কাঁকড়া থেকে কোটি টাকা আয়

কাঁকড়া। একেবারেই অবহেলিত এক জলজ প্রাণী। অবহেলিত এই কাঁকড়াই খুলে দিতে পারে দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার। কারণ বিদেশে এই কাঁকড়ার চাহিদা এখন আকাশছোঁয়া। সঠিক পরিকল্পনা নিলে এ পণ্য বদলে দিতে পারে লাখো মানুষের ভাগ্য। কাঁকড়া রপ্তানি করে এখন প্রতিবছর গড়ে আয় হচ্ছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। দিন দিন যে হারে চাহিদা বাড়ছে তাতে সাদা সোনা হিসেবে পরিচিত চিংড়িকেও হার মানাতে পারে এই জলজ সম্পদ-এমনটাই মনে করছেন কাঁকড়া চাষিরা। কাঁকড়া রপ্তানি করে বছরে হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এখন প্রয়োজন শুধু সরকারি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের কাঁকড়া বাজারজাত করতে প্রতিমাসে পুলিশকে দিতে হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এ টাকা না দিলে পথেই পচে নষ্ট হয় শত শত টন কাঁকড়া। অন্যদিকে রপ্তানিকারকরাও প্রতিনিয়ত নানারকম ভোগান্তির শিকার হন। সরকারকে রাজস্ব দেওয়ার পরও হয়রানির শিকার হন তারা। রপ্তানির ছাড়পত্র নিতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে উৎকোচ। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে কাঁকড়া মৎস্য সম্পদ হলেও এটি রপ্তানির ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেয় বন বিভাগ। সম্ভাবনাময় কাঁকড়া শিল্প নিয়ে অনুসন্ধানের সময় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।অবশ্য মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেছেন, কাঁকড়া একটি সম্ভাবনাময় খাত। এ জন্য এটিকে একটি নীতিমালা ও সমন্বয়ের মধ্যে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 


মাছের সংজ্ঞার মধ্যেই কাঁকড়ার কথা বলা হয়েছে। এটিকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে শীঘ্রই উদ্যোগ নেওয়া হবে।যেভাবে শুরু : বাংলাদেশ থেকে কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। সরকারিভাবে এটি কোনো রপ্তানি পণ্য হিসেবে গণ্য হয়নি। ১৫ বছর ধরে রপ্তানি হতো মূলত প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কাঁকড়া। চাষিরা নদী, সাগর, ডোবা, জলাশয় থেকে কাঁকড়া আহরণ করে প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে সেগুলো রাজধানীতে পাঠাতেন। রপ্তানিকারকরা সেগুলো নিজেদের মতো করে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলো শুধু প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কাঁকড়াই বিক্রি করছেন না চাষিরা বরং চাষ করা কাঁকড়াও রপ্তানি করছেন।বছরে আয় ৪০০ কোটি টাকা : কাঁকড়া হচ্ছে চিংড়ির মতোই সুস্বাদু। দেশের বাজারে এর তেমন কোনো চাহিদা না থাকলেও বিদেশের বাজারে চাহিদা ব্যাপক। যার ফলে দেশে আহরিত কাঁকড়ার সবগুলোই রপ্তানি হয়। তবে এই কাঁকড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারি কোনো রকম সহযোগিতা নেই। 

জানা গেছে, বছরের চার মাস অর্থাৎ মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময় হচ্ছে কাঁকড়ার ভরা মৌসুম। ওই সময়ে চাষি পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁকড়া প্রকারভেদে বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। আর অফ-পিক মৌসুমে প্রতি কেজি বিক্রি হয় প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। খুলনার পাইকগাছা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি অধিবাস দাস বলেন, এলাকায় কাঁকড়া চাষ করে কয়েক হাজার লোক জীবিকা নির্বাহ করে। তারা প্রতিদিন রাজধানীতে কাঁকড়া পাঠান। কাঁকড়া বিক্রি করে অনেকে সংসারে সচ্ছলতা এনেছে। জানা গেছে, রাজধানীতে মোট ৫০ থেকে ৫২ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা কাঁকড়া রপ্তানি করেন। উত্তরা এলাকার খালপাড়েই বসে কাঁকড়ার আড়ত। মূলত এখান থেকে কাঁকড়া প্যাকেজিং হয়। বিদেশে কাঁকড়ার প্রধান বাজার হচ্ছে চীন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, হংকং এবং সিঙ্গাপুর। এর বাইরে আরও কয়েকটি দেশে কাঁকড়া রপ্তানির কথাবার্তা চলছে। 

ক্ষুদ্র রপ্তানিকারক দীপংকর জানান, ভরা মৌসুমে প্রতি মাসে গড়ে ২২০ থেকে ২৫০ টন কাঁকড়া রপ্তানি করেন। আর মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ টন রপ্তানি করা হয়। কিন্তু রপ্তানিতে সরকারি পর্যায়ে কোনো রকম সহযোগিতা নেই বলে হতাশা প্রকাশ করেন দীপংকর। কাঁকড়া রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ লাইভ অ্যান্ড চিল্ড ফুড এঙ্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গাজী আবুল হাশেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তাদের অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে মোট ১১৫ জন্য সদস্য রয়েছেন। বর্তমানে কাঁকড়া রপ্তানিতে সক্রিয় রয়েছে ৫০ থেকে ৫২ জন্য সদস্য। সবাই মিলে প্রতিদিন সাত থেকে আট টন কাঁকড়া রপ্তানি করেন। চাহিদা আরও বেশি থাকলেও নানা সমস্যার কারণে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে সরকারি পর্যায়ে অসহযোগিতাই রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় বাধা। মৎস্য অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত তিন বছরে কাঁকড়া রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। তবে এ পরিসংখ্যান পুরো চিত্র তুলে ধরছে না বলে জানান, মৎস্য অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা।

কাঁকড়া চাষ ও আহরণ : দেশের উকূলীয় জেলা খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, কালীগঞ্জ, আশাশুনি, বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, কঙ্বাজারের মহেশখালী, কঙ্বাজার সদর, টেকনাফ, চকোরিয়া, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম সদর, সীতাকুণ্ডু, সন্দীপ এলাকায় কাঁকড়া চাষ ও আহরণ হচ্ছে। এ ছাড়াও বরিশাল, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের কিছু এলাকায়ও কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে চাষিরা নদী, সাগর, খাল-বিল, ডোবা থেকে কাঁকড়া আহরণ করে হ্যাচারিতে নিয়ে মোটাতাজা করে বাজারজাত করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব এলাকায় বাণিজ্যিকভাবেও কাঁকড়ার চাষ বেড়েছে। খুলনা অঞ্চলে কাঁকড়ার অন্তত তিন হাজার হ্যাচারি গড়ে ওঠেছে। যেখানে কাজ করছে কমপক্ষে ২০ হাজার শ্রমিক। একইভাবে দেশের অন্য এলাকাগুলোতেও আরও অন্তত এক হাজার হ্যাচারি গড়ে ওঠেছে। শুধু উপকূলীয় এলাকাতেই কাঁকড়া চাষ ও বিক্রির সঙ্গে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ দরিদ্র মানুষ জড়িত।

সম্ভাবনা প্রচুর সমস্যা অনেক : সম্ভাবনাময় এই খাতের সঙ্গে জড়িতদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতি পদে পদে। চাষিরা কোনো রকম সরকারি সহযোগিতা কিংবা ব্যাংক ঋণ পান না। এটি সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের মৎস্য সম্পদের তালিকায় থাকলেও বাস্তবে এর জন্য মাঠপর্যায়ে মৎস্য বিভাগের কোনো তৎপরতা নেই। আবার উৎপাদিত বা আহরণ করে আনা কাঁকড়া রাজধানীতে পেঁৗছাতে প্রথম ধাক্কা সামাল দিতে হয় চাষিদেরকে। খুলনা, সাতক্ষীরা কিংবা কঙ্বাজার থেকে ট্রাক ভর্তি কাঁকড়া নিয়ে রাজধানীতে পেঁৗছতে পেঁৗছতে চাষিকে রাস্তায় গুনতে হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। রপ্তানিকারকরা বললেন, রপ্তানি ছাড়পত্র নিতে গিয়েই বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। রপ্তানিকারক গাজী আবুল হাশেম বলেন, কাঁকড়া মৎস্য সম্পদ হলেও এটিকে দেওয়া হয়েছে বন বিভাগের অধীনে। আর বন বিভাগ থেকে ছাড়পত্র আনতে গেলে তারা নানা অজুহাতে সময় নষ্ট করে। তখন এই কাঁচামালটি নষ্ট হতে থাকে। তিনি বলেন, রপ্তানিকারকদের তখন বাধ্য হয়ে ঘুষের বিনিময়ে ছাড়পত্র আনতে হয়। অথচ প্রতি কেজি কাঁকড়া রপ্তানিতে সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি তিন টাকা।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

1 comments:

  1. Where i can sell it in Dhaka. in hole sell market who are export in abroad.

    cell:01190-919896

    ReplyDelete