টাই-ডাই ব্যবসা।

কাপড় রঙ করার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে যেমন- ব্লক প্রিন্ট, বাটিক, স্ক্রীন প্রিন্ট। এর পাশাপাশি কাপড় রঙ করার অন্যতম জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে টাই-ডাই। বাঁধন পদ্ধতিতে কাপড় রঙ করাকেই টাই-ডাই বলে। এক্ষেত্রে কাপড়ের কোন কোন অংশ কুঁচকে নিয়ে সুতা দিয়ে বাঁধা হয়। ঐ অবস্থায় কাপড়টি রঙ-এ ডোবালে বাঁধা অংশে রং লাগতে পারে না। বাকী কাপড় রঙ এ রঙিন হয়। এভাবে রঙ লাগা ও রঙ না লাগা অংশ মিলে একটা নকশার সৃষ্টি হয়। বাঁধনের মধ্যে অল্প রঙ চুঁইয়ে ঢুকে কিছুটা গাঢ় ও কিছুট হালকা রঙ এ রঙিন করে তোলে। কাপড়ে টাই-ডাই নকশা করে সেগুলো বাজারে বিক্রির মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি স্বাবলম্বী হতে পারেন।
  
  • বাজার সম্ভাবনা
  • মূলধন
  • প্রশিক্ষণ
  • প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান
  • টাই-ডাই করার নিয়ম
  • আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ
  • সচরাচর জিজ্ঞাসা


বাজার সম্ভাবনা

টাই-ডাই করার মাধ্যমে বিভিন্ন কাপড়ে ডিজাইন করা যায়, যেমন: শাড়ী, ওড়না, সালোয়ার-কামিজ, বেডশীট, কুশন কভার, ফতুয়া, গেঞ্জি ইত্যাদি। বিভিন্ন রঙ-এ টাই-ডাই করে এসব কাপড় আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। কাপড়ে টাই-ডাই করে সেগুলো বিভিন্ন উপায়ে বিক্রির ব্যবস্থা করা যায়। যেমন -

১. বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করা যেতে পারে।

২. নিজেই কোন দোকান দিয়ে সেখানে বিক্রি করা যেতে পারে ।

৩. অনেক সময় ক্রেতা বাড়ীতে এসেই কিনে নিয়ে যেতে পারে।

৪. নিজের তৈরি পণ্যের প্রচার চালানোর জন্য প্রথমে প্রতিবেশীদেরকে জানানো যেতে পারে, স্থানীয় দোকানীর সাথে যোগাযোগ করা যায়। আবার টাই-ডাই করা কাপড়ের বর্ণনা করে লিফলেট তৈরি করে বিলি করা যেতে পারে।

মূলধন


আনুমানিক ২০০০-২৫০০ টাকা মূলধন নিয়ে টাই-ডাই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। বড় আকারে টাই-ডাই ব্যবসা শুরু করতে নিজের কাছে যদি প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকে তবে ঋণদানকারী ব্যাংক, সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (এনজিও) থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

প্রশিক্ষণ

মাত্র ২/৩দিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে টাই-ডাই এর কাজ শুরু করা যায়। টাই-ডাই করার আগে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে টাই-ডাই করার পদ্ধতি শিখে নিতে হবে। এছাড়া বিসিক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং কোন কোন এনজিও টাই-ডাই এর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এসকল প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে সহজেই কাপড়ে টাই-ডাই করে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান

* স্থায়ী উপকরণ

উপকরণ                   পরিমাণ                      আনুমানিক মূল্য (টাকা)                প্রাপ্তিস্থান
.................................................................................................................................
প্লাস্টিকের গামলা       ১টি                            ৬০-৬৫                                   তৈজসপত্রের দোকান
এনামেল বাটি            ১টি                            ২০-২৫                                   তৈজসপত্রের দোকান
চামচ (বড়)               ১ টি                           ২০-২৫                                   তৈজসপত্রের দোকান
চা-চামচ                   ১টি                            ১০-১৫                                   তৈজসপত্রের দোকান
চুলা                        ১টি                            ১০০-১৫০                               বানিয়ে নেয়া যায়
ওষুধের ড্রপার           ১টি                            ১০-১৫                                    ফার্মেসী
হাঁড়ি (বড়)               ১টি                            ১০০-১২০                                তৈজসপত্রের দোকান
স্পঞ্জ                      ১টি                            ১০-১৫                                     ফার্মেসী
রাবারের দস্তানা         ১ জোড়া                      ৫০-৫৫                                    ফার্মেসী
পেন্সিল                   ১টি                            ৫-৬                                         মুদি দোকান
রাবার                     ১টি                            ৫-৬                                         মুদি দোকান
সুঁই সুতা                  ১টি করে                    ১০-১২                                       মুদি দোকান
মোট=৪০০-৫০৯ টাকা
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, মগবাজার, ঢাকা, আগস্ট ২০০৯।


*কাঁচামাল

টাই-ডাই করার রঙ কেনার জন্য অল্প কিছু টাকার কাঁচামাল দরকার হয়। কাঁচামালের মধ্যে আছে প্রুশিয়ান রং, ডিটারজেন্ট, লবণ, ইউরিয়া, রেজিষ্ট সল্ট ইত্যাদি। এগুলো স্থানীয় রঙের দোকানে কিনতে পাওয়া যাবে।
তথ্যসূত্র :মাঠকর্ম, মগবাজার,ঢাকা, আগস্ট ২০০৯।

টাই-ডাই করার নিয়ম

টাই-ডাই করার আগে কিছু কাজ করা প্রয়োজন।

* কাপড় মাড়মুক্ত করা

টাই-ডাই করার আগে কাপড় মাড়মুক্ত করে নিতে হবে। কাপড়ে মাড় থাকলে রং করতে অসুবিধা হবে। এলুমিনিয়ামের ডেকচিতে এক থেকে দেড় লিটার পানি নিয়ে ফুটাতে হবে। ফুটন্ত পানিতে এক চা চামচ সোডা গুলিয়ে নিতে হবে। এরপর সোডা মিশ্রিত পানিতে কাপড়গুলো দিয়ে ১০ মিনিট ভালভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে। এরপর কাপড়গুলো ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে চিপে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

* কাপড় বাঁধা

কাপড়ের আয়তন অনুযায়ী ভাঁজ করে বিভিন্ন স্থানে বাঁধতে হবে। ভাঁজ করে বাঁধন দিলে নানান জায়গায় নকশা ফুটবে। বিভিন্ন ধরণের বাঁধনগুলো হলো ফুল বাঁধন, প্যাচানো ফুল বাঁধন, ডাবল ফুল বাঁধন,ডোরা বাঁধন, গুচ্ছ ফুল বাঁধন, মার্বেল বাঁধন, ভাঁজ করে বাঁধন, সেলাই করে বাঁধন, কোন জিনিস ঢুকিয়ে বাঁধা ইত্যাদি।

১. ফুল বাঁধন: কাপড়ের কিছু জায়গা আঙ্গুল দিয়ে উপরে ফুলিয়ে তুলতে হবে। এর গোড়ায় সুতা জড়িয়ে চওড়া একটা অংশ শক্ত করে বাঁধতে হবে। এই অবস্থায় কাপড় রঙে ডুবালে বাঁধা জায়গাটি রিং বা বৃত্তের আকারের সাদা থাকবে। একে ফুল বলা হয়। ফুলানো অংশ যত উচুঁ হবে ফুলও তত বড় হবে।

২. জিনিস ঢুকিয়ে বাঁধন: একই আকৃতি ও আকারের অনেক গুলো বাঁধন বাঁধতে হলে এর মধ্যে কাঠি, মার্বেল পাথর, শুকনা বিচি প্রভৃতি একই মাপের জিনিস ঢুকিয়ে তারপর বাঁধতে হবে।

৩. ডোরা বাঁধন: কাপড়ে পেন্সিল দিয়ে একটা রেখা টেনে নিতে হবে। এই রেখা বরাবর কুঁচি দিয়ে কাপড়টা ভাঁজ করে নিতে হবে। এবার লাইন বরাবর জায়গায় কুঁচিটা শক্ত করে বাঁধতে হবে। এই কাপড় রঙ-এ ডুবালে লাইন বরাবর সাদা একটা ডোরা পাওয়া যাবে। বাঁধনের জায়গা চওড়া হলে ডোরাও চওড়া হবে। যতগুলো ডোরা প্রয়োজন ততগুলো লাইন টেনে সেখানে এইভাবে বাঁধতে হবে।

* টাইডাই করার ধাপসমূহ :

১. প্রথমে ইচ্ছা অনুযায়ী কাপড়টি বাঁধতে হবে। একটা গামলায় ঠান্ডা পানি নিতে হবে। বাঁধার পর কাপড়টি গামলার পানিতে পাঁচ মিনিট ঢুবিয়ে রাখতে হবে। এর পর তুলে হালকাভাবে চিপে নিতে হবে।

২. একটা এনামেল বাটিতে কুসুম গরম পানিতে রঙ গুলিয়ে নিতে হবে। সাধারণত এক গজ কাপড়ের জন্য এক চা চামচ রঙ লাগে। একটা গামলায় পরিমান মতো ঠান্ডা পানি নিয়ে রঙ গোলা পানি মিশাতে হবে।

৩. এবার এই পানিতে কাপড় ডুবিয়ে ১৫ মিনিট নাড়াচাড়া করতে হবে। তারপর কাপড় গামলা থেকে তুলে নিতে হবে।

৪. কাপড় মোটা হলে এক চা-চামচ ইউরিয়া রঙের পানিতে মিশিয়ে কাপড় আরোও ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।

৫. এইভাবে তিন চা-চামচ লবণ রঙ মেশানো পানিতে মিশাতে হবে এবং কাপড় ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। ইউরিয়া মেশানো হলে কাপড় ১৫মিনিট ডুবিয়ে রাখলেই হবে। এভাবে রঙ করার কাজ শেষ হবে।

৬. গামলা থেকে কাপড় তুলে পরিস্কার ঠান্ডা পানিতে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত কাপড় থেকে আলগা রঙ বেরুনো শেষ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কাপড় ধুতে হবে।

৭. এবার সাবধানে সুতলির বাঁধনগুলো খুলে নিতে হবে যাতে এক জায়গার রঙ অন্য জায়গায় না লাগে।

৮. সাবান মেশানো ফুটন্ত পানিতে কাপড় সর্ম্পূণ ডুবিয়ে ১০ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে। সিল্ক বা উলের ক্ষেত্রে শুধু গরম পানি ব্যবহার করলেই হবে।

৯. কাপড় উঠিয়ে ঠান্ডা পানিতে কয়েকবার ধুয়ে ছায়ায় মেলে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকানো কাপড় ইস্ত্রি করতে হবে।



*ড্রপার থেকে রঙ ফেলে রঙ করা

ড্রপার দিয়ে বাঁধা জায়গার উপর বা অন্য জায়গায় সরাসরি রঙ ফেলেও টাই-ডাই করা যায়। এভাবে নানা অংশে নানা রঙ করা যায়।

১. আগের মতো রঙ পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সোডা, লবণ ও প্রয়োজনে ইউরিয়া আগে থেকেই মিশিয়ে নিতে হবে। এর সাথে আঙ্গুলের এক চিমটা রেজিস্ট সল্ট মিশাতে হবে।

২. যেসব জায়গায় রঙ ফেলতে হবে সে সব জায়গা আগে পেন্সিল দিয়ে এঁকে নিতে হবে। ড্রপার দিয়ে সে সব জায়গায় রঙ ফেলতে হবে। হাতে দস্তানা পরে নিতে হবে এবং আঙ্গুলে ঘষে ঘষে রঙ ঠিক জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে। অতিরিক্ত রঙ শুকনো স্পঞ্জ দিয়ে শুষে নিতে হবে।

৩. কাপড়ের অন্য অংশ অন্য রঙ করতে চাইলে বা পুরো কাপড় অন্য রঙ এ ডুবাতে চাইলে আগের রঙ করা জায়গাগুলো কুঁচকে একসাথে পলিথিন দিয়ে ঢেকে বেঁধে নিতে হবে।

৪. এরপর আগের পদ্ধতিতে রঙ করতে হবে।

আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ

ঢাকার মগবাজার থেকে মাঠকর্মের মাধ্যমে জানা যায়

একটি সাদা বা হালকা রঙের শাড়ির মূল্য ২০০-২১০ টাকা। এ শাড়িটি টাই-ডাই করতে খরচ হবে ৫০-৫৫ টাকা। তাহলে মোট খরচ হবে ২৫০-২৬৫ টাকা। রঙ করার পর শাড়িটির বিক্রয় মূল্য হবে ৩৬০-৩৭০। তাহলে লাভ হয় (বিক্রয় মূল্য-খরচ)=১১০-৯৫ টাকা। তবে সময় ও স্থানভেদে লাভ কম বা বেশি হতে পারে।
  
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম,মগবাজার, ঢাকা, আগস্ট ২০০৯।

শহরে অবস্থিত কারু ও হস্তশিল্পের দোকানগুলোতে টাই-ডাইয়ের কাপড়ের অনেক চাহিদা আছে। এছাড়া শহর-গ্রাম সবখানেই টাই-ডাইয়ের কাপড় খুব জনপ্রিয়। অল্প পুঁজি নিয়ে ঘরে বসেই অন্যান্য কাজের ফাঁকে কাপড়ে টাই-ডাই করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

প্রশ্ন ১ : টাই-ডাই কি ?
উত্তর : বাঁধন পদ্ধতিতে কাপড়ে রং করাকে টাই-ডাই বলে। কাপড় বাঁধার ফলে রং লাগা ও না লাগা অংশ মিলে নকশার সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন ২ : টাই-ডাই শুরু করতে কি পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন ?
উত্তর : আনুমানিক ২০০০-২২০০ টাকা মূলধন নিয়ে ছোট আকারে টাই-ডাই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।

প্রশ্ন ৩ : টাই-ডাই করার পদ্ধতি শেখার জন্য কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কি না ?

উত্তর : বিসিক, যুব মন্ত্রনালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং কোন কোন এনজিও টাই-ডাই এর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এসকল প্রতিষ্ঠান থেকে অথের্র বিনিময়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে সহজেই কাপড়ে টাই-ডাই করে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

কৃতজ্ঞতা স্বীকার

ঢাকার মগবাজারের কুমকুম এর  নিকট থেকে ২০০৯ সালের অগাস্ট মাসে টাই-ডাই করার ব্যবসা সম্পর্কে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এছাড়া টাই-ডাই করার ব্যবসা কনটেন্ট লেখার জন্য নিচের বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে।

১. ইব্রাহীম মুহাম্মদ, ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৯, টাই-ডাই বাটিক, বিজ্ঞান গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইরিনা প্রেস-১১ ফকিরাপুল, ঢাকা।
২. খান, মোঃ আলী আশরাফ, জানুয়ারী, ১৯৯৭,স্ব কর্মসংস্থানে কুটির শিল্প, লীনা প্রকাশনী, সিরাজগঞ্জ।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment