ডিজিটাল কীটনাশন মেশিন আবিষ্কার

পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে এখন আর জমিতে কীটনাশক ছিটাতে হবে না। হবে না কোনো পরিবেশদূষণ, নষ্ট হবে না মাটির উর্বরতা শক্তি। শব্দ শুনিয়েই তাড়ানো যাবে পোকামাকড়। এ জন্য সৌরশক্তি ব্যবহার করে একটি যন্ত্র বানিয়েছেন রংপুরের একদল শিক্ষার্থী। যন্ত্রটি তৈরি করতে খরচ পড়েছে মাত্র এক হাজার ৩৭৫ টাকা। এরপর বিনা খরচে ওই যন্ত্র ব্যবহার করে বারবার পোকামাকড় তাড়ানো যাবে। তাঁরা যন্ত্রটির নাম দিয়েছেন ডিজিটাল কীটনাশক মেশিন

যন্ত্রটি তৈরি করেছেন রংপুরের ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইটি) কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড মেকানিক্যাল বিভাগের বিভিন্ন সেমিস্টারের ২৬ জন শিক্ষার্থী। গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা রংপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ডিজিটাল মেলায় যন্ত্রটি প্রদর্শন করে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিজিটাল মেলার আয়োজকদের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি) মিজানুর রহমান বলেন, যন্ত্রটি পরীক্ষা করে এর কার্যকরিতা পাওয়া গেছে।

যন্ত্রটি দিয়ে মশা-মাছিও তাড়ানো সম্ভব। সে জন্য এর শব্দতরঙ্গে খানিকটা পরিবর্তন আনতে হবে বলে জানান এর প্রধান উদ্যোক্তা আইইটির ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র জিয়াউদ্দিন পাইলট।

যন্ত্রে যা আছে: যন্ত্রটি প্রস্থে দুই ফুট এবং উচ্চতায় তিন ফুট। এর চারদিকে চারটি ছোট স্পিকার আছে, যা দিয়ে চারপাশে শব্দ বের হয়। একটি ড্রাইসেল ব্যাটারি, একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি), একটি সোলার প্যানেল, একটি চিপ, একটি টুইটার ও কিছু বৈদ্যুতিক তার রয়েছে।

যেভাবে কাজ করে: ডিজিটাল যন্ত্রটির কার্যকরিতা দেখতে গত বৃহস্পতিবার আইইটির ১২-১৩ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই প্রতিবেদক রংপুর নগরের শালবন মিস্ত্রিপাড়া এলাকার একটি ধানখেতে যান। শিক্ষার্থীরা প্রথমে ধানখেতে যন্ত্রটি রাখেন। এর ওপর সোলার প্যানেল বসিয়ে সূর্যের দিকে তাক করে রাখেন। এরপর যন্ত্রের একটি সুইচ অন করেন। ঠক করে শব্দ হয়। কাঁপুনি দিয়ে যন্ত্রটি চালু হয়। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আর শব্দ বোঝা যায় না। কিন্তু যন্ত্রটি চলছিল। কয়েক সেকেন্ড পরেই দেখা যায়, যন্ত্রের আশপাশের পোকামাকড় ছোটাছুটি করে পালাচ্ছে। যন্ত্রটির ব্যাপারে জিয়াউদ্দিন বলেন, এটি চালু করার পর একধরনের অডিও সিগন্যাল ও আলট্রাসাউন্ডের ভয়ে পোকামাকড় পালিয়ে যায়। এটি দূষণমুক্ত শব্দ, যা শুধু পোকামাকড় বুঝতে পারে।


যেভাবে তৈরি: ফসল ফলাতে জমিতে প্রতিনিয়ত রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়, যা পরিবেশ ও মানুষের শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। কীটনাশক ছাড়া পোকামাকড় দমনের উপায় নিয়ে এক বছর ধরে কাজ করতে থাকেন জিয়াউদ্দিন।

জিয়াউদ্দিন বলেন, যন্ত্রটি তৈরি করতে তিন মাস সময় লেগেছে। প্রথমে একধরনের শব্দ সৃষ্টি করে খেতের মধ্যে প্রয়োগ করতে থাকি। এই শব্দ শোনার পর পোকামাকড় দূরে পালিয়ে যায়। যতদূর শব্দ যায়, ততদূর সরে যায়। ছোট্ট এই যন্ত্র চালু করলে প্রায় দেড় শতাংশ এলাকায় কোনো পোকামাকড় ভিড়তে পারবে না। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় যন্ত্রটি বসিয়ে চালু করে পোকামাকড় তাড়ানো যায়। তবে শব্দের দূরত্ব বাড়ানো যাবে। এ জন্য যন্ত্রটি বড় আকারে বানাতে হবে। জিয়াউদ্দিন আরও বলেন, যন্ত্রটি খুব সহজে বহনযোগ্য। একবার তৈরি করলে কয়েক বছর চালানো যাবে। এক খেত থেকে অন্য খেতেও নেওয়া যাবে।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর কার্যালয়ের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, কীটনাশক বারবার কিনে জমিতে দিতে হয়। অথচ ডিজিটাল যন্ত্রটি তৈরি করতে একবারই খরচ হয়। অল্প খরচে পরিবেশদূষণ ছাড়াই পোকামাকড় তাড়ানো যায়।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment