মাছ চাষ পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইড ও করনীয়

পুকুরের ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন দ্রুত হলে মাছ চাষে পুকুরের নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়, যা মাছ চাষের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক ফলাফল বয়ে নিয়ে আসে না। পুকুরের যে সকল রাসায়নিক উপাদান বিদ্যমান তার মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড মাছ চাষ পুকুরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পুকুরের পানিতে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের উৎস্য: মাছ চাষ পুকুরে কার্বন ডাই অক্সাউডের প্রাথমিক উৎস হল -(১).মাছের ও কিছু অনুজ প্রাণির শ্বসন (২) পুকুরের তলদেশে ডিকম্পজিশন বা পচন (৩) সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে দূর্বল বাইকার্বনিক এসিডের রাসায়নিক ভাংগন ইত্যাদি। পুকুরের মাছ ২৪ ঘন্টা শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস ত্যাগ করে। দিনের বেলায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পুকুরের সবুজ উদ্ভিদ কণা সালোকসংশ্লেসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করে থাকে। একই জলজ উদ্ভিদ কণা রাতের বেলায় শ্বসন প্রক্রিয়ার জন্য পুকুরের দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে। এই জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফলে পুকুরে দিনের বেলায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমান বাড়তে থাকে এবং রাত্রে অক্সিজেনের পরিমান কমতে থাকে। সাধারনত দিনের বেলায় সূর্যের আলোর তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে অক্সিজেন উৎপাদনের পরিমান বাড়তে থাকে ফলশ্রুতিতে দুপুর ১ টা থেকে ৩ টার মধ্যে পুকুরের অক্সিজেনের মাত্রা সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয়। বিপরীতক্রমে রাতে পুকুরের অক্সিজেনের পরিমান কমতে থাকে এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বাড়তে থাকে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে পুকু
রের অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের বিপরীত মূখী অবস্থান। রাতে যখন পুকুরে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বাড়তে থাকে বা কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব বেড়ে যায়, ঠিক সে সময় মাছের ফুলকার মাধ্যমে মাছের রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রবেশ ঘটে ফলশ্রুতিতে মাছের রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বৃদ্ধি পেতে থাকে। মাছের রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বৃদ্ধি রক্তে হিমোগ্লোবিনে আক্সজেন সরবরাহে বাধা প্রয়োগ করে ফলে চাষকৃত মাছ বড় ধরনের ধকলের সম্মুখীন হয়। মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। মাছ চাষ পুকুরের ফাইটোপ্লাংটন বা উদ্ভিদ কণা কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেন চক্র নিয়ন্ত্রনে প্রধান সহায়ক ভূমিকা হিসাবে পালন করে। পুকুরের অতিরিক্ত ফাইটোপ্লাংটন বা ফাইটোপ্লাংটন ব্লুম কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেন চক্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে ফলে রাত্রে ও দিনে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড এর তারতম্য ব্যপক হারে পরিলক্ষিত হয় যা মাছ চাষ পুকুরের ক্ষতির কারণ হয়। সে জন্য চাষ পুকুরের ফাউটোপ্লাংটন ব্লুম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী।

গ্রীষ্ম কালে পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইডের সমস্যা: সাধারনত মাছ চাষ পুকুরে শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে কার্বন ডাই অক্সাইডজনিত সমস্যা বেশী দেখা দেয়। শীত কালে পুকুরের কম খাদ্য ব্যবহার ও ডাইজেশন প্রক্রিয়ায় কম অক্সিজেনের ব্যবহার সাধারনত কম হয়, কিন্তু গরমকালে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। বেশী তাপমাত্রায় (২৮-৩৪ ডি:সে:) মাছ সহ পুকুরের অন্যান্য অণুজীবের মেটাবলিজম ও রেসপ্রেরিয়েশন পাশাপাশি খাদ্য প্রয়োগ ও খাদ্য গ্রহণের হার বেড়ে যায়। গ্রীষ্মকালে পুকুরের তলদেশে খাদ্যে ও অন্যন্য পদার্থের পচন এর জন্য প্রচুর পরিমান অক্সিজেনের প্রয়োজনের ফলে পুকুরের দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমান কমে গিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইডের উৎপাদন বেড়ে যায়। মাছ চাষের ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন জরুরী যাতে করে পুকুরে অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।

পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইড ও পিএইচ এর সম্পর্ক: মাছ চাষ পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইড ও পিএইচ এর সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান। সাধারনত পুকুরের পানির কার্বন ডাই অক্সাইড এর মান বেড়ে গেলে পিএইচ এর মান কমতে থাকে, বিপরীতক্রমে কার্বন ডাই অক্সাইড এর মান কমে গেলে পিএইচ এর মান বেড়ে যায়। দিনের বেলায় ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ কণা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে অক্সিজেন উৎপন্ন করে, ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় ব্যপকহারে কার্বন ডাই অক্সাইডের ব্যবহারের ফলে পুকুরের পানিতে এসিডিটির পরিমান কমতে থাকে। বিধায় দিনের বেলায় পুকুরে পিএইচ এর মান স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়ই বাড়তে থাকে কিন্তু রাতের বেলায় এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়, রাতের বেলায় শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুকুরে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বাড়তে থাকে যার ফলে পানিতে এসিডিটির পরিমান বাড়তে থাকে, ফলশ্রুতিতে রাতে পুকুরে পিএইচ মান কমতে থাকে। মাছ চাষ পুকুরে পিএইচ মানের ব্যাপক উঠা নামা মাছের উপর ধকলের সৃষ্টি করে বিধায় উৎপাদনে এর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ পুকুরের দিন ও রাত্রেও পিএইচ এর তারতম্য পরীক্ষা করা জরুরী।

মাছ চাষ পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইড দূরীকরনের উপায়:- যেহেতু অধিক ঘনত্বের মাছ চাষ পুকুরে বেশী পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় সেহেতু সঠিক মাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইড এর মান বজায় রাখা মাছ চাষ পুকুরের জন্য অধিক সহায়ক। পুকুরের রাসায়নিক পক্রিয়ায় বা বিভিন্ন প্রকার চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এতে যে সকল ফ্যাক্টর বিবেচনায় রাখতে হবে- (ক) পুকুরে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বা কনসেনট্রেশন (মি.গ্রা./লি.) (খ) পুকুরের আয়তন(গ) পুকুরে পানির গভীরতা রাসায়নিক উপায়ে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ন্ত্রণের পূর্বে অবশ্যই পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমান এবং পিএইচ এর মান নির্ণয় করা জরুরী। পুকুরের পানির পিএইচ মান ৮.৫ এর বেশী হলে লাইম এজেন্ট ব্যবহারে শতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, বিশেষ করে একবারে সমস্ত লাইম এজেন্ট ব্যবহার না করে ধাপে ধাপে ব্যবহার করা যেতে পারে, যদি পুকুরের পানির পিএইচ মান ৯ বা তার উপরে হয় সে ক্ষেত্রে লাইম এজেন্ট ব্যবহার না করাই উত্তম। বর্তমানে বাজারে উন্নত মানের দানাদার জিওলাইট ব মেট্রিক্স পাওয়া যায়, তা নিয়ামত পুকুরে ব্যবহারে পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইড বা পানির পিএইচ মান নিয়ন্ত্রণ করা যায়। উপসংহারে বলা যায় বানিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ পুকুরের পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে পানির পিএইচ মান নিয়ন্ত্রণ করা অতিব জরুরী। অন্যথায় মাছের যে কোন সমস্যা দেখা দিলে আশাঅনুরুপ ফলাফল পাওয়া কষ্টসাধ্য। যেহেতু পানির পিএইচ মান নিয়নন্ত্রণে কার্বন ডাই অক্সাইড বিশেষ ভূমিকা পালন করে, সেহেতু পুকুরে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নিন্মলিখিত পদক্ষপ নেয়া যেতে পারে-
১. পুকুরের পানির গভীরতা ৫ ফুটের বেশী রাখা।
২. পুকুরে যথা সম্ভব পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখা বা করা।
৩. পুকুরের মাছের সঠিক ঘনত্ব বজার রাখা।
৪. সঠিক ভাবে খাদ্য ব্যবস্থাপনা করা।
৫. ভাল মানের খাদ্য প্রয়োগ কার ।
৬. পুকুরের তলদেশের পচন জনিত গ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখা (প্রয়োজনে বাজারে ব্যবহৃত জিওলাইট বা মেট্রিক্স জাতিয় পণ্য ব্যবহার করা)
৭. পুকুরের ফাইটোপ্লাংটন ব্লুম নিয়ন্ত্রণ করা (পুকুরের ব্লুম নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে প্রো-বায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে, বাজারে বহুল ব্যবহৃত প্রোবায়োটিক প্রফস্ ব্যবহারে ভাল ফলাফল পাওয়া যায় বা ভাল অন্যান্য প্রোবায়োটিকও ব্যবহার করা য়েতে পারে)।

সর্বোপরি বলা যেতে পারে বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষে পুকুরের উন্নত পরিবেশ, সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা, ভাল মানের পোনা ও খাদ্য মাছ চাষে লাভজনক ফলাফল এনে দিতে পারে।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment