প্লাস্টিক পণ্যে স্বনির্ভরতায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ।


প্লাস্টিক পণ্য বর্তমান সভ্য জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে অতীব প্রয়োজনীয়। মানুষের হৃৎপিণ্ড থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী অনেক জিনিসই প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশে এ শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ষাটের দশকে। এ শিল্প বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও এ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সভ্যতা ও বিজ্ঞান জগতের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক শিল্পেরও দ্রুত বিকাশ ঘটছে। এই বিকাশ ও গ্রহণযোগ্যতার মূল কারণ হলো বিভিন্ন ধাতব ও উদ্ভিদজাত দ্রব্যের চেয়ে বহুল সাশ্রয়ী, টেকসই ও আকর্ষণীয় দ্রব্য হিসাবে প্লাস্টিকের আবির্ভাব। প্লাস্টিক খাত বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্লাস্টিক দ্রব্যসামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করে প্রতিবছর প্রায় ৮শ কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে রপ্তানি পণ্যে ১২তম স্থানে অবস্থান করছে। দেশী বাজারে প্রতিবছর প্রায় ৯শ কোটি টাকার প্লাস্টিক ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। শিল্পায়ন এবং রপ্তানি মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। তবে দক্ষ প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী ও বৈষম্যমূলক নীতির ফলে এই শিল্পের অবস্থান দেশী ও বিদেশী বাজারে হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্ব জুড়ে ইস্পাত ও বস্ত্রশিল্পের মতো প্লাস্টিকও একটি উল্লেখযোগ্য শিল্পখাতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ উন্নত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু প্লাষ্টিক ব্যবহারের পরিমাণ ১২০ কেজি। মজবুত, টেকসই, আকর্ষণীয় এবং দামে সাশ্রয়ী প্লাষ্টিক পণ্যের ব্যবহার বেশি হওয়ার কথা সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ খুব কম। মাথাপিছু দেড় থেকে দুই কেজি মাত্র। শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সংযুক্ত করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্লাষ্টিকের বার্ষিক উৎপাদন নিম্নরূপ ভিয়েতনাম ৭,৫০,০০০ মেট্রিক টন থাইল্যান্ড ২০,৪০,০০০ মেট্রিক টন মালয়েশিয়া ১০,০৬,০০০ মেট্রিক টন সিঙ্গাপুর ১,১৯,০০০ মেট্রিক টন জাপান ৬০,৪৭,০০০ মেট্রিক টন চীন ১,১৫,০০০ মেট্রিক টন ভারত ৩১,৫৭,০০০ মেট্রিক টন বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের পলি প্রোপাইলিন, পলি ইথাইলিন, এইচএপিএফ, জিপিপিএস ইত্যাদি কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু এসব কাঁচামাল দেশেই উৎপাদন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে এলে এবং প্রশিক্ষিত দক্ষ প্রযুক্তিবিদ যোগান দিতে পারলে প্লাস্টিকর বিশ্ববাজার দখল আলৌকিক কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশেগুলোই বাংলাদেশে উৎপাদিত প্লাষ্টিক পণ্যের প্রধান ক্রেতা। পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, ওভেনসেফ ব্যাগ, হাউসহোল্ড আইটেম, ফার্নিচার, বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও শোপিসই হলো ওই সকল দেশে রপ্তানির আইটেম। এ ছাড়া গৃহনির্মাণ সামগ্রী জানালা ও দরজা, চিকিৎসা উপকরণসহ ওষুধকনটেইনার, রক্তের ব্যাগ, ইনজেকশন, স্যালাইন, ব্যাগ, কৃষি খাতের জন্য প্লাস্টিক পাইপ, বড় চৌবাচ্চা, গাড়ি ও সাইকেলের যন্ত্রাংশের মধ্যে বাম্পার, হাতলের কভার, ব্যাকলাইট, স্পোক লাইট, পোল্ট্রি ও মৎস্য খাতের পট, জার, মাছের জাল, বল, মাছ ও ডিম রাখার ঝুড়ি, ভিডিও অডিও ক্যাসেট, কম্পিউটারের উপকরণসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। প্লাস্টিক বার বার ব্যবহার করা যায়। ব্যবহৃত প্লাস্টিক যদি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওয়েস্ট প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্টর মাধ্যমে রিসাইক্লিং করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী কাচাঁমালে পরিণত করা যায়, তাহলে পরিবেশ সমস্যার সমাধান হবে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে প্লাস্টিক কাচাঁমাল আমদানির পরিমাণ শতকর ৫০ ভাগ হ্রাস পাবে। অথচ আমাদের দেশে প্লাষ্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে দক্ষ প্রযুক্তিবিদ তৈরি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের দেশে আলাদা কোন প্লাষ্টিক শিল্পনগরী নেই। নেই এই শিল্পের প্রশিক্ষিত জনবল। বিদেশী ক্রেতাদের আসার মতো কোন পরিবেশ নেই। তাঁরা এলেও একসঙ্গে প্লাষ্টিক সামগ্রী উৎপাদনকারী কারখানা, যন্ত্রপাতি দেখতে পারছে না। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে যেখানে প্লাষ্টিক শিল্পের জন্য আলাদা নগরী রয়েছে। ক্রেতাগণ সেখানে গেলে একসঙ্গে অনেক ফ্যাক্টারি পরিদর্শন, যন্ত্রাংশ দেখতে পায়। পণ্যের গুণাগুণও খুঁজে বের করতে পারে। দেশের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ৬৫ শতাংশই ঢাকায় অবস্থিত। এছাড়া চট্টগ্রামে ২০ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জে ১০ শতাংশ এবং অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া, বরিশাল ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ৪০ লাখ মানুষ জড়িত রয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গনাইজেশন (আই.এল.ও)র নির্দেশনামতে প্লাস্টিক একটি শ্রমঘন শিল্প। নিজে বাঁচ অন্যকে বাচঁতে সাহায্য কর (Safety First) নীতি অনুসরণ করে ডিপ্লোমা ইন প্লাস্টিক প্রযুক্তিবিদ নিয়োগে বাধ্যবাদকতা রয়েছে। বাংলাদেশে ৪ হাজার ইন্ডস্ট্রিতে ২০ লক্ষ কর্মকর্তা, কর্মচারিদের কারোর প্লাষ্টিক প্রযুক্তিবিদ্যায় ন্যূনতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণবিহীন জনবলের কারণে প্রতিবছর গড়ে ৬৭১২ টি ছোট, বড়, মাঝারি দুর্ঘটনা ঘটে, প্রাণ হারায় অনেক শ্রমিক, আহত হয় হাজার হাজার। মালিকদের মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয় শতশত কোটি টাকার। শিল্প দুর্ঘটনার হার মাপকাঠিতে বাংলাদেশ বিশ্বের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে আমাদের শিক্ষা প্রশিক্ষণ দৈণ্যতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। উদীয়মান এই শিল্পে, ডিপ্লোমা ইন প্লাস্টিক প্রযুক্তিবিদ নিয়োগ দিলে স্বল্প ব্যয়ে, অল্প সময়ে উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন হতো। ইনস্টিটিউট অব প্লাস্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করা হলে প্লাস্টিকশিল্প গ্রাম-ইউনিয়নে প্রসারিত হতো। উচ্চ বেতনে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির পথ উম্মুক্ত হতো। প্লাষ্টিক পণ্যে বাংলাদেশ হতো স্বনির্ভর। মোঃ আবুল হাসান, সভাপতি খন রঞ্জন রায়, মহা সচিব ডিপ্লোমা প্রযুক্তি শিক্ষা গবেষণা, বাংলাদেশ, ৪৭ মতি টাওয়ার, চকবাজার, চট্টগ্রাম।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment