাছ কানকুয়ার ওপর ভর করে পুকুরের পাড় বেয়ে অন্যত্র চলে যেতে পারে। এ কারণে পুকুরের পাড়ে চারিদিকে বাঁশের বানা বা বেড়া অথবা প্লাস্টিক নেটের সাহায্যে ১.৫ ফুট উচু করে বেষ্টনি দেয়া যেতে পারে। 
খ) শুষ্ক মৌসুমের ঝুঁকিঃ শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে পানির গভীরতা কমে যেতে পারে। এতে পানির তাপমাত্রা রেড়ে পানিতে দ্রবিভূত অক্সিজেন স্বল্পতার সৃষ্টি হতে পারে। পানি সেচের মাধ্যমে পুকুরের পানির গভীরতা বাড়াতে হবে। 

গ) শীতকালীন ঝুঁকিঃ শীতে (১৫ ডি.সে. তাপের নিচে) কৈ মাছ চাষে রোগের প্রাদূর্ভাব বেশি হয় সে জন্য শীতের ২-৩ মাস কৈ মাছ চাষ না করাই ভাল। তবে এ সময়ে মাছ বা পোনা সংরক্ষণের জন্য প্রতি দিন ভোরে গভীর নলকূপের পানি দেয়া যেতে পারে পানির তাপমাত্রা বাড়িয়ে রাখার জন্য। 

ঘ) ক্ষতিকর গ্যাসঃ খাদ্যের অবশিষ্টাংশ এবং মাছের মলমূত্রের কারণে পুকুরের তলদেশে ক্ষতিকর গ্যাস জমে বুদবুদের সৃষ্টি করতে পারে এবং পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। পুকুরের তলদেশে জমে থাকা ক্ষতিকর গ্যাস অপসারণের জন্য ২-৩ দিন পর পর দুপুরের সময় পানিতে নেমে তলদেশ আলোড়িত করার ব্যবস্থা করতে হবে। কাজটি হররা টেনেও করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। জিওলাইট প্রয়োগেও ভাল ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। 

ঙ) মাছ চুরিঃ এটা একটি সাধারণ সমস্যা বা সামাজিক ঝুঁকি। পুকুরের মাছ বড় হলে এ ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই বড় মাছগুলো আহরণ করলে চুরি হওয়ার আশংকা কমে যায়। এছাড়াও মাছ চাষিকে সমাজের অন্যদের সাথে উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব এড়াতে হবে। উৎপাদিত মাছ থেকে পুকুরের পার্শ্বে বসবাসকারীদের মাঝে কিছু মাছ সৌজন্যমূলক বিতরণ করার মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা যেতে পারে। 

কৈ মাছের রোগ ও প্রতিকার

সাধারণতঃ কৈ মাছ চাষের পুকুরে তেমন কোন রোগব্যাধি হয় না। তবে শীতে এবং পানির পরিবেশ দূষণে গায়ে সাদা দাগ বা ক্ষত রোগ দেখা দিয়ে থাকে। প্রথমেই পুকুরের পানির পরিবেশ উন্নয়নের জন্য শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন দিতে হবে অথবা ৫০০-৭৫০ গ্রাম হারে জিওলাইট প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং পুকুরের পানি আংশিক পরিবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। চাষিকে মনে রাখতে হবে যে মাছের রোগের চিকিৎসা করার চেয়ে মাছে যাতে রোগ না হয় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই উত্তম।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment