টবে মিশরীয় ডুমুর চাষ

আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রস্থ কোরান মজিদে ডুমুর নিয়ে একটি সূরা আছে। সূরাটির নাম আততীন । সূরার প্রথম আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, শপথ তীন ও যায়তুনের। 

ডুমুরকে আরবীতে তীন  বলা হয়। কাজেই ডুমুর ফলের গুরুত্ব সহজেই অনুমান করা যায়। ডুমুর একটি অতি উপাদেয় ফল। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে যে ডুমুর দেখা যায় তার ফল ছোট এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত। সাধারণত এই ফল পাখিরা খেয়ে থাকে। কোন কোন জায়গায় এটি তরকারী হিসাবে সীমিত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ডুমুর মূলত মধ্যপ্রাচ্যের ফল। যদিও বর্তমানে সারা বিশ্বেই এর প্রসার ঘটেছে। বিশ্বজুড়ে ফল হিসেবে যে ডুমুর সমাদৃত তা খাওয়ার উপযুক্ত। ফল নরম ও মিষ্টি।

মিষ্টি ডুমুরের চাষ পদ্ধতিঃ
ছাদে মিষ্টি ডুমুরের চারা লাগানোর জন্য ১২-২০ ইঞ্চি মাটির টব বা কালার ড্রাম সংগ্রহ করতে হবে। ড্রামের তলায় ৩-৫ টি ছিদ্র করে নিতে হবে। যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে। টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। টব বা ড্রামের গাছটিকে ছাদের  এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে সবসময় রোদ থাকে। এবার ২ ভাগ বেলে দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ২০-৪০ গ্রাম টিএসপি সার, ২০-৪০ গ্রাম পটাশ সার,এবং ২০০ গ্রাম হাড়ের গুড়া একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টবে পানি দিয়ে রেখে দিতে হবে ১০-১২ দিন । অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন একইভাবে রেখে দিতে হবে । মাটি যখন ঝুরঝুরে হবে তখন একটি সবল সুস্থ মিশরীয় মিষ্টি ডুমুরের কাটিং চারা উক্ত টব বা ড্রামে রোপন করতে হবে । চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে হবে । সেই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে । যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশী পানি না ঢুকতে পারে । একটি সোজা কাঠি দিয়ে গাছটিকে বেধে দিতে হবে । চারা লাগানোর পর প্রথমদিকে পানি কম দিতে হবে । আস্তে আস্তে পানি বাড়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে আবার বেশী শুকিয়েও না যায়।


অন্যান্য পরিচর্যাঃ
ডুমুর গাছ অত্যান্ত তাড়াতাড়ি ফল দেয় । একটি ডুমুরের কাটিং চারা লাগানোর ৪/৫ মাস পর থেকেই ফল দিতে শুরু করে । তাই গাছ লাগানোর ২-৩ মাস পর থেকেই টবের গাছকে নিয়মিত অল্প অল্প খাবার দেয়া প্রয়োজন। সে মোতাবেক ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খৈল পঁচা পানি প্রয়োগ করতে হবে। সরিষার খৈল গাছে দেয়ার কমপক্ষে ১০ দিন পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সেই পচা খৈলের পানি পাতলা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। ১ বছর পর টবের আংশিক মাটি পরিবর্তন করে দিতে হবে। ২ ইঞ্চি প্রস্থে এবং ৬ ইঞ্চি গভীরে শিকরসহ মাটি ফেলে দিয়ে নতুন সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে তা ভরে দিতে হবে। মাটি পরিবর্তনের এই কাজটি সাধারণতঃ বর্ষার শেষ এবং শীতের আগে করলেই ভাল হয়। ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর টব বা ড্রামের মাটি কিছুটা খুঁচিয়ে দিতে হবে ।

ফলের ব্যবহারঃ
ডুমুর ফলের উপরের আবরণ খুব পাতলা ও নরম । খেতে খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি । পাকা ফল আবরণ সহ সরাসরি খাওয়া যায়। তাছাড়াও পাকা ডুমুর দিয়ে জ্যাম, জ্যালি, চাটনি ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়। পাকা ডুমুর শুকিয়ে বিভিন্ন রকমের খাবারের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা যায় । কাঁচা ডুমুর তরকারী হিসেবে খাওয়া যায়। কার্বোহাইড্রেট, সুগার, ফ্যাট, প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ডুমুর। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ডুমুরের অনেক ঔষধী গুণও রয়েছে ।

পুষ্টিগুণ:

  • পাকস্থলীর জন্য ডুমুর বেশ উপকারী। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ
  • ডুমুর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সাহায্য করে।
  • ডুমুর শরীরে এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। শরীরে পিএইচের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • ডুমুর পাতা ডায়াবেটিক রোগীদের ইনসুলিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালের নাশতার সঙ্গে ডুমুরের পাতার রস খেলে উপকার পাবেন।
  • যাদের দুধ ও দুধের তৈরি খাবারে অ্যালার্জি আছে তাঁরা ক্যালসিয়ামের ঘাটতির পূরণের জন্য নিয়মিত ডুমুর খান। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম।
  • প্রতিদিন ডুমুর সেবন কারলে শুক্রানু বৃদ্ধি ও যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • ডুমুর ফল টিউমার ও অন্যান্য অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি নিবারণে ব্যবহৃত হয়। পাতা চূর্ণ, বহুমূত্র, বৃক্ক ও যকৃতের পাথর নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
  • কাঁচা ডুমুর চর্মরোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ডুমুর থেঁতো করে ব্রণ ও মেছতায় নিয়মিত লাগালে তা সেরে যায়।
  • গবেষণায় দেখা যায়, ডুমুরের পাতা কোলেস্টেরল ট্রাইগি্লসারাইডস কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া টেস্টটিউব গবেষণায় দেখা গেছে, ডুমুরের পাতা নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে দিতে সক্ষম।

ডুমুরের বংশবিস্তারঃ
ডুমুরের বংশবিস্তার করার অনেক পদ্ধতি থাকলেও সবচেয়ে সহজ ও ভাল পদ্ধতি হল কাটিং । কাটিং পদ্ধতিতে বংশবিস্তারে শতকরা প্রায় ৯৮% চারাই টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । কাটিং করার এক মাসের মধ্যেই চারা মূল টবে লাগানোর উপযুক্ত হয়। টবে কাটিং লাগানোর ৪-৫ মাসের মধ্যেই ডুমুর ফল পাওয়া যায়।


SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

1 comments: