অটোমোবাইলে ক্যারিয়ার


বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির সূত্রানুসারে ঢাকা শহরে মোটরগাড়ির সংখ্যা সাত লাখ। আর সারা দেশে গাড়ি আছে ১৭ লাখেরও বেশি। এই লাখ লাখ গাড়ির তুলনায় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা অনেক কম। এ রকম পরিস্থিতিতে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় এসে আপনিও নিজের ক্যারিয়ারকে উজ্জ্বল করতে পারেন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ

 অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার একটি গাড়ির পুরো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। গাড়ির কোথায় কী সমস্যা, কোন সমস্যা কিভাবে কাটাতে হবে, কোথায় কোন যন্ত্রাংশ পাল্টাতে হবে বা মেরামত করতে হবে, কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাড়ি সচল করা হবে, কোন পদ্ধতি ব্যবহার করলে সহজেই সফলতা মিলবে ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়াররা সমস্যার সমাধান করেন। তাঁদের নির্দেশ অনুসরণ করে মেকানিকরা গাড়ি মেরামত করেন। অনেক সময় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারকেও ইঞ্জিন মেরামতে হাত লাগাতে হয়। এ প্রসঙ্গে শ্যামলী আইডিয়াল টেকনিক্যাল কলেজের অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মো. সবুজ বলেন, 'একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারকে গাড়ি তৈরি থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণের সব বিষয় জানতে হয়, যাতে তিনি এ-জাতীয় সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন।'

কাজের ক্ষেত্র
আমাদের দেশে কার সার্ভিস সেন্টারের তুলনায় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা বেশ কম। তাই এ সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও চাহিদা দুটোই বেশি। সে জন্য এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য বসে থাকতে হয় না। নোমান রেন্ট-এ কারের মালিক মোহাম্মদ নোমান বলেন, 'আমার এখানে গাড়ির সংখ্যা অনেক। এগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো ইঞ্জিনিয়ার নেই। যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই হাতে-কলমে প্রশিক্ষিত মেকানিক। তাঁদের দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে অনেক সময় উল্টো গাড়ির ক্ষতি হয়ে যায়। তাই আমরা অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার খুঁজছি।'
গাড়ি মেরামতের গ্যারেজে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের পদ আছে। পাস করে খুব সহজেই এখানে চাকরি করতে পারেন। পরিবহন প্রতিষ্ঠান কিংবা যাঁরা ট্রাকের ব্যবসা করেন, তাঁদের অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। এ ছাড়া বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাঁদের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালনের জন্য অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করে থাকেন। গাড়ি বিক্রির দোকানগুলোতেও কাজ করতে পারেন। আমদানি করা নতুন গাড়ি কিংবা রি-কন্ডিশন্ড গাড়ির ত্রুটি সারাতে কাজ করেন তাঁরা।
গ্যালাঙ্ িঅটোমোবাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, 'আজকাল অনেকে এ বিষয়ে লেখাপড়া করে বিদেশে ক্যারিয়ার ডেভেলপ করছেন। বিদেশে গাড়ির কারখানা থেকে শুরু করে গাড়ি মেরামতের গ্যারেজে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা প্রচুর। যেহেতু প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন ডিজাইনের গাড়ি তৈরি হচ্ছে, সেহেতু এদিকে লক্ষ রেখে যিনি যত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন, তিনি তত সহজে ক্যারিয়ার ডেভেলপ করতে পারবেন।

আয়ের পরিধি
সদ্য পাস করা অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষানবিশ ইঞ্জিনিয়ারের পদে যোগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানভেদে আট থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেতনও বাড়তে থাকবে। একটা পর্যায়ে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়া যাবে।
কেউ যদি নিজেই গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ প্রতিষ্ঠা করেন, তাহলে সব খরচ মিটিয়ে মাসে ৫০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। এসব গ্যারেজে গাড়ির পার্টসও বিক্রি হয়। সেখান থেকেও একটা বাড়তি আয় চলে আসে। দেশের বাইরে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের কদর বেশি। গাড়ি তৈরির কারখানা থেকে শুরু করে গাড়ি মেরামতের দোকানে বড় অঙ্কের বেতনে চাকরি করা সম্ভব।

নিজের সার্ভিস সেন্টার
অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়াররা যেহেতু গাড়ির খুঁটিনাটি সব বিষয় সম্পর্কে জানেন, তাই চাইলে তারা নিজেরাই প্রতিষ্ঠা করতে পারেন একটি কার সার্ভিস সেন্টার। এ ক্ষেত্রে প্রথম যে দুটি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তা হচ্ছে সার্ভিস সেন্টারের জায়গা এবং প্রাথমিক পুঁজি।
গাড়ি মেরামতের গ্যারেজের জন্য মূল রাস্তার পাশে বড় জায়গার প্রয়োজন। ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে জায়গার খুব অভাব। তবে খুঁজলে এমন জায়গা মেলা অসম্ভব নয়। ইদানীং অনেকে রাস্তার ওপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে মেরামতের কাজ করেন। এ ধরনের কাজ আইনত নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই এ ধরনের গ্যারেজ বা সার্ভিস সেন্টার করা থেকে বিরত থাকুন।
সার্ভিস সেন্টার নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ পুঁজিটা সংগ্রহ করতে পারবেন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। প্রয়োজনীয় শর্তাবলি পূরণ করতে পারলে এ খাতে দেশের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ দেয়।

পেশার আগে পড়াশোনা
আমাদের দেশে বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে নূ্যনতম এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কোর্স করতে সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা করতে খরচ হবে প্রায় তিন লাখ টাকা।

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করা যায় এমন কিছু প্রতিষ্ঠান
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, তেজগাঁও, ঢাকা।
শ্যামলী আইডিয়াল টেকনিক্যাল কলেজ, ১৬/সি-ডি, ব্লক-ডি, নূরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
মটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, পল্লবী, মিরপুর, সেকশন-১২, ঢাকা।
চিটাগাং টেকনিক্যাল কলেজ, ১২৯ মুরাদপুর, বিশ্বরোড, চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কাপ্তাই, রাঙামাটি।
বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ই-৩৯৫, হাতেম খাঁ তমিজউদ্দিন

রোড, রাজশাহী।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment