জমিতে সেচের চাহিদা বলে দেবে ২৫০ টাকার যন্ত্র

কৃষক নিজেই মাত্র দশ মিনিটে মাটির রস নির্ণয় করে ফসলের চাহিদা অনুযায়ী জমিতে সেচ দিতে পারবেন। এতে সেচজনিত খরচ ৩০-৪০ শতাংশ কমানো সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমানো এবং পানির সঙ্গে ওপরে উঠে আসা আর্সেনিক ও লেডের মতো ক্ষতিকর ভারী ধাতু, যা ফসলের মাধ্যমে খাদ্যের সঙ্গে মানবদেহে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে তা থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইয়ামিন। তিনিই উদ্ভাবন করেছেন স্বল্প খরচে এবং সময়ে মাটির রস পরিমাপক যন্ত্র।

ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন কালের কণ্ঠকে জানান, কৃষক ঘরে বসেই মাত্র ২৫০ টাকায় মাটির রস পরিমাপক ওই যন্ত্র তৈরি করতে পারবেন। একবার যন্ত্র তৈরি করে দীর্ঘদিন তা ব্যবহার করা যাবে।

যন্ত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন বলেন, সাধারণত জমির উপরিভাগ কিছুটা শুকিয়ে গেলেই সেচ দেওয়া হয়, কিন্তু তাতে দেখা যায়, গাছের কার্যকরী মূলের নিকটস্থ মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ রস রয়েছে। এ সময়ে সেচ দিলে নতুন সেচকৃত পানি অতিরিক্ত হিসেবে জমিতে যোগ হয় এবং প্রায় সম্পূর্ণটাই অপচয় হয়। উপযুক্ত সময় নির্ধারণ না করে সেচ দিলে সেচের মূল্য বাবদ ফসল উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। পাশাপাশি ফলন কম হওয়ায় লাভ কম হয়। তাই জমিতে সেচের সময় নির্ধারণের জন্য কিছুদিন পর পর ফসলের বয়স বা বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায় অনুযায়ী কার্যকরী মূলাঞ্চলের (বিভিন্ন গভীরতায়) মাটির রস পরিমাপের প্রয়োজন। মাটির রস পরিমাপ করে সেচ দিলে সেচজনিত খরচ প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ কমানো সম্ভব। বর্তমানে বাজারে প্রচলিত মাটির রস পরিমাপক পদ্ধতি বা প্রযুক্তিগুলো পদ্ধতিগত কারণেই কিছুটা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। প্রচলিত প্রযুক্তিগুলো ব্যবহারে ব্যয়ও বেশি। এসব দিক বিবেচনা করে স্বল্প খরচ ও সময়ে মাটির রস নিরূপণ করে সেচের সঠিক সময় নির্ধারণ করতে নতুন ওই যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে। দেশীয় সরঞ্জাম ব্যবহার করে কৃষক নিজেই যন্ত্রটি তৈরি ও ব্যবহার করতে পারবেন।
মাটির রস পরিমাপক যন্ত্রটির কাঠামো ও ব্যবহার সম্পর্কে হোসেন ইয়ামিন বলেন, মাটির নমুনা সংগ্রাহক নল, শতকরা হারে মাটির রস পরিমাপক নিক্তি এবং মাটির রস পরিমাপক এই তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছে যন্ত্রটি।


মাটির নমুনা সংগ্রাহক নল : ফসলের ক্ষেত থেকে বিভিন্ন গভীরতার মাটির নমুনা সংগ্রহের জন্য নলটি ব্যবহৃত হয়। এটি দিয়ে দুই ফুট গভীরতা পর্যন্ত মাটির নমুনা সংগ্রহ এবং সংগৃহীত নমুনা প্রতি দুই ইঞ্চি করে পৃথক করা যায়। কার্যকরী মূলাঞ্চলের নমুনাগুলোর রস পরিমাপ করে সেচের সঠিক সময় নির্ধারণ করা যায়।

শতকরা হারে মাটির রস পরিমাপক নিক্তি : গঠনগত দিক থেকে এটি সাধারণ নিক্তির অনুরূপ। তবে এতে একটি কাঁটা ও শতকরা হারে মাটির রস নির্দেশক স্কেল রয়েছে।

মাটির রস পরিমাপক পদ্ধতি :  নমুনা সংগ্রাহক নলটি জমিতে থাকা গাছ থেকে এক ফুট দূরে ডান দিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কাঙ্ক্ষিত গভীরতা পর্যন্ত লম্বালম্বি প্রবেশ করাতে হবে। অতঃপর বাম দিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে টেনে ওপরে তুলতে হবে। তারপর একটি লাঠি বা ছুরি দিয়ে প্রতি দুই ইঞ্চি পর পর নমুনাটিকে কেটে খালি টিনের কৌটায় নিয়ে ঢাকনা বন্ধ করে দিতে হবে এবং গভীরতা অনুযায়ী কৌটার গায়ে নমুনা চিহ্ন দিতে হবে। এরপর কৌটাকে পরিমাপক নিক্তির মাধ্যমে পরিমাপ করলে নিক্তির সঙ্গে সংযুক্ত স্কেলের নির্দেশক কাঁটাটি মাটির রসের পরিমাণ শতকরা হারে নির্দেশ করবে। শতকরা হারে মাটির রস নির্দেশক স্কেলের সঙ্গে সবজি চাষের জন্য প্রযোজ্য একটি রঙভিত্তিক স্কেল রয়েছে।

হোসেন ইয়ামিন প্রযুক্তিটির ব্যবহার সম্পর্কে বলেন, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করলে মাটির রস নির্ণয় করে জমিতে সেচ দেওয়া সহজ সাশ্রয়ী এবং লাভজনক হবে। ক্ষুদ্র এই প্রযুক্তিটি কৃষকরা যথাযথ ব্যবহার করে লাভবান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেচবিষয়ক জাতীয় সমস্যা সমাধানে কিছুটা ভূমিকা রাখবে। দেশের স্বার্থে সবার সহযোগিতায় সহজ এই প্রযুক্তিটি কৃষকদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment