খতিয়ান নিয়ে জালিয়াতি হলে কী করবেন

(ক) থাকেন বিদেশে। দেশে তাঁর পৈতৃক ভিটা রয়েছে। জায়গাটা খালিই পড়ে আছে তাঁর বাবার মৃত্যুর পর থেকে। চারদিকে ইটের দেয়াল দেওয়া। তিন-চার বছরে একবার দেশে আসেন তিনি। তাঁর পুরো পরিবার বিদেশে থাকে। গ্রামের ভিটা তাঁর দূর-সম্পর্কীয় আত্মীয়রা দেখাশোনা করে। একদিন খবর পেলেন, তাঁর কাছে আত্মীয় কাগজপত্র দেখিয়ে গ্রামের মোড়ল মাতব্বরদের কাছে ওই জমির মালিকানা দাবি করেছে। (ক) সাহেব হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন বিদেশ থেকে। এসে দেখলেন সিএস, আরএস জরিপের খতিয়ান জাল করে তাঁর কাছে আত্মীয় এ জমি দাবি করছেন। এখন তাঁর কাছে মূল খতিয়ান নেই। বাবার মৃত্যু হয়েছে অনেক বছর। এর মধ্যে খতিয়ানগুলো হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। এখন তিনি কী করবেন?

ওপরের ঘটনাটির মতো অহরহই এমন ঘটনা ঘটছে। একশ্রেণীর ভূমিদস্যু মূল খতিয়ান জাল করে মালিকানা দাবি করে আসল মালিকদের হেনস্তা করে। খতিয়ান জাল করতে সাহায্যও করেন একশ্রেণীর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা। আবার আমাদের দেশের ভূমি অফিসগুলোর দুরবস্থার কারণে অনেক সময় মূল খতিয়ান হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যায়, যার সুযোগ কাজে লাগায় দুষ্কৃতকারীরা। কেউ জাল খতিয়ান তৈরি করে মালিকানা দাবি করলে দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তবে জমি যদি দখলে না থাকে তাহলে ঝামেলা বেশি হয়। দেওয়ানি আদালতের পাশাপাশি ফৌজদারি আইনেও মামলা চলে জালিয়াতির অভিযোগবলে। তবে এ ক্ষেত্রে অপরাধীর শাস্তি হয় কিন্তু মালিকানা নিশ্চিত হয় না। দেওয়ানি আদালতে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করে জাল খতিয়ানের প্রতিকার চাইতে হবে উপরিউক্ত ঘটনায়।

(খএকখণ্ড জমির মালিক। নতুন জরিপের সময় জরিপ কর্মচারীরা আনিচ্ছাকৃতভাবে দাগ নম্বর ভুল করেছেন। যখন জরিপ চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হলো, তখন তিনি দেখতে পেলেন তাঁর খতিয়ানে ভুল আছে। এখন (খ) সাহেবকে কী করতে হবে?

সাধারণত খতিয়ান তৈরির সময় ৩০ ও ৩১ বিধিতে আপত্তি ও কপি নম্বরে কোনো ভুল হলে আবেদন করে সংশোধন করার সুযোগ আছে। তবে জরিপ প্রকাশের পর দেওয়ানি মামলা করার সুযোগ আছে। (খ) সাহেবকে দেওয়ানি আদালতে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। তবে জরিপ চলাকালীন দেওয়ানি মামলা করার সুযোগ নেই।একমাত্র ঢাকা মহানগরে বিএস জরিপের ক্ষেত্রে ঢাকাতে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে।

কোনো ভুলভ্রান্তি থাকলে কী করণীয়?
জরিপের চূড়ান্ত প্রকাশনা হলে ৬০ দিনের মধ্যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এরপর গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এখন খতিয়ানের চূড়ান্ত প্রকাশনায় যদি কোনো ভুলভ্রান্তি থাকে, তাহলে কী করা যায়? তখন দেওয়ানি আদালতে ঘোষণামূলক মামলা করে প্রতিকার চাইতে হয়। শুধু ঢাকায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালে প্রতিকার চাইতে হয়। এর বিরুদ্ধে আপিল করা যায় ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনালে। যদিও আইন অনুযায়ী সারা দেশেই ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান আছে। তা এখন পর্যন্ত গঠন করা হয়নি।

জরিপ খতিয়ান কীভাবে তুলবেন
জরিপ খতিয়ান জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুমে সংরক্ষিত থাকে। জরিপের সময় খতিয়ান রেজিস্ট্রার আকারে বাঁধাই করা থাকে এবং মূল খতিয়ানের অনেক কপি সংরক্ষণ করা হয়। কিছু খতিয়ান বিক্রয়ের জন্য রেকর্ড রুমে পাঠানো হয়। তবে নামজারি বা মিউটেশন খতিয়ানের ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে আবেদন করতে হবে। নকল তোলার দরখাস্তে নির্ধারিত কোর্ট ফি জমা দিতে হয়। সাধারণত জরুরি ভিত্তিতে সাত দিনের মধ্যে নকল সরবরাহের কথা থাকলেও তিন মাসও লেগে যায়।


ভূমি রেকর্ড ও জরিপ খতিয়ান সংরক্ষিত থাকে। সব সময় মূল খতিয়ানের পাশাপাশি খতিয়ানের নকল সংরক্ষণ করাও জরুরি। কোনো খতিয়ান সাত দিনের মধ্যে পেতে চাইলে ৭ টাকার কোর্ট ফি এবং প্রতি ফলিওর জন্য ১ টাকা করে কোর্ট ফি দিতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে অফিসের মধ্যে খতিয়ান পেতে চাইলে ১৬ টাকার কোর্ট ফি এবং প্রতি ফলিওর জন্য ২ টাকা করে কোর্ট ফি জমা দিতে হবে দরখাস্তের সঙ্গে।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment