থাই কৈ -এর বাজারজাতকরণ



কৈ মাছের বাজারজাত করার কমপক্ষে একদিন আগে থেকে খাবার দেয়া বন্ধ করতে হবে। অনেক খামারিরা বেশি লাভের আশায় সকালের খাবার প্রয়োগের পর বিকেল বেলায় মাছ বিক্রি করে দেন যা কোনো অবস্থাতেই উচিৎ না। এতে মাছ খুব দুর্বল হয়ে যায় বিধায় বাজারে উঠানোর আগেই অনেক মাছ মারা যায়। এটা খামারি ও বিক্রেতাদের জন্য একটা ক্ষতিকর দিক।

কৈ মাছের বাজারজাত করতে গিয়ে দেখা যায় যে, ৮৫ গ্রামের বেশি ওজোন হলে মাছের ভাল দাম পাওয়া যায়। এ কারণে এই সাইজের মাছ বাজারজাত না করাই ভাল। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, ৬০ গ্রাম ওজোন পর্যন্ত যে হারে কৈ মাছের খাবার প্রয়োজন এর চেয়ে বেশি ওজোনসমৃদ্ধ করতে গেলে খাবারের হারও অর্ধেকে নেমে আসে। অর্থাৎ ৬০ গ্রাম ওজোনে আনতে যদি মাছকে গড়ে ৬ থেকে ৭% হারে খাবারের প্রয়োজন হয় সেখানে ৬০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজোনে আনতে মাত্র ৩% হারে খাবার দিলেই চলে। কাজেই এত পরিশ্রম ও বিনিয়োগ করে ৬০ বা ৭০ গ্রাম পর্যন্ত যেতে পারলে আর একটু কষ্ট করে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজোন বাড়ানোই ভাল। এই সাইজের মাছের আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও ভাল।

অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, একটি পুকুর থেকে কয়েক দিন মাছ ধরলে প্রথম দিনের চেয়ে পরের দিনগুলোতে কৈ মাছের ওজোন অনেক কমে যায়। অর্থাৎ শুরুতে কোনো মাছের গড় ওজোন যদি ৮০ গ্রাম দিয়ে শুরু হয় তাহলে শেষের মাছগুলোতে ওজোন দাঁড়ায় ৫০ গ্রামের মত। এখানে প্রথম দিন জাল টানার পর ভয় ও পীড়নে মাছগুলোর শরীরের জলীয় অংশ বের হয়ে গিয়ে দ্রুত ওজোন কমে যায়। কিছু ব্যবস্থা নিলে এই অবস্থা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন : কৈ মাছ যেদিন থেকে বাজারজাত শুরু করতে হবে সেদিন থেকে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে বাজারজাত করা শেষ করতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় পুকুর সেচ দিয়ে ২ দিনের মধ্যে মাছ বিক্রি করে ফেলা। এ প্রক্রিয়ায় প্রথম দিন পুকুর সেচ দিয়ে শুকিয়ে সকাল বেলায় মাছ ধরার কাজ শেষ করতে হবে। মাছ ধরার পর পরই বাকি মাছগুলোতে পানি দিতে হবে। একই প্রক্রিয়ায় ২য় দিন পুকুর শুকিয়ে আবার মাছগুলো ধরে বাজারজাতের ব্যবস্থা করতে হবে। জাল টেনে মাছ ধরার চেয়ে এ প্রক্রিয়ায় মাছ বাজারজাত করলে ওজোনে বেশ লাভবান হওয়া যায়।

কৈ মাছ বাজারজাতের জন্য প্রথমে মাছগুলোকে ধরে পলিথিন জাতীয় একটি হাপায় রাখতে হবে। দৈর্ঘ্যে ১৫ ফুট এবং প্রস্থে ১০ ফুট একটি হাপায় ৭০০ থেকে ৮০০ কেজি মাছ ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সহজেই রাখা যায়। তারপর আধা কেজি লবণ পানির সাথে মিশিয়ে এই হাপায় ছিটিয়ে দিতে হবে। এতে মাছগুলোতে ফাঙ্গাস পড়ার ভয় থাকে না। তারপর গাড়িতে ড্রাম ভর্তি পানিতে প্রতি ড্রামে ৩০ কেজি মাছ অনায়াসে পরিবহন করা সম্ভব। ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার পরিবহনে প্রতি ড্রামে ৩৫ কেজি মাছ পরিবহন করা সম্ভব। ড্রামে মাছ ভরার পর প্রতি ড্রামে একটি করে খাবার স্যালাইন দিলে ড্রামে ফাঙ্গাসজনিত কোনো রোগে মাছ আক্রান্ত হয় না।

আমাদের দেশে থাই কৈ চাষের শুরুতে এর বাজার মূল্য ছিল অনেক বেশি। বর্তমানে বেশি চাষ হওয়ায় উৎপাদন যেমন বেড়ে গেছে তেমন বাজার মূল্যও কমে গেছে। বর্তমান বাজার মূল্যের বাস্তবতাকে সামনে রেখে ১ একর পুকুরের থাই কৈ মাছ চাষের আয় ব্যয়ের হিসেব দেয়া হল :
১ একর বা ১০০ শতাংশ পুকুরে মাছ মজুদ করা যায় কমপক্ষে ৬০,০০০টি। প্রতিটি পোনার মূল্য ৪০ পয়সা করে ধরা হলে পোনার মোট মূল্য দাঁড়ায় ২৪,০০০ টাকা। ১৩০ দিন পুকুরে মাছ রাখতে হয়। তাতে মাছের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন হয় ১৩ টন, যার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ৪,৫৫,০০০ টাকা। পানি, বিদ্যুত, শ্রমিক ও আনুসাঙ্গিক আরো খরচ হয় ৩০,০০০ টাকা। সর্বমোট খরচ ধরা যায় ৫,০৯,০০০ টাকা।

মোট আয় : মজুদকৃত মাছের বেঁচে থাকার হার সাধারণত ৮০% ধরা হয়ে থাকে। আর এ হিসেবে মোট মাছের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৮,০০০টি, যার আনুমানিক গড় ওজোন ১০০ গ্রাম করে হলে মোট উৎপাদন হয় ৪,৮০০ কেজি। প্রতি কেজি মাছের মূল্য কমপক্ষে ১৫০ টাকা করে হলে মোট মূল্য হয় ৭,২০,০০০ টাকা।

প্রকৃত আয় :সবকিছু মিলিয়ে মোট ব্যয় ৫,০৯,০০০ টাকা এবং মোট বিক্রয় মূল্য ৭,২০,০০০ টাকা। তাহলে প্রকৃত আয় দাঁড়ায় ২,১১,০০০ টাকা।
আলোচিত পদ্ধতিতে যে কেউ প্রজনন মৌসুমে দু’বার খুব সহজেই থাই কৈ চাষ করতে পারেন। দু’বার চাষে এই মাছ প্রতি মৌসুমে প্রতি একরে ৮/১০ টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। এত স্বল্পকালীন সময়ে আমাদের দেশে আর কোনো মাছ বাজারজাত করা যায় না।
উপসংহারে আমাদের দেশি কৈ মাছ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। দেশি কৈ মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু একটি মাছ। থাই কৈ -এর চেয়ে এই মাছটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও ভাল। যদি আমাদের দেশি কৈ মাছকে জন্মগতভাবে উন্নত বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ করে দ্রুত বৃদ্ধি ঘটিয়ে চাষের আওতায় আনা যায় তাহলে একদিকে যেমন এই মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে, অন্যদিকে দেশবাসী এর স্বাদও গ্রহণ করতে পারবে সারাজীবন। আশা করি আমাদের দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো, মৎস্য বিজ্ঞানী এবং গবেষকগণ এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন।
বি.দ্র: টাকার হিসাবসমূহ সময়ের সাথে সম্বনয় করে নিতে হবে
লেখক: এ. কে এম. নূরুল হক
স্বত্বাধীকারী : ব্রহ্মপুত্র ফিস সীড কমপ্লেক্স (হ্যাচারি) গ্রাম : চর পুলিয়ামারী,শম্ভূগঞ্জ, সদর, ময়মনসিংহ
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment