বিস্ময়কর ফসল সিতালাউ, এক গাছে ফল ধরে দশ বছর


কোন সুনির্দিষ্ট মৌসুম নয়, একবার রোপণের পর ১০ বছর পর্যন্ত একই লতা থেকে বছরের ১২ মাস পাওয়া যাবে সবুজ লাউ। নতুন উদ্ভাবিত এই সবজির নাম সীতা লাউ। কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কৃষি বিজ্ঞানীরা এই নতুন জাতের সীতা লাউ উদ্ভাবন করে রীতিমত সাড়া ফেলেছেন।
কাপ্তাই রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুনুর রশীদ জানান, এই কেন্দ্র থেকে উদ্ভাবিত সীতা লাউ একটি অতি উন্নত প্রজাতির সম্ভাবনাময় সবজি। চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য এলাকায় স্বল্পপরিসরে এই সবজির চাষ হয়। লতানো গাছ এবং বেগুনের কাছাকাছি আকৃতির বলে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় উপজাতীয়রা এই সবজিকে লতা বেগুন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সীতা লাউয়ের দানাগুলি সুমিষ্ট এবং ফলের মত খাওয়া যায় বলে অনেক উপজাতীয় সম্প্রদায় এই ফলটিকে মিছরি ফল হিসেবেও আখ্যা দিয়ে থাকেন।

কৃষি বিজ্ঞানী ড. হারুনুর রশীদ জানান, কাপ্তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবনে উৎপাদিত সীতা লাউ একটি দীর্ঘজীবী লতানো উদ্ভিদ। একবার একটি সীতা লাউয়ের লতা জন্মানোর পর এই লতা থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বছরের ১২ মাস লাউ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। লতা এবং লতা ছড়ানোর জন্য মাচাং-এর যত্ন নিলেই প্রায় প্রতিদিনই একটি লতা থেকে লাউ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। সীতা লাউ সবজি হিসেবে খুবই সুস্বাদু, সাধারণ লাউ-এর মত এই লাউ রান্না করা যায়। এ ছাড়া গরুর মাংসের সাথে এই লাউ রান্না করা হলে আরো বেশি সুস্বাদু হয়।

রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সীতা লাউ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ আমেরিকা, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে সীতা লাউয়ের চাষ হলেও বাংলাদেশে এই লাউয়ের চাষ বিস্তৃতি লাভ করেনি প্রয়োজনীয় গবেষণার অভাবে। কাপ্তাইয়ের রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ১২ বছর গবেষণার পর বারি সীতা লাউ-১ নামের একটি জাত উদ্ভাবন ও চাষের জন্য অবমুক্ত করেছে।

পুষ্টিকর ও সারাবছর উৎপাদন সম্ভব এই সবজির চাষাবাদ সারাদেশে সম্প্রসারিত করা গেলে গ্রীষ্মকালে সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। সীতা লাউয়ের গাছ লতানো বিধায় লাউ কুমড়ার মত বাউনি দিতে হয়। পরিচর্যা ভালো করতে পারলে গাছ ১০-১৫ বছর পর্যন্ত ফল দিতে সক্ষম। মাঝে-মধ্যে ডালপালা ছাঁটাই করে দিলে নতুন শাখা-প্রশাখা বের হয়ে ফল উৎপাদন বেড়ে যায়।

চারা লাগানোর ৫/৬ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে এবং ফুল ফোটার ২৫/৩০ দিনের মধ্যে ফলের ওজন ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রাম হয়। একটি গাছ থেকে বছরে ২০০ টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। কচি অবস্থায় ফলত্বকসহ পুরো ফলটিই সবজি হিসেবে ব্যবহার হয়। এর স্বাদ অনেকটা চালকুমড়ার কাছাকাছি, তবে একটু মিষ্টি ভাব থাকে। আবার সীতা লাউ পূর্ণ পেকে গেলে এটি সুমিষ্ট রসালো হয়। সীতা লাউয়ের রস দিয়ে শরবত অতি চমৎকার হয়। পাকা ফলে খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে তা পেঁপে, আনারস বা কলার সাথে চমৎকার মিশ্র ফল ও ডেজার্ট হিসেবে খাওয়া যায়।

কাপ্তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের রাইখালী কৃষি ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে লতায় লতায় ধরে আছে সীতা লাউ। এই লাউ চাষে বীজ ও সার সরবরাহে রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে বলে ড. হারুন নিশ্চিত করেন।
SHARE

Milan Tomic

Hi. I’m Designer of Blog Magic. I’m CEO/Founder of ThemeXpose. I’m Creative Art Director, Web Designer, UI/UX Designer, Interaction Designer, Industrial Designer, Web Developer, Business Enthusiast, StartUp Enthusiast, Speaker, Writer and Photographer. Inspired to make things looks better.

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment