ফেলনা বোতলের চীনযাত্রা!


ভাঙারির দোকান থেকে আসা বোতল থেকে প্রথমে লেবেল খুলে ফেলা হয়, রিসাইকেল করার আগে চলছে শেষ পর্যায়ের বাছাই।
গেন্ডারিয়ায় রেললাইন ধরে যাওয়ার সময় দেখা গেল একটা ছাপড়া ঘরে স্তূপ করে রাখা আছে প্লাস্টিকের খালি বোতল। কয়েকজন বসে বোতল থেকে কাগজের লেবেল আলাদা করছে; তারপর বোতল থেকে ছিপি খুলে রাখছে। একই রঙের বোতল একসঙ্গে বস্তায় রাখা হচ্ছে। এখানে কথা হয় বিলকিস বেগম নামের একজন কর্মীর সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁরা মাসিক আড়াই হাজার টাকা মজুরিতে বোতল পরিষ্কার করার কাজ করেন। তাঁর সঙ্গে আরও কাজ করছেন সুরাইয়া আক্তার, মর্জিনা আক্তার ও দিলারা বেগম। ফেলনা বোতল নিয়েই তাঁদের কাজ।


ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মী, পথশিশু, ছিন্নমূল মানুষ রাস্তা ও উদ্যান থেকে প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে ভাঙারির দোকানে। তারপর এগুলো পরিষ্কার করে তৈরি করা হয় প্লাস্টিক-পণ্য তৈরির কাঁচামাল, যা চীনেও রপ্তানি হচ্ছে। এ রপ্তানিপণ্যকে ঘিরে নগরের জুরাইন, কাজলার পাড়, শনির আখড়া ও নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে গড়ে উঠেছে কারখানা।


ফেলনা বোতল পরিষ্কার করে কারখানার মালিকদের সরবরাহ করেন গেন্ডারিয়ার মোহাম্মদ হোসেন। তিনি জানান, ভাঙারিরা নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বোতল সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন এখানে। এগুলো তাঁরা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে কেনেন। পরিষ্কার করা বোতলগুলো তাঁরা কারখানায় পাঠান। তাঁরা কেজিপ্রতি পান ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। সবুজ রঙের বোতলের দাম বেশি বলে তিনি জানান।


ডিসিসির মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলের পাশে গড়ে উঠেছে উচ্ছিষ্ট প্লাস্টিক বোতল থেকে কাঁচামাল তৈরির কারখানা কে এম চৌধুরী রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ। সেখানে প্রথমে একই রঙের বোতলগুলোর মধ্যে অন্য কোনো রঙের বোতল আছে কি না, তা যাচাই করা হয়। একেক সময় একেক রঙের বোতল দিয়ে কাঁচামাল তৈরি করা হয়। বোতলগুলো ক্রাশার মেশিনে টুকরো (ফ্লেক্স) করা হয়। এরপর মেশিনে সোডা ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ফ্লেক্সগুলো ধোয়া হয়। এবার এগুলো একটা সাধারণ পানিভর্তি চৌবাচ্চায় ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ছাঁকনি দিয়ে তুলে হাইড্রো মেশিনে পানি ঝরানো হয়। হাইড্রো মেশিন থেকে নামিয়ে আনার পর অন্য রঙের দু-একটা ফ্লেক্স থাকলে তা আলাদা করে নেওয়া হয়। শেষে ২৫ কেজি করে ফ্লেক্স প্যাকেট করা হয়।


কে এম চৌধুরী রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার সুবাস মর্মু জানান, ২৫ কেজির ৫০০ বস্তায় হয় এক কনটেইনার। এক কনটেইনার ফ্লেক্স উৎপাদন করার পর তা চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। সেখান থেকে জাহাজে করে ফ্লেক্স যায় চীনে।
উচ্ছিষ্ট বোতল থেকে ফ্লেক্স উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ পেট ফ্লেক্স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশননামের ব্যবসায়ী সংগঠন। এর সভাপতি সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে যেতে হয়। জাপান ও থাইল্যান্ডে আবর্জনার রিসাইক্লিং দেখে ২০০৩ সালে এমন কারখানা গড়ে তুলি। আমাদের আবর্জনাও ফেলনা নয়, এটাই প্রমাণ করেছি আমরা।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment