বিলুপ্তপ্রায় বাইম মাছ রক্ষার্থে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি উদ্ভাবন

অপরিকল্পিতভাবে নদীতে বাঁধ নির্মাণ, নদী ভরাট, অধিক ফসল উত্পাদনের জন্য মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, কল কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য নির্বিচারে নদীতে অবমুক্তকরণ, গরমকালে পুকুর ছেঁকে মা মাছ নিধনসহ নানাবিধ মানব-সৃষ্ট করে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু সব মাছ। বর্তমানে দেশের প্রায় ৫৬ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তের পথে। এছাড়াও রয়েছে কিছু মারাত্মক বিপন্ন মাছ। বাইম মাছ সে ধরনের একটি প্রায় বিপন্ন মাছ। 

উপ-মহাদেশে বাইম মাছের ৩টি প্রজাতি গুচি, তারা বাইম এবং বাইম বা বড় বাইম। গুচি ও তারা বাইম প্রকৃতিক জলাশয়ে দেখা গেলেও বড় বাইম সচারচর চোখে পড়ে না। মাছটির মাংসের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গঠন এবং বিশেষ গন্ধের জন্য মানুষ পছন্দ করে থাকে। বিপন্নপ্রায় ওই বড় বাইমকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি গবেষণা প্রকল্পের ৩ বছর গবেষণায় বাইম মাছ রক্ষার্থে উপ-মহাদেশে প্রথম কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উত্পাদনে সফল হন প্রকল্পের প্রধান গবেষক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল আউয়াল মোল্লা এবং তার সহযাগী গবেষক অধ্যাপক ড. মো, রফিকুল ইসলাম সরদার। 
গতকাল মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই তথ্য জানান গবেষকরা। এই প্রযুক্তি বাইম মাছকে শুধু বিলুপ্তির হাত থেকেই রক্ষা করবে না; বরং অতীতের মতোই আবারও সহজলভ্য করবে বলে মনে করেন গবেষকরা।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল আউয়াল মোল্লা বলেন, দেখতে আকর্ষণীয় বাইম মাছকে ২০০০ সালে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ইউনিয়ন (ওটঈঘ)। বিলুপ্তপ্রায় এই বাইম মাছটিকে রক্ষা করতে ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এসপিজিআর আওতায় ‘‘বাংলাদেশের মারাত্মক বিপন্ন মহাশোল ও বাঘাইর এবং প্রায় বিপন্ন বাইম মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর কৃত্রিম প্রজননের ব্যবহারের জন্য সফল কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা তৈরিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা থেকে বাইম মাছ সংগ্রহ করে মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদে আবদ্ধ পরিবেশে (সিমেন্টের তৈরি সিস্টার্নে) লালন-পালন করে প্রজননক্ষম মা-বাবা মাছ উত্পাদন করা হয়। পরে মাছ প্রজননে সক্ষমতা অর্জন করলে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। প্রথমে মাছের ডিম্বাশয় এবং শুক্রাশয়ের হিস্টোলজি করে মাছটির প্রজনন ঋতু নিশ্চিত করা হয়। পরে কৃত্রিম পদ্ধতিতে গত মাসের শেষের দিকে মা মাছকে হরমোন দিয়ে প্রজননে প্রণোদিত করে ডিম সংগ্রহ করা হয় এবং কৃত্রিম পদ্ধতিতে পুরুষ মাছের শুক্রাণু সংগ্রহ করে ডিমকে নিষিক্ত করে পোনা উত্পাদনে সক্ষম হয়। কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে উত্পাদিত পোনার বয়স ১১ দিন। বর্তমানে উত্পাদিত রেণু পোনার লালন-পালনের ওপর গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ তথা উপ-মহাদেশে বাইম মাছের কৃত্রিম প্রজননে এটিই প্রথম সফলতা বলে দাবি করেন প্রধান গবেষক।
সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. সরদার বলেন, আমরা মারাত্মক বিপন্ন মহাশোল ও বাঘাইর নিয়েও কাজ করছি। তবে ওই মাছ দুটিতে আমরা এখনও সফল হইনি। এ বছর প্রকল্পটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদি বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটি বর্ধিত করে, তবে আমরা ওই মারাত্মক বিপন্ন মাছ দুটিতেও সফল হব।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মোল্লা বলেন, বাইম মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উত্পাদনের ওই সফলতার ফলে বিপন্নপ্রায় বাইম মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উত্পাদন করে বাইম মাছের বাণিজ্যিক চাষ করা সম্ভব হবে। এর ফলে একদিকে যেমন আমরা আমাদের দেশীয় জাতের সুস্বাদু বাইম মাছ খেতে পারব, অন্যদিকে মাছটির বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং মূল্যও বেশি হওয়ায় বাইম মাছের চাষ লাভজনক হবে বলে মনে করি।
এই গবেষণায় প্রধান গবেষককে সহযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র রহমত আলী, মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-ফারুক, সেলিনা ইয়াসমিন ও শফিক উদ্দিন।
সূত্র: আমার দেশ
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment